কাশ্মীরে কয়েকটি মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন

আসরারের মৃত্যুর কারণ নিয়ে ভিন্ন বক্তব্য জানিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও তার পরিবার। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
আসরারের মৃত্যুর কারণ নিয়ে ভিন্ন বক্তব্য জানিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও তার পরিবার। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

১৭ বছরের কিশোর আসরারের মৃত্যু নিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং তাঁর পরিবার দুই রকমের বক্তব্য দিয়েছে। চিকিৎসকদের প্রতিবেদন ও আসরারের বাবা বলছেন, কাঁদানে গ্যাসের টিনের আঘাত ও গুলিবিদ্ধ হয়ে আসরার মারা যায়। তবে ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা বলছেন, ছুড়ে মারা পাথরের আঘাতে আসরারের মৃত্যু হয়েছে। বিবিসির প্রকাশিত প্রতিবেদনে আসরারসহ আরও কয়েকটি মৃত্যু নিয়ে নানা মতের কথা উঠে এসেছে।

বিবিসির খবরে জানা যায়, আসরারের বাবা ফেরদৌস আহমেদ খানের অভিযোগ, ৬ আগস্ট বাড়ির সামনে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলছিল আসরার। এ সময় কাঁদানে গ্যাসের টিন এবং সিসার গুলি তার মাথায় আঘাত করে। ঘটনার সময় সঙ্গে থাকা তার এক বন্ধু জানায়, সন্ধ্যার দিকে ব্যারাকে ফিরে আসা ভারতীয় আধাসামরিক সৈন্যরা আসরারকে গুলি করে হত্যা করেছে।

মেডিকেল প্রতিবেদন অনুযায়ী, আসরার কাঁদানে গ্যাসের টিনের আঘাতে এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। চার সপ্তাহ ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর আসরার মারা যায়।

কাশ্মীরে ভারতের শীর্ষ সেনা কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কেজেএস ধীলন বলেছেন,আসরার ছুড়ে মারা পাথরের আঘাতে আহত হয়। কাশ্মীরি প্রতিবাদকারীরা সশস্ত্র বাহিনীর ওপর যে পাথর ছুড়েছিল, তারই একটি আসরারের মাথায় লাগে।

কাশ্মীর পুলিশ বিবিসিকে জানিয়েছে, তাঁরাও সেনা কমান্ডারের এই বিবৃতিতে সমর্থন জানাচ্ছে। হাসপাতালের প্রতিবেদনটিকে সন্দেহজনক বলে অভিহিত করে তাঁরা বলেছেন, এ ঘটনার আরও তদন্ত প্রয়োজন।

মৃত্যুসনদে লেখা আছে—গুলির আঘাতে মারা গেছে আসরার। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
মৃত্যুসনদে লেখা আছে—গুলির আঘাতে মারা গেছে আসরার। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ভারত সরকার কাশ্মীর অঞ্চলের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে এবং জম্মু ও কাশ্মীরকে দুই ভাগ করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা দেওয়ার একদিন পর এ ঘটনা ঘটে।

স্কুলের তথ্য অনুযায়ী, দশম শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষায় ৮৪ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল আসরার। একটি পুরোনো সংবাদপত্রে ক্রিকেট ট্রফি হাতে তার ছবি ছাপা হয়। এগুলো এখন থেকে তার পরিবারের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হয়ে থাকবে।

আসরারের বাবার প্রশ্ন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি কি আমার বেদনা অনুভব করছেন? তিনি কি এর জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন? তিনি কি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন?’ তিনি বলেন, ‘ আরও বেশি মৃত্যু হবে। কাশ্মীর আজ জবাবদিহির ঊর্ধ্বে চলে গেছে।’

ভারত সরকারের দাবি, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর থেকে নিরাপত্তাবাহিনীর পদক্ষেপের ফলে একটি প্রাণও ঝরে পড়েনি। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথরের আঘাতে আসরারসহ দুজন মারা গেছেন।সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সশস্ত্র বিদ্রোহীদের হাতে আরও তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুজন দক্ষিণ কাশ্মীরের ত্রাল অঞ্চলের যাযাবর মেষপালক এবং একজন শ্রীনগরের দোকানদার।

২৯ আগস্ট সন্ধ্যায় ৬০ বছর বয়সী গোলাম মোহাম্মদ নামে এক দোকানদার তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দোকানে বসেছিলেন। এ সময় তিন দুর্বৃত্ত তাঁকে গুলি করে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। কাশ্মীর পুলিশের মহাপরিচালক দিলবাগ সিং বলেন, জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো দোকান, ব্যাংক এবং পেট্রল স্টেশন খোলার বিরুদ্ধে জনগণকে সতর্ক করে লিফলেট বিতরণ করেছে। তবে এ ব্যাপারে গোলাম মোহাম্মদের পরিবার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

সরকারি হিসেবে অনেকের মৃত্যু নথিবদ্ধ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন কাশ্মীরিরা। তাদেরই একজন রফিক শাগুর স্ত্রী ফাহমিদা বানু। ৯ আগস্ট শ্রীনগরের বেমিনা এলাকায় স্ত্রী ফাহমিদা বানুর সঙ্গে বারান্দায় বসে চা খাচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ করে প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিরাপত্তাবাহিনীর সংঘর্ষের সময় একটি কাঁদানে গ্যাস তাদের ঘরে ঢুকে পড়ে। এতে দমবন্ধ হয়ে মারা যান ফাহমিদা।

গভর্নর সত্য পাল মালিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০০৮, ২০১০ এবং ২০১৬ সালের বিপর্যয়ের সঙ্গে এবারের কোনো তুলনা হয় না। সে সময়গুলোতে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারান।’ তিনি বলেন, ‘ নিরাপত্তাবাহিনী কারও ক্ষতি না করে কাশ্মীরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে দিনরাত কাজ করেছে।’