গাড়ি বিক্রি হচ্ছে না, ওলা-উবারকে দায়ী করলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী

অর্থনীতির অধোগমনের জন্য ‘ওলা–উবার ও নতুন প্রজন্মের মানসিকতা’ দায়ী বলে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করে দিলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ।

ভারতীয় অর্থনীতির দক্ষিণমুখী হয়ে ওঠা আলোচনায় এসেছিল লোকসভা ভোটের আগেই। পুলওয়ামা–বালাকোট ও জাতীয়তাবাদের ধ্বজা তুলে অবস্থার সামাল দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নির্বাচন শেষে সরকার গঠনের ১০০ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার সময় অর্থনীতির সংকট আরও ঘনীভূত হলেও প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে একবারের জন্যও উদ্বেগ ফুটে ওঠেনি। একবারের জন্যও তিনি সংকট থেকে পরিত্রাণের উপায় বাতলাননি। এখন অবরুদ্ধ কাশ্মীর ও অশান্ত আসামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে জাতিসংঘ যখন তোলপাড়, মোদি সরকার তখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক জয়কে তুলে ধরে অর্থনীতি থেকে দৃষ্টি আড়ালে সচেষ্ট বলে বিরোধীরা সরব। বিরোধীরা সচেষ্ট কিন্তু শাসকগোষ্ঠীকে বিচলিত করার মতো তা এমন কিছু নয়।

এই পরিস্থিতিতেই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলেছেন, নতুন প্রজন্ম গাড়ি না কিনে ওলা–উবারের প্রতি বেশি আকৃষ্ট। গাড়িশিল্পের মন্দার কারণ এটাই।
মৌচাকে ঢিল মেরেছে ওই মন্তব্য। বিরোধীরা সমালোচনায় মুখর। বিপাকে সরকার। অর্থমন্ত্রীর পক্ষে অবস্থার সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন কেন্দ্রীয় পরিবহনমন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি। বলেছেন, অর্থনীতির অধোগমনের জন্য ওলা–উবার মানসিকতা একমাত্র কারণ নয়। অর্থমন্ত্রী বলতে চেয়েছেন, ওটা অনেক কারণের অন্যতম।

বিরোধীরা এই জবাবে সন্তুষ্ট নয়। বিশেষ করে সরব কংগ্রেস। সরকারের ১০০ দিন পূর্তিকে তারা ‘নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা ও স্বৈরতান্ত্রিক’ বলে বর্ণনা করেছে। কংগ্রেস বলেছে, ‘আটটি ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার ২ শতাংশের কম এসে দাঁড়িয়েছে। অথচ অর্থমন্ত্রী মানতে নারাজ যে অর্থনীতির হাল দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। বিজেপি এইভাবে উদাসীন থাকলে চরম মন্দা ছাড়া ভারতের ভাগ্যে আর কিছু লেখা নেই।’

গাড়িশিল্পের মন্দা সর্বক্ষেত্রে। প্রশ্ন উঠছে, অর্থমন্ত্রীর যুক্তি অনুযায়ী ‘ওলা–উবার মানসিকতা’ দায়ী হলে প্যাসেঞ্জার গাড়ির বিক্রি কমার কারণ নেই। কারণ, ওই ক্ষেত্রে চাহিদা বাড়ার কথা। কিন্তু পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ট্রাক, ট্রাক্টর, সাধারণ মোটরগাড়ি, থ্রি–হুইলার অথবা দুই চাকার গাড়ি—সবার বিক্রি কমেছে। বিক্রি কমেছে ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প, রপ্তানি ক্ষেত্রেও। শিল্প, কৃষি ও উৎপাদন—আশাপ্রদ প্রবৃদ্ধি কোথাও নেই। ফলে বেড়ে চলেছে বেকারিত্ব। মারুতি, অশোক লেল্যান্ডসহ একের পর এক গাড়ি তৈরি কারখানায় ছাঁটাই চলছে। মাসের মধ্যে কয়েক দিন বাড়তি ছুটি দিয়ে উৎপাদন কমানো হচ্ছে। গাড়িশিল্পের কর্মী সংগঠনের পক্ষে জানানো হয়েছে, স্থায়ী কর্মীদের ছাঁটাই না করে বেতন কমানো হচ্ছে। কাজের দিন হিসাব অনুযায়ী অস্থায়ী কর্মীদের দিনপ্রতি বেতন ঠিক করা হচ্ছে। দেশের প্রবৃদ্ধির হার বছরের তৃতীয় কোয়ার্টারে কমে ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এভাবে চললে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা।

বিরোধীদের অভিযোগ, সার্বিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার কোনো উদ্যোগ নেই। কর্মসংস্থান বাড়ানোরও কোনো প্রচেষ্টা নেই। গ্রামীণ মানুষের চাহিদা বাড়ানোর দিকে নজর নেই। চাহিদা বাড়ছে না বলে জোগানও বাড়ছে না। অনিবার্য ফল হবে দেশজোড়া হাহাকার ও সার্বিক মন্দা। কংগ্রেসের বাড়তি অভিযোগ, বেহাল অর্থনীতির মধ্যে শাসক দল সারা দেশে সামাজিক ও ধর্মীয় অসন্তোষ বাড়িয়ে চলেছে।

এই অবস্থায় নির্মলা সীতারমণের মন্তব্য গাড়িশিল্পের জন্য অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা কর বা জিএসটির পরিমাণ কমানোর আগাম অজুহাত বলে মনে করা হচ্ছে। গাড়িশিল্পে এই করের হার ছিল ২৮ শতাংশ। সেখান থেকে কমিয়ে ১৮ শতাংশ করা হয়। এখন আরও কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে ধারণা। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, করের হার কমানোর ক্ষমতা জিএসটি কাউন্সিলের। তারাই ঠিক করবে। একই যুক্তি নীতিন গড়কড়িরও। দিনকয়েক আগে রিজার্ভ ব্যাংক ঋণের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংক সংযুক্তকরণও হয়েছে। কিন্তু অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো লক্ষণ এখনো নেই। এই অবস্থায় কংগ্রেস বলেছে, সবকিছুর জন্য তাদের দায়ী না করে প্রধানমন্ত্রী বরং অর্থনীতির সামাল দিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের পরামর্শ নিন।