আমাজনে আগুন: ৭ দেশের বন রক্ষা চুক্তি সই

পুড়ছে আমাজন। ছবি: রয়টার্স
পুড়ছে আমাজন। ছবি: রয়টার্স

আমাজনে দাবানল নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের মধ্যে বন রক্ষা চুক্তিতে সই করেছে দক্ষিণ আমেরিকার সাতটি দেশ। দেশগুলো আমাজন নদী অববাহিকা রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছে।

সাতটি দেশ হলো বলিভিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, গায়ানা, পেরু ও সুরিনাম। চুক্তিতে দুর্যোগ মোকাবিলা নেটওয়ার্ক এবং স্যাটেলাইট নজরদারির কথা বলা হয়েছে।

আজ শনিবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, কলম্বিয়ায় অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ সম্মেলনে সাত দেশ নতুন বনায়নের কাজ করতেও সম্মত হয়েছেন।

বেশ কিছু দিন ধরে আগুনে পুড়ছে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ আমাজন। পরিসংখ্যান বলছে, অতীতে কখনো আমাজনে এত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (ইনপে) জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে আমাজনে রেকর্ডসংখ্যক আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এ বছর ৮৫ শতাংশ বেশি আগুন লেগেছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত আমাজনে অন্তত ৮০ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আমাজনের আগুন নেভাতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর যুদ্ধবিমানের সাহায্যে পানি ঢালা হয়েছে।

কলম্বিয়ার লেটিসিয়া শহরে আয়োজিত সম্মেলনটিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইভান দুকে বলেছেন, বৈঠকটি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ আমাজনের অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের ব্যবস্থা করবে।

পেরুর প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভিজকারা বলেছেন, কেবল শুভেচ্ছা জানানোই এখন আর যথেষ্ট নয়। শিক্ষা এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভূমিকা বাড়ানোর ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রচেষ্টা চালাতে রাজি হয়েছে দেশ সাতটি।

সাতটি দেশের প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মন্ত্রীরা লেটিসিয়ায় নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ব্রাজিলের ডানপন্থী রাষ্ট্রপতি জাইর বোলসোনারো ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে সম্মেলনে অংশ নেন। অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ায় সম্মেলনে হাজির হতে পারেননি তিনি।

বিশ্বের বৃহত্তম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চল আমাজনের মোট আয়তনের প্রায় ৬০ শতাংশই ব্রাজিলে অবস্থিত। তবে আগুনের রুদ্রমূর্তি কেবল ব্রাজিল অংশের আমাজনে নয়, বরং লাতিন আমেরিকার অন্য দেশগুলোও দেখছে। ভেনেজুয়েলার আমাজনে এ বছর ২৬ হাজারেরও বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। বলিভিয়া অংশে ১৭ হাজারেরও বেশিবার আগুন লেগেছে। কলম্বিয়াতেও আগুন লেগেছে ১৪ হাজারের বেশিবার।

আমাজনের অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো। এর আগে অগ্নিকাণ্ডের জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলোকে (এনজিও) দায়ী করেন তিনি। যেসব এনজিওর তহবিল বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে আমাজনে আগুন দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন প্রেসিডেন্ট। তবে এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।

পরিবেশবিদরা বলছেন, বোলসোনারোর নীতিগত ত্রুটির কারণে এ বছর আগুনের পরিমাণ বেড়ে গেছে। গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর কৃষিকাজ ও খনিজ শিল্পের জন্য বনাঞ্চল বর্ধনের প্রতিশ্রুতি দেন বোলসোনারো। তাঁর এ উদ্যোগের ফলে বন উজাড় হয়ে যেতে পারে—আন্তর্জাতিক মহলের এমন উদ্বেগ তিনি উপেক্ষা করে গেছেন। এরপর থেকে দাবানলের সংখ্যা বেড়ে গেছে।

এদিকে ব্রাজিলের শীর্ষস্থানীয় মাংস রপ্তানি শিল্প গোষ্ঠী এবং কৃষি ব্যবসায়ীরা পরিবেশবাদী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। আমাজন বন উজাড় বন্ধ করতে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

আমাজনকে গবাদিপশুর চারণভূমি হিসেবে ব্যবহার করতে চাওয়া কৃষকেরা জায়গা পরিষ্কার করতে শুকনো মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করেন। এ সময় বন দাহ্য হয়ে থাকে এবং খুব সহজেই তাতে আগুন লাগে। বোলসোনারো কাঠুরে ও কৃষকদের জমি সাফ করতে উৎসাহিত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন পরিবেশবাদীরা। এর প্রতিবাদে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা দেশ ব্রাজিল থেকে চামড়া ক্রয় স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।