দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে ক্ষমা চাইলেন জার্মান প্রেসিডেন্ট

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির ভূমিকা নিয়ে পোল্যান্ডের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফাঙ্ক ভাল্টার স্টাইনমায়ার। ছবি: এএফপি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির ভূমিকা নিয়ে পোল্যান্ডের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফাঙ্ক ভাল্টার স্টাইনমায়ার। ছবি: এএফপি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর ৮০তম বার্ষিকী স্মরণে জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফাঙ্ক ভাল্টার স্টাইনমায়ার অতীতে জার্মানির মানবতাবিরোধী অপরাধ ও আগ্রাসনের নিন্দা করেছেন। পোল্যান্ডের ভিলুন শহরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ স্মরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট। সেখানেই তিনি বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির আগ্রাসী যুদ্ধের কারণে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।

জার্মানির নাৎসি বাহিনী ৮০ বছর আগে ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ডের ভিলুন শহর আক্রমণ করেছিল। ওই আক্রমণে নিহত মানুষ ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কাছে নতজানু হয়ে প্রেসিডেন্ট ফাঙ্ক ভাল্টার দুঃখ প্রকাশ করেন।

ভিলুন শহরে গতকাল রোববার সকালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ স্মৃতিসৌধে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেয়াস ডুডাও যোগ দেন। জার্মানির প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তৃতায় পোলিশ ভাষায় নাৎসি জার্মানির মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য তিনবার ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।

কোনো রকম সতর্কতা ছাড়াই ৮০ বছর আগে এই দিনে নাৎসি বাহিনী অতর্কিত ভিলুন শহরে আক্রমণ করে শহরটির ৭০ শতাংশ ধ্বংস করে দেয়। ওই আক্রমণে শহরটির ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করা হয়। ভিলুন শহরটিতে হামলার পরপরই জার্মান নৌবাহিনীর জাহাজ শ্লিসভিগ হোলস্টাইন থেকে পোল্যান্ডের ডানজিগ বন্দরে হামলা চালানো হয়।

ভিলুন শহর আক্রমণের মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। অনুমান করা হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শুধু পোল্যান্ডেই ৬০ লাখ মানুষ নিহত হয়েছিল। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ছয় বছরব্যাপী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৮ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর ৮০ বছর পূর্তিতে আবারও পোল্যান্ডের ডানপন্থী সরকার ও গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোটাকিস যুদ্ধজনিত ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

ভিলুন শহরের স্মরণসভার পর জার্মানির প্রেসিডেন্ট পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশো শহরে রওনা দেন। গতকাল বিকেলে রাজধানী ওয়ারশো শহরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সূচনার আরেকটি স্মরণসভায় জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সসহ ৪০ দেশের ২৫০ জন অতিথি অংশ নেন।

ওয়ারশো শহরের কেন্দ্রীয় স্মরণ অনুষ্ঠানে বিশ্বযুদ্ধের কারণে ইউরোপীয় জাতিসত্তার মধ্যে যে অবিশ্বাস বোধ তৈরি হয়েছিল, তা থেকে সরে এসে ঐক্যবদ্ধ ও সমৃদ্ধিশালী ইউরোপ গড়ে তোলার জন্য জার্মানদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট। অনুষ্ঠানে জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের উপস্থিতিতে ট্রান্স আটলান্টিক সম্পর্কের গুরুত্বের কথা জোর দিয়ে বলেছেন।