সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাল বরিসের সরকার

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ছবি: এএফপি
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ছবি: এএফপি

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কট্টর ব্রেক্সিট কৌশলের বিরোধিতা করে ব্রেক্সিটবিরোধী লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলে যোগ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের আইনপ্রণেতা ফিলিপ লি। গতকাল মঙ্গলবার বরিস জনসন যখন পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখছিলেন তখনই ফিলিপ লি আসন পরিবর্তন করে লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের সারিতে গিয়ে বসেন। এর মধ্য দিয়ে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাল বরিস জনসনের সরকার।

সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেও এখনই বরিস সরকারের পতন ঘটছে না। কেননা, চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ) ঠেকানোর বিষয়ে বিরোধী দলগুলো একমত হলেও বিকল্প সরকার গঠন নিয়ে তাদের মধ্যে তুমুল মতবিরোধ রয়েছে। বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দলের নেতা জেরেমি করবিনকে প্রধানমন্ত্রী করা নিয়ে অনেকের আপত্তি আছে। আপত্তি আছে তাঁর নিজ দলেও।

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে মোট আইনপ্রণেতা ৬৫০ জন। নর্দান আয়ারল্যান্ডের ডিইউপির ১০ জন আইনপ্রণেতাসহ এত দিন সরকারের সমর্থনে আইনপ্রণেতার সংখ্যা ছিল ৩২০ জন। আর বিরোধী আইনপ্রণেতার সংখ্যা ছিল ৩১৯ জন। বাকি ১১টি আসনের মধ্যে আয়ারল্যান্ডের একত্রীকরণে সরব নর্দান আয়ারল্যান্ডের শিইন পেইনের দখলে রয়েছে ৭টি আসন। তারা ওয়েস্টমিন্সটারের পার্লামেন্টে আসে না। আর স্পিকারসহ তিনজন সহকারী ভোট দিতে পারেন না। অর্থাৎ মাত্র একজনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল সরকারের। ফিলিপ লির দল ত্যাগের কারণে এখন আর সরকারের কোনো কার্যকর সংখ্যাগরিষ্ঠতা রইল না।

আগামী ৩১ অক্টোবর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ কার্যকর হওয়ার দিনক্ষণ নির্ধারিত রয়েছে। এ বিচ্ছেদ কার্যকর করা
নিয়ে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে এখন চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ইইউর সঙ্গে চুক্তি হোক বা না হোক কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নির্ধারিত ৩১ অক্টোবরই বিচ্ছেদ কার্যকর করতে চান। কিন্তু বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি সরকারি দলের অনেক আইনপ্রণেতা চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদে নারাজ। যে কারণে মুখোমুখি অবস্থানে পার্লামেন্ট এবং সরকার।

চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ ঠেকাতে গতকাল পার্লামেন্টে প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন বিরোধীরা। ভোটাভুটির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে সংসদের কার্যবিধির নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নিয়েছেন। এর ফলে চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাবটি পাসের পথ অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গেল। এ প্রস্তাব পাস হলে চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ ঘটাতে পারবে না বরিসের সরকার। বিচ্ছেদের দিনক্ষণ পেছাতে ইইউর কাছে আবারও আবেদন জানাতে হবে।

তবে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, পার্লামেন্টে চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ ঠেকাতে আইনপ্রণয়ন করলে আরেকটি সাধারণ নির্বাচন অনিবার্য হয়ে পড়বে। কোনো অবস্থাতেই তিনি বিচ্ছেদের দিনক্ষণ পেছানোর আবেদন করবেন না। 

বিরোধী দলের নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, ‘এই সরকারের প্রতি জনগণের কোনো সমর্থন নেই। এদের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই এবং এদের সংখ্যাগরিষ্ঠতাও নেই।’

ব্রেক্সিট নিয়ে ব্রিটিশ রাজনীতি এখন স্পষ্টভাবে দুই ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষ চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের ঘোর বিরোধী। আর অন্য পক্ষ যেকোনো উপায়ে এই বিচ্ছেদ চায়। বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যেও চলছে গৃহবিবাদ। চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট ঠেকাতে গতকাল পার্লামেন্টে প্রস্তাব পেশ করেছে বিরোধীরা।

তবে পার্লামেন্টে ওই প্রস্তাব তোলার আগে নিজ দলের বিরোধীদের সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের সম্ভাবনা নাকচ হলে সাধারণ নির্বাচনের ডাক দেবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও কার্যালয় ডাউনিং স্ট্রিটের একটি সূত্র বলেছে, ব্রেক্সিট কার্যকর ব্যর্থ হলে ১৪ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

চুক্তি হোক বা না হোক, নির্ধারিত সময় ৩১ অক্টোবর ব্রেক্সিট কার্যকর করতে চান প্রধানমন্ত্রী বরিস। কিন্তু তা ঠেকাতে মাঠে নেমেছে বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির আইনপ্রণেতাদের একটি অংশ। ব্রেক্সিট কার্যকর ঠেকাতে বিরোধীরা আইন পাস করতে পারে, এমন শঙ্কায় ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত রাখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বরিস।

ব্রেক্সিট সংকট কাটানোর বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে গত সোমবার মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকেন বরিস। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে দেওয়া বক্তব্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইইউর সঙ্গে বিচ্ছেদ কার্যকর করা নিয়ে প্রায় তিন বছর ধরে যে নাটকীয়তা চলছে, তার শেষ দেখতে চান তিনি। পার্লামেন্টে আনা প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিতে আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বরিস বলেন, ইইউর সঙ্গে সমঝোতার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যকে খোঁড়া করে দেবেন না। চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের সম্ভাবনা নাকচ করলে ইইউর কাছ থেকে কিছুই আদায় করা যাবে না।