এনআরসির রাজ্য সমন্বয়কের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা

আসামে এনআরসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ চলছে। ছবি: সংগৃহীত।
আসামে এনআরসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ চলছে। ছবি: সংগৃহীত।

জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসির বিরুদ্ধে উত্তাল আসামে এনআরসির রাজ্য সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের হচ্ছে। অভিযোগ এসেছে, প্রতীক হাজেলা ইচ্ছাকৃতভাবে বহু মানুষের নাম বাদ দিয়ে বহু বিদেশিকে এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

ভারতের আসাম রাজ্যে এনআরসিতে বাদ পড়েছে ১৯ লাখ ভারতীয়র নাম। এর মধ্যে অধিকাংশই বাংলা ভাষী হিন্দু-মুসলমান। এই বাদ যাওয়াকে মেনে নিতে পারেনি আসামের বহু সংগঠন। তারা একযোগে দাবি করছে, এনআরসিতে বাদ দেওয়া যাবে না কারও নাম। এ দাবি নিয়ে তেতে আছে গোটা আসাম। রাজ্যজুড়ে চলছে এনআরসিবিরোধী আন্দোলন, বিক্ষোভ-সমাবেশ।

প্রতীক হাজেলা ভারতের সুপ্রিম কোর্ট থেকে নিয়োজিত আসামের এনআরসির সমন্বয়ক। গতকাল বুধবার আসামের বরপেটায় হিন্দু সুরক্ষা সেনার সদস্যরা প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ শেষে প্রতীক হাজেলার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন। এনআরসির তালিকা তাঁরা মানেন না বলে জানিয়েছেন। ওখানে বসবাসকারী সব মানুষকে নাগরিক অধিকার দেওয়ার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন তাঁরা। প্রতীক হাজেলাকে এর আগেও বিভিন্ন সংগঠন ‘জাতির শত্রু’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

অভিযোগ উঠেছে, আসামের আদি মুসলিম সম্প্রদায় ‘খিলঞ্জিয়া’কে নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। খিলঞ্জিয়া মুসলমান সম্প্রদায় মোগল আমল থেকে আসামে বসবাস করে আসছে। তাদের বলা হয় আসামের ভূমিপুত্র। খিলঞ্জিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যদের বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে মঙ্গলবার আসামের ‘গড়িয়া-মড়িয়া যুব ছাত্র পরিষদ’ গুয়াহাটির লতাশিল থানায় হাজেলার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। একই অভিযোগে ডিব্রুগড় থানায়ও মামলা হয়েছে।

গতকাল একইভাবে হাজেলার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে গুয়াহাটির গীতা নগর থানায়। এখানে মামলা করেছে ‘আসাম পাবলিক ওয়ার্কস’ নামের একটি সংগঠন। তাদের অভিযোগ, নাগরিকপঞ্জিতে বহু ভারতীয়কে বাদ দেওয়ার পাশাপাশি বহু বাংলাদেশিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আসামের কাছাড় জেলার কাঠিগড়া বিধানসভার সাবেক বিধায়ক এবং আসামের নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির কার্যকর সভাপতি আতাউর রহমান মাজার ভূঁইয়া প্রথম আলোকে টেলিফোনে জানান, বংশপরম্পরায় শতবর্ষ ধরে তিনি এবং তাঁর পরিবার আসামে বসবাস করলেও এবার তাঁর নাম বাদ গেছে এনআরসি তালিকা থেকে। বাদ গেছে তাঁর একমাত্র ছেলে ও চার মেয়ের একজনের নাম।

আতাউর রহমান মাজার ভূঁইয়া জোর দিয়ে বলেন, ‘এই এনআরসি তালিকা আমরা মানছি না। এর বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন জারি থাকবে।’

আসামের নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির সচিব প্রধান সাধন পুরকায়স্থ প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আমরা আগেই ঘোষণা দিয়েছি, আসাম সরকারের এই এনআরসি রিপোর্ট আমরা মানছি না। যে ১৯ লাখের বেশি মানুষের নাম বাদ গেছে, তারা সবাই ভারতীয়। আমাদের একদফা দাবি, তাদের অবিলম্বে তালিকাভুক্ত করতে হবে।’