যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান রুহানির

যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলে বহুপাক্ষিক আলোচনা শুরু করতে সম্মতি জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলে বহুপাক্ষিক আলোচনা শুরু করতে সম্মতি জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করেছেন। রুহানি গতকাল মঙ্গলবার পার্লামেন্ট সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘বৈঠকের জন্য অনেক প্রস্তাব এসেছে। তবে আমাদের উত্তর সব সময় নেতিবাচকই থাকবে।’

এদিকে বিবিসি অনলাইন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলে বহুপাক্ষিক আলোচনা শুরু করতে সম্মতি জানিয়েছেন রুহানি।

২০১৫ সালে হওয়া ছয় জাতি পারমাণবিক চুক্তি থেকে একতরফাভাবে বেরিয়ে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার কারণ হিসেবে ট্রাম্প বলেছিলেন, আগের চুক্তিটি ইরানের পক্ষে যায়, যা তেহরানকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে ও মধ্যপ্রাচ্যে অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার পরোক্ষ স্বাধীনতা দেয়।

ট্রাম্প ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি গ্রহণ করেন, যাতে দেশটি আলোচনার টেবিলে ফিরে আসে। এই উত্তেজনা যুদ্ধের রূপ নিতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করলেও যুক্তরাষ্ট্র তার পথ থেকে ফিরে আসেনি। ইরানও ক্রমে শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছে। কারণ, দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রতারিত হয়েছে বলে মনে করছে। একই সঙ্গে ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে বলে জানিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। বিশেষ করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে তেহরানের তেল রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছে ইরান। একই সঙ্গে মুদ্রার মান কমে গিয়ে দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, পারমাণবিক চুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। গত জুলাই মাসে তেল রপ্তানি বন্ধ করার পর ইরান ইতিমধ্যে পারমাণবিক চুক্তির অন্তর্ভুক্ত দুটি প্রতিশ্রুতি স্থগিত করেছে। ইরানের অর্থনীতিকে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব থেকে রক্ষা করতে বৃহস্পতিবারের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে তৃতীয় এবং অনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন রুহানি।

গত সপ্তাহে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, তিনি নিশ্চিত যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের প্রেসিডেন্ট বৈঠকে বসতে রাজি হলে ‘একটি চুক্তি’ হতে পারে।

এদিকে ট্রাম্প বলেছেন, ইরানিরা ‘বাজেভাবে আঘাত করছে’। তাঁর ধারণা, রুহানি ‘তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চাইছেন’। এ কথার পরের দিন রুহানি ইঙ্গিত দেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়, তবে তিনি সংলাপের জন্য প্রস্তুত।

তবে গতকাল মঙ্গলবার পার্লামেন্টে এক বক্তব্যে রুহানি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয়টি নীতিগতভাবে আলোচ্যসূচিতে নেই।’ তবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেই কেবল আলোচনা সম্ভব হবে।

হাসান রুহানি ইউরোপীয় দেশগুলোকে সতর্ক করে বলেছেন, পারমাণবিক চুক্তির অর্থনৈতিক সুবিধা বহাল রাখার প্রতিশ্রুতি রাখতে তাদের হাতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় আছে। তিনি বলেন, ‘যদি ইউরোপীয়রা আমাদের তেল কিনতে পারে এবং সে অর্থের ওপর আমাদের অধিকার ফিরে পাই, তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আমরা তখন পারমাণবিক চুক্তিটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারব। অন্যথায় আমাদের তৃতীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।’

সোমবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, তৃতীয় পদক্ষেপটি ‘প্রথম ও দ্বিতীয় পদক্ষেপের চেয়ে শক্তিশালী’ হবে। তবে এ বিষয়ে আর কিছু জানাননি তিনি।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বারবার প্রস্তাব দিয়েছেন, পারমাণবিক চুক্তির প্রতি পুরোপুরি আনুগত্যের বিনিময়ে তেলসমৃদ্ধ ইরানকে ১৫ বিলিয়ন ডলার আর্থিক ব্যবস্থা করবে। এর ফলে ইরান বৈদেশিক নগদ অর্থ উপার্জন করতে পারবে।

ইরান জোর দিয়ে বলেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি একমাত্র শান্তিপূর্ণ উদ্দেশেই ব্যবহৃত হবে।