ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রতিজ্ঞা: মরে যাব, তবু ব্রেক্সিট পেছানো নয়

বরিস জনসন
বরিস জনসন

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, মরে গেলেও তিনি ব্রেক্সিট পেছানোর অনুরোধ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছে যাবেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার ইয়র্কশায়ারের একটি পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বরিস এমন প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন।

ব্রেক্সিট কার্যকর করা নিয়ে যুক্তরাজ্যের সরকার ও সংসদের মধ্যে তীব্র বিরোধ চলছে। ব্রেক্সিটের দিনক্ষণ পেছানোর জন্য সরকারকে বাধ্য করতে আইন প্রণয়ন করছেন বিরোধীরা। এ পরিস্থিতিতে বরিস আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব করেছিলেন। সংসদ সেই প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছে। এ অবস্থায় বরিসের ওই মন্তব্য চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থাকে আরও বেশি রহস্যময় করে তুলেছে।

সমঝোতায় ব্যর্থ হলে ইইউর কাছে বিচ্ছেদ পেছানোর আনুষ্ঠানিক আবেদন করতে হবে যুক্তরাজ্যকে। অন্যথায় নির্ধারিত আগামী ৩১ অক্টোবর চুক্তি ছাড়াই বিচ্ছেদ ঘটে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বরিস চান চুক্তি ছাড়াই বিচ্ছেদ ঘটে যাক। কিন্তু বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির অনেক আইনপ্রণেতা চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদে আটকাতে মরিয়া। চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ ঠেকাতে বিরোধীদের সঙ্গে হাত মেলানোর কারণে ২১ জন আইনপ্রণেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন বরিস।

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী বরিস আরও বলেন, ‘আমি ব্রেক্সিট নিয়ে বিতর্ককে ঘৃণা করি। আমি এই বিতর্ক আর করতে চাই না। আমি আরেকটি নির্বাচনও চাই না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমি অন্য কোনো বিকল্প দেখছি না।’

বরিসের ইয়র্কশায়ার সফরকে আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। আজ শুক্রবার তিনি ছুটে যান স্কটল্যান্ডে। এসব সফরে বরিস ব্রেক্সিটের পক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আগামী ১৫ অক্টোবর নির্বাচন সমর্থন দেওয়ার জন্য আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। আগামী সোমবার আবারও সরকার সংসদে আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব তুলবে সরকার।

তবে আজ বিরোধী দলগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী ৩১ অক্টোবরের আগে নির্বাচন আয়োজনের কোনো প্রস্তাবে সমর্থন দেবেন না তাঁরা।

চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের বদলে বিচ্ছেদের দিনক্ষণ পেছানোর জন্য সরকারকে বাধ্য করতে সংসদে উত্থাপিত বিলটি ইতিমধ্যে নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে পাস হয়েছে। আজ শুক্রবার বিলটি উচ্চকক্ষে পাস হওয়ার কথা। সংসদের উভয় কক্ষের অনুমোদন পেলে আগামী সোমবারই এটি আইনে পরিণত হবে। আগাম নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থ হলে বরিস এ আইন মানেন কি না, সেটি হবে দেখার বিষয়।

এদিকে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত সংসদের অধিবেশন স্থগিত থাকার কথা। সংসদ যাতে চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ আটকাতে না পারে, সে জন্য বরিস এই স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে অভিযোগ। সংসদ স্থগিতের এ সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয় আদালতে। শুক্রবার যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে বৈধ বলে ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে সরকারের সংসদ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আর কোনো বাধা রইল না।

কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, সংসদ স্থগিত হওয়ার আগে বিরোধীরা ঠিকই বিচ্ছেদ পেছানোর আইন করে ফেলছেন। এখন এ আইন মানতে না চাইলে বরিসকে অবশ্যই ৩১ অক্টোবরের আগে নির্বাচন দিতে হবে। সংসদ স্থগিতের কারণে সে কাজটি কঠিন হয়ে যাবে।

গত সোম ও বৃহস্পতিবার পরিচালিত ইউগভের এক জরিপে দেখা গেছে, জনসমর্থনের দিক থেকে ৩৫ বনাম ২৫ ব্যবধানে লেবার থেকে এগিয়ে আছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টা।