ইন্দোনেশিয়ায় বন কেন পুড়ছে

বায়ুদূষণের কারণে শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরে বিদ্যালয়ে যেতে হচ্ছে। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার কালিমানতানের পালাংকারায়ায়।  ছবি: বিবিসি
বায়ুদূষণের কারণে শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরে বিদ্যালয়ে যেতে হচ্ছে। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার কালিমানতানের পালাংকারায়ায়। ছবি: বিবিসি

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বড় একটি অঞ্চল প্রায় প্রতিবছরই ধোঁয়াশায় আচ্ছন্ন হয়। ইন্দোনেশিয়ার বিশাল বনভূমিতে লাগা আগুন থেকে এই ধোঁয়ার উৎপত্তি। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার এই সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ইন্দোনেশিয়ার বন কেন পুড়ছে—প্রশ্নটি তাই এবার আরও বেশি জোরালো হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ সংস্থার তথ্যমতে, এ বছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৩ লাখ ২৮ হাজার ৭২৪ হেক্টর বনভূমি পুড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মধ্য, পশ্চিম ও দক্ষিণ কালিমানতান, রিয়াইউ, জামবি ও দক্ষিণ সুমাত্রা এলাকা।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের বিশেষ আবহাওয়া কেন্দ্রের গত শনিবারের তথ্যানুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ার কালিমানতানে এবার ৬২৭টি জায়গায় এবং মালয়েশিয়ার সাবাহ ও সারাওয়াক প্রদেশের ১০টি জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ইন্দোনেশিয়ায় শুষ্ক মৌসুম জুলাই থেকে অক্টোবরে বনভূমিতে আগুনের ঘটনা অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ সময় চাষাবাদের সুবিধার্থে জমিতে আগুন দেন স্থানীয় কৃষকেরা। অনেক সময় এই আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বর্নিও দ্বীপের কালিমানতানেই রাজধানী সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো ইউদোদো।

শুষ্ক মৌসুমে ইন্দোনেশিয়ার পাশাপাশি মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের আকাশ ছেয়ে যায় ধোঁয়াশায়। বায়ুদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করে। এবার ধোঁয়াশা এতটা প্রকট আকার ধারণ করেছে যে অনেক এলাকায় মানুষের চোখ ও গলায় জ্বালাপোড়া শুরু হয়েছে। এ কারণ ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় শত শত বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই তিন দেশের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় বায়ুদূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি।

আগুন নেভাতে ইন্দোনেশিয়া কোটি কোটি লিটার পানি ছিটাচ্ছে। সেনাবাহিনীও পাঠিয়েছে। বনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে দেশটির সরকার।

আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাম তেল উৎপাদনকারী দেশ। বিশ্বে এই তেলের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সে কারণেই কৃষকেরা পাম চাষের দিকে ঝুঁকছেন। পাম চাষের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে ভূমিতে আগুন দেন কৃষকেরা। সেই আগুনই ছড়িয়ে পড়েছে বনভূমিতে। শুধু ইন্দোনেশীয় কৃষকেরাই নন, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী। তারাও অবৈধভাবে আগুন লাগাচ্ছে।