আসামে এনআরসি: আতঙ্কে ভারতের গোর্খা ও মতুয়া সম্প্রদায়

মতুয়া মহাসংঘের নেত্রী মমতাবালা ঠাকুর। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
মতুয়া মহাসংঘের নেত্রী মমতাবালা ঠাকুর। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) প্রকাশের পর গোর্খা ও মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের আশঙ্কা, যদি পশ্চিমবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এনআরসি চালু হয়, তবে পশ্চিমবঙ্গে এর তীব্র প্রভাব পড়বে। কারণ, এই রাজ্যে এনআরসি চালু হলে নাগরিকত্ব হারাবে প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ।

আসাম থেকে বিদেশি তাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে আসামের বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকার গত শনিবার প্রকাশ করেছে এনআরসি বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা। এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ১৯ লাখের বেশি মানুষ।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ ঘোষণা দিয়েছেন, আসামের ন্যায় ভারতের অন্য রাজ্যেও চালু করা হবে এনআরসি। এরই প্রেক্ষিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে গোর্খা ও মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে। তবে মোদি ও অমিত শাহের ঘোষণার পর একটুও দমেননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও পাল্টা ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, রাজ্য বিজেপি চাইলেও পশ্চিমবঙ্গে চালু করতে দেওয়া হবে না এনআরসি।

গতকাল রোববার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, আসামের এনআরসির তালিকা থেকে বাদ গেছে লক্ষাধিক গোর্খাদের নাম। ফলে গোর্খাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এনআরসি আতঙ্ক, সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ। ভারতের সেনাবাহিনীর একটি শক্তিশালী রেজিমেন্ট রয়েছে গোর্খাদের। গতকাল এই নিয়ে এক টুইট বার্তায় মমতা বলেছেন, ‘আগে আমি এনআরসি নাটকটা পুরোপুরি জানতাম না। যখনই তথ্য আসতে শুরু করল, আমরা দেখে চমকে গেলাম। দেখলাম যে, এক লাখের বেশি গোর্খা সম্প্রদায়ের মানুষ এনআরসি তালিকার বাইরে রয়ে গেছেন।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘হাজার হাজার ভারতীয়, সিআরপিএফ জওয়ান এবং অন্যান্য পরিবারসহ ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলি আহমেদের পরিবারও এই তালিকার বাইরে রয়েছেন।’ এরপরেই মমতা দাবি করে বলেন, ‘প্রকৃত ভারতীয়দের নাম যেন তালিকা থেকে বাদ না পড়ে এবং প্রকৃত ভারতীয় ভাইবোনদের প্রতি যেন ন্যায়বিচার করা হয়’।

মতুয়া সম্প্রদায়ের আশঙ্কা, পশ্চিমবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এনআরসি চালু হলে বাদ পড়ে যাবে ৪০ শতাংশের মানুষের নাম। এদের অধিকাংশই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত বাঙালি নমশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষজন। রাজ্যের নমশূদ্র ওয়েলফেয়ার বোর্ডের চেয়ারম্যান মুকুল বৈরাগ্য বলেছেন, ১৯৪৮ সালের পর পূর্ব পাকিস্তান এবং পরে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন আনুমানিক ২ কোটি ৮৭ লাখ নমশূদ্র। আর জেনারেল কাস্ট ধরলে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৩ কোটির বেশি।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, এনআরসি যদি হয় তবে এই বিপুলসংখ্যক মানুষ কীভাবে নাগরিকত্ব প্রমাণ করবেন? কেন্দ্রীয় সরকার যদি এই উদ্যোগ গ্রহণ করে তবে তো দেশজুড়ে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাবে। কারণ, একবার যারা নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই রাজ্যে এসে বসবাস শুরু করেছেন, প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, তাদের ওপর ফের আঘাত এলে মেনে নেবে না ভারতের মানুষ।

পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া মহাসংঘের নেত্রী সাবেক তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর বলেছেন, এই উদ্যোগ নেওয়া হলে প্রচণ্ড প্রভাব পড়বে মতুয়াদের ওপর। বিশেষত নমশূদ্রদের জীবনে তৈরি হবে অনিশ্চয়তা। যাঁদের বড় অংশই মতুয়া সম্প্রদায়। অন্যদিকে সারা ভারত নমশূদ্র বিকাশ পরিষদও ইতিমধ্যে এনআরসির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা বলেছে, এনআরসি হলে তা হবে এই রাজ্যের জন্য ভয়ংকর ঘটনা। মানুষ মানবে না।

অন্যদিকে রাজ্যের নাগরিকত্ব সুরক্ষা মঞ্চের আহ্বায়ক হরিপদ বিশ্বাস বলেছেন, এনআরসি হলে ঘোর বিপদে পড়বেন বাংলায় ৫০০ বছর ধরে বসবাস করা বহু পরিবার। কারণ, তারা দাখিল করতে পারবেন না এনআরসির প্রয়োজনীয় নথি।