'পশ্চিমবঙ্গ অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াবে'

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়ে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) হবেই। তিনি বলেন, এ রাজ্য থেকে তাড়ানো হবে অনুপ্রবেশকারীদের। আর এতে করে বাদ যাবে রাজ্যের দুই কোটি মানুষের নাম। বিদেশি নাগরিকেরা এসে রাজ্য তথা দেশের সম্পদ নষ্ট করছে। তা রুখতেই পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হবে।

গতকাল বুধবার দিল্লিতে শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ‘সেভ বেঙ্গল’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় এ কথা জানান তিনি। বিজেপি রাজ্য সভাপতি বলেছেন, ‘সরকার নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে হিন্দুদের নাগরিকত্ব দিয়ে দেবে।’

দিলীপ ঘোষ এনআরসি নিয়ে মমতার আন্দোলনকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতার একটা পুরোনো অভ্যাস আছে, কিছু হলেই রাস্তায় নেমে পড়েন তিনি। বাড়ি থাকতে পারেন না। সেই অভ্যাস বজায় রাখতে তিনি রাস্তায় নামছেন। ২০২১ সালের পরে তো তাঁর রাস্তায় নামতে হবে। কিন্তু যতই রাস্তায় নামুক না কেন, এই পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হবেই।’ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হবে।

গত মঙ্গলবার ভারতের কেন্দ্রীয় নারী শিশুকল্যাণ ও বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি কলকাতায় এসে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে যান, এই রাজ্যে অনুপ্রবেশকারী রুখতে কার্যকর করা হবে এনআরসি। শুধু এই রাজ্যই নয়, গোটা ভারতে কার্যকর করা হবে এনআরসি। কোনো অনুপ্রবেশকারীকে ঠাঁই দেওয়া হবে না পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের কোনো রাজ্যে। এ ব্যাপারে বিজেপি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আর বাংলায় এই এনআরসির ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এনআরসির মাধ্যমে এই বাংলা থেকে বিতাড়ন করা হবে অনুপ্রবেশকারীদের।

আসামের এনআরসি নিয়ে এখনো পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি উত্তাল। পশ্চিমবঙ্গজুড়ে চলছে এনআরসিবিরোধী আন্দোলন, সভাসমাবেশ, মিছিল, প্রতিবাদ সভা। এনআরসির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস, জাতীয় কংগ্রেস, বামফ্রন্টসহ রাজ্যের বেশ কিছু রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা। তারা সবাই দাবি তুলেছে, পশ্চিমবঙ্গে এনআরসির নামে কোনো বাঙালিকে তাড়ানো চলবে না। এই রাজ্যে এনআরসি কার্যকর করতে দেওয়া হবে না ।

এনআরসির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। তবে ওই প্রস্তাব মানছে না বিজেপি। প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সময় বিজেপি এর বিরোধিতা করে অধিবেশন বয়কট করেছিল। বিজেপি এখনো পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি কার্যকর করার প্রশ্নে অনড় রয়েছে।

৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর রাজ্যে এনআরসিবিরোধী সভাসমাবেশ এবং প্রতিবাদ মিছিল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আজ ১২ সেপ্টেম্বর কলকাতায় এনআরসিবিরোধী মহামিছিলের ডাক দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মিছিল শুরু হবে কলকাতার সিথি থেকে, চলবে শ্যামবাজার পর্যন্ত। এরপর শ্যামবাজারে অনুষ্ঠিত হবে প্রতিবাদ সমাবেশ।

আসামে ১২ লাখ হিন্দুর নাম বাদ
পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্ববর্তী রাজ্য আসামে এনআরসির নামে বাদ দেওয়া হয়েছে ১৯ লাখের বেশি মানুষের নাম। এদের মধ্যে সিংহভাগ বাঙালি হিন্দু। হিন্দুত্বের রাজনীতি করে অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াতে গিয়ে আসামে এনআরসি থেকে বাদপড়া হিন্দুদের নাম নিয়ে এখন ফ্যাসাদে পড়েছে বিজেপিশাসিত আসাম সরকার।

আসাম সরকার ভাবতেই পারেনি, এনআরসির চূড়ান্ত তালিকায় বাদ যাওয়া ১৯ লাখ মানুষের মধ্যে ১০ লাখের বেশি হিন্দু। ফলে, এই ঘটনা নিয়ে আসাম সরকার যেমন বিপাকে পড়েছে, ঠিক তেমনি আসামে বাঙালিরাও এবার গর্জে উঠেছে। শুরু করেছে এনআরসি বাতিলের আন্দোলন।

আসামের ‘সারা আসাম বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশন’ দাবি করেছে, এবার এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ গেছে ১০ থেকে ১২ লাখ হিন্দুর নাম। আর বাঙালি মুসলিম বাদ পড়েছেন দেড় থেকে দুই লাখ। বাকি বাদ পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন গোর্খা, স্থানীয়, আদিবাসী এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষের নাম।

সংগঠনটির সভাপতি উৎপল সরকার দাবি তুলেছেন, দেড় হাজার কোটি রুপি খরচ করে ত্রুটিপূর্ণ এই এনআরসির তালিকা তৈরির পেছনে কাদের হাত রয়েছে, তা খুঁজে বের করার জন্য সিবিআইয়ের তদন্তের প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘অতীতে অস্ত্র দেখিয়ে আসাম থেকে বাঙালিদের তাড়ানো হয়েছিল। এবার কাগজে–কলমে নাম না তুলে ফের বাঙালিদের আসামের ভিটে থেকে উৎখাতের পরিকল্পনা নিয়েছে আসাম সরকার। এটা বাঙালিরা মানবে না। এর বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

জনগণের টাকায় বাঙালি তাড়ানোর পেছনে যাঁরা কলকাঠি নাড়ছেন, তাঁদের শনাক্ত করার জন্য তিনি অবিলম্বে সিবিআইয়ের তদন্ত চেয়েছেন।