ইরানি জাহাজের ক্যাপ্টেনকে 'ঘুষ' সেধেছিল যুক্তরাষ্ট্র

ইরানের তেলবাহী আদ্রিয়ান দরিয়া–১ জাহাজটি জব্দ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। রয়টার্স ফাইল ছবি
ইরানের তেলবাহী আদ্রিয়ান দরিয়া–১ জাহাজটি জব্দ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। রয়টার্স ফাইল ছবি

ইরানের আলোচিত তেলের জাহাজের ক্যাপ্টেনকে লাখ লাখ ডলার অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ইরান অ্যাকশন গ্রুপের প্রধান ব্রায়ান হুক ইরানের তেলবাহী জাহাজ আদ্রিয়ান দরিয়া–১-এর ক্যাপ্টেনকে ই-মেইল করেছিলেন। এই ই-মেইলে ক্যাপ্টেনকে এমন জায়গায় জাহাজটিকে নিয়ে যেতে বলা হয়, যাতে যুক্তরাষ্ট্র সেটি জব্দ করতে পারে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সিরিয়ায় তেল নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহে গত জুলাইয়ে ব্রিটিশ রয়্যাল মেরিন জিব্রালটার প্রণালিতে জাহাজটি জব্দ করেছিল। তেল সিরিয়ায় যাবে না মর্মে ইরানের কাছ থেকে নিশ্চয়তা পাওয়ার পর গত মাসে জাহাজটি ছেড়ে দেয় জিব্রালটার কর্তৃপক্ষ।

জাহাজটিকে ফের জব্দ করতে জিব্রালটার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে জিব্রালটার কর্তৃপক্ষ এই অনুরোধ নাকচ করে। পরে জাহাজটি জব্দে পরোয়ানা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র জাহাজটির ক্যাপ্টেনকে অর্থ সেধেছিল বলে গত বুধবার প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। পরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা জাহাজটির ক্যাপ্টেনসহ শিপিং কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম।’

গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র জাহাজটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, জাহাজটিতে ইরানের ২ দশমিক ১ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল পরিবহন করা হচ্ছে। এই তেলের অর্থ থেকে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড লাভবান হবে। এলিট এই বাহিনীটিকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকার প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইরানের জাহাজটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে আদ্রিয়ান দরিয়া–১-এর ভারতীয় ক্যাপ্টেন অখিলেশ কুমারের কাছে একটি ই-মেইল পাঠিয়ে ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা ব্রায়ান হুক।

ই-মেইলের শুরুতেই লেখা হয়, ‘আমি সুসংবাদ দিয়ে লিখছি।’

ক্যাপ্টেনের উদ্দেশে ই-মেইলে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র জব্দ করতে পারে, এমন জায়গায় জাহাজটি নিয়ে গেলে বিনিময়ে তাঁকে (ক্যাপ্টেন) লাখ লাখ ডলার দেবে ট্রাম্প প্রশাসন।

ই-মেইলটি যে সত্যি, তা প্রমাণে ই-মেইলের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ফোন নম্বরও জুড়ে দেওয়া হয়।

তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ই-মেইলটি অগ্রাহ্য করেন জাহাজের ভারতীয় ক্যাপ্টেন অখিলেশ কুমার। ই-মেইল পাঠিয়ে উদ্দেশ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়ে আদ্রিয়ান দরিয়া–১ জাহাজটিকে কালো তালিকাভুক্ত করার পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে ক্যাপ্টেন অখিলেশ কুমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

‘আদ্রিয়ান দরিয়া–১’ জাহাজটির নাম আগে ‘গ্রেস–১’ ছিল। জিব্রাল্টার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর জাহাজটির নাম বদল করে ইরান।