ব্রাসেলসে ব্রেক্সিট নিয়ে প্রস্তুতি

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তর। ছবি: রয়টার্স
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তর। ছবি: রয়টার্স

চুক্তি করে বা চুক্তি না করেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ রাজনীতি এখন টালমাটাল। প্রায় তিন বছর থেকে ঝুলে থাকা ব্রেক্সিট বিতর্ক নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট যখন উত্তাল, তখন ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তরে চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের প্রাক-প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে।

আগামী ৩১ অক্টোবর চুক্তিহীন ব্রেক্সিট এড়াতে ব্রিটিশ সংসদ বুধবার একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের পর উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসেও প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়েছে। এর ফলে আগামী ১৭ ও ১৮ অক্টোবর ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রপ্রধানদের শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাজ্য ব্রেক্সিট বিষয়ে সমঝোতার জন্য আরও তিন মাস সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করতে পারবে।

ইইউ সদর দপ্তর ব্রাসেলস থেকে জানানো হয়েছে, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে চুক্তিহীনভাবে জোটের অবশিষ্ট ২৭ দেশের বিচ্ছেদ ঘটলে সদস্য কোন কোন দেশে তার প্রতিক্রিয়া পড়বে, তা যাচাই করা হয়েছে। ছয় পৃষ্ঠার এই যাচাই তালিকায় শেয়ারবাজারে নানা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সতর্ক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা অনুমোদন, নতুন করে শুল্কের হার নির্ধারণের বিষয় রয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপের যে সামুদ্রিক বন্দরগুলো থেকে যুক্তরাজ্যে পণ্য চলাচল করে, যেমন বেলজিয়ামের ফ্ল্যান্ডার্স, অ্যান্টওয়ার্প ও জীবর্গের বন্দরগুলোতেও বাড়তি সতর্কতার ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে।

একটি অনিয়ন্ত্রিত বা চুক্তিহীনভাবে ব্রেক্সিট ঘটলে বেশ কিছু সদস্য দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। ইইউ জোটভুক্ত দেশ আয়ারল্যান্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী ওই দেশটিতে ৩৫ হাজার মানুষের চাকরি ঝুঁকির মধ্য পড়বে। ইইউ সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যাদের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বেশি বাণিজ্যিক লেনদেন রয়েছে, সেই দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতির মুখে পড়বে। এসব দেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, কৃষক ও চাকরি হারানো মানুষের পুনর্বাসনের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৭৮০ মিলিয়ন ইউরো তহবিল গড়ার চেষ্টা করছে। অবশ্য চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট সম্পন্ন হলে যুক্তরাজ্যও নানা রকম অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে।

বুধবার ইইউ সদর দপ্তরে ব্রেক্সিট বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমন্বয়ক মিশেল বার্নিয়ার ও যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট-বিষয়ক সমন্বয়ক ডেভিড ফ্রস্টের সঙ্গে আলোচনা কোনো রকম সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ব্রেক্সিট জট সমাধানে বার্লিন ও প্যারিস সফর করেছিলেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মূল আপত্তি আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে স্থল সীমান্তে তথাকথিত ‘ব্যাকস্টপ ব্যবস্থা’ নিয়ে। ওই ব্যবস্থার আওতায় দুই পক্ষের মধ্যে স্থায়ী বোঝাপড়া না হওয়া পর্যন্ত ব্রিটেনের অংশ, উত্তর আয়ারল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যে শান্তি বজায় রাখা ও যুক্তরাজ্যের ঐক্যের স্বার্থে সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ এড়াতে ব্রিটেনকে ইইউয়ের শুল্ক কাঠামোর মধ্যে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।