রহস্যময় কারণে অবিচল প্রধানমন্ত্রী বরিস

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের বদলে বিচ্ছেদের দিনক্ষণ পেছাতে সরকারকে বাধ্য করার জন্য সংসদে আইন প্রণয়ন করেছে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং তাঁর মন্ত্রিসভার একাধিক মন্ত্রী বলছেন, চুক্তি হোক বা না-হোক, নির্ধারিত আগামী ৩১ অক্টোবরই ব্রেক্সিট কার্যকরে অবিচল সরকার।

তবে কি সরকার সংসদে পাস হওয়া আইন অমান্য করবে? নাকি সরকারের হাতে এমন কিছু আছে, যার কারণে এই আইন এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে? কোন রহস্যময় কারণে সংসদের নিয়ন্ত্রণ হারানো সরকার এতটা অবিচল, তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ।

সংসদে পাস হওয়া আইন অনুযায়ী, আগামী ১৯ অক্টোবরের মধ্যে ইইউর সঙ্গে চুক্তি করতে না পারলে অথবা চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ কার্যকরে সংসদের অনুমোদন লাভে ব্যর্থ হলে প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই বিচ্ছেদের দিনক্ষণ পিছিয়ে দিতে ইইউর কাছে আবেদন করতে হবে। এর প্রতিক্রিয়ায় সরকারের তরফ থেকে আগামী ১৫ অক্টোবর সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু বিরোধীরা সেই নির্বাচনে সমর্থন দেয়নি। সরকার সোমবার আবার সংসদে আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব তুলবে। লেবার, লিবারেল ডেমোক্র্যাট, এসএনপি, গ্রিন পার্টি, প্লাইড কামরুসহ সংসদের সব বিরোধী দল মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে বিচ্ছেদের দিনক্ষণ পিছিয়ে দেওয়ার আগে নির্বাচন মানবে না।

এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী বরিস হয় পদত্যাগ করবেন, অন্যথায় আইন মেনে বিচ্ছেদের দিনক্ষণ পেছানোর আবেদন করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।

কিন্তু গত দুদিনে প্রধানমন্ত্রী বরিস একাধিকবার বলেছেন, তিনি কোনো অবস্থাতেই বিচ্ছেদের দিনক্ষণ পেছানোর আবেদন করবেন না। সরকারের অর্থমন্ত্রী (চ্যান্সেলর) সাজিদ জাভিদ আজ রোববার বিবিসিকে আরও স্পষ্ট করে বলেন, সোমবার বিরোধীরা যদি আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব আবারও বর্জন করে, তবে সরকার তার কাজ চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আগামী ১৭ অক্টোবর ইইউ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী চুক্তি সম্পাদনে চেষ্টা চালাবেন। চুক্তি না হলে ৩১ অক্টোবর চুক্তি ছাড়া বিচ্ছেদ ঘটবে। বরিস পদত্যাগ করবেন না বলেও জানিয়ে দেন তিনি। তবে সরকার কীভাবে চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদবিরোধী আইন অমান্য করবে, সে বিষয়ে রহস্য রেখে দিয়েছেন জাভিদ। একই দিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক রাব ইঙ্গিত করেন, পার্লামেন্টে পাস হওয়া আইন আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারে সরকার।

সরকার বিচ্ছেদ পেছানোর আবেদন না করলে আদালতের আশ্রয় নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন লেবার নেতা জেরেমি করবিন।

অ্যাম্বার রাডের পদত্যাগ
কর্মসংস্থান ও অবসর ভাতাবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাম্বার রাড আজ রোববার মন্ত্রিসভা ও দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। ভিন্নমত পোষণ করার কারণে ২১ জন আইনপ্রণেতাকে দল থেকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে জানান। পদত্যাগের আরও একটি কারণ উল্লেখ করে অ্যাম্বার বলেন, সরকার চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের প্রস্তুতির জন্য যে পরিমাণ কাজ করছে, চুক্তি সম্পাদনের জন্য তার সিকি পরিমাণও করছে না। তবে আগামী নির্বাচনের আগেই বহিষ্কৃত সব আইনপ্রণেতাকে নিয়ে আবারও দলে ফেরার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন অ্যাম্বার। সংসদে শোচনীয় অবস্থা সত্ত্বেও ব্রেক্সিট কার্যকরে বেপরোয়া বরিস সরকারের মন্ত্রিসভার ঐক্য অটুট বলে ভাবা হচ্ছিল। অ্যাম্বার রাডের পদত্যাগে মন্ত্রিসভার ফাটলও স্পষ্ট হয়ে গেল।

স্পিকারকে চ্যালেঞ্জ
আগামী নির্বাচনে হাউস অব কমন্সের স্পিকার জন বারকোর বিপরীতে কনজারভেটিভ দল থেকে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী অ্যানড্রিয়া লিডসম। বিরোধীদের সংসদের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেওয়ার সুযোগ করে দিয়ে স্পিকার নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ লিডসমের। বাকিংহাম আসনের আইনপ্রণেতা স্পিকার বারকো। যুক্তরাজ্যের রীতি অনুযায়ী স্পিকারের আসনে সাধারণত কোনো প্রার্থী দেওয়া থেকে বিরত থাকে বড় দলগুলো।