জোর করে হিন্দি চাপাতে বলিনি: অমিত শাহ

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা করা নিয়ে দেওয়া বক্তব্য থেকে সরে এলেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘আমি জোর করে হিন্দি চাপাতে বলিনি। আগে মাতৃভাষা, পরে হিন্দি। আঞ্চলিক ভাষার কণ্ঠ রোধ করার কথা বলিনি।’

অমিত শাহ গত শনিবার হিন্দি দিবসে বলেছিলেন, ‘এক রাষ্ট্র, এক ভাষা হোক ভারতে। সেই ভাষা হোক হিন্দি। ভারতে বহু ভাষা রয়েছে। প্রতিটি ভাষারই গুরুত্ব রয়েছে। তবে দেশের একটি জাতীয় ভাষা হওয়া প্রয়োজন, যে ভাষাটিকে বিশ্ব স্বীকৃতি দেবে ভারতীয় ভাষা হিসেবে। আর যদি কোনো ভাষা দেশকে একসূত্রে গাঁথতে পারে, তবে সেটি হবে হিন্দি।’

অমিত শাহের এই মন্তব্য ঘিরে দেশজুড়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। কলকাতাসহ দেশজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়। ভাষার প্রশ্নে অমিত শাহর মন্তব্য নিয়ে ভারতে আন্দোলন ও প্রতিবাদ হয়। এর জেরে অমিত শাহ তাঁর অবস্থান পাল্টে গতকাল বুধবার এ মন্তব্য করেছেন।

এর আগে গত জুনে জাতীয় শিক্ষানীতির খসড়ায় হিন্দিকে বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করায় দেশজুড়ে বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদ দেখা দিয়েছিল। এবার ভাষার প্রশ্নেও সেই একই চিত্র দেখা দিয়েছে।

উত্তর ভারতে হিন্দির ব্যাপক চল থাকলেও দক্ষিণ ভারতে হিন্দির চল নেই। সেখানে হিন্দি বাদে আঞ্চলিক ভাষার দাপট বেশি। তাই হিন্দিকে জাতীয় ভাষা করার প্রস্তাব দিয়ে বিপাকে পড়েন অমিত শাহ। সেই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গতকাল বুধবার ভাষার প্রশ্নে নিজের অবস্থান বদলিয়ে ঘোষণা দেন, ‘আমি আঞ্চলিক ভাষার কণ্ঠ রোধ করার কথা বলিনি। এমনকি আঞ্চলিক ভাষার ওপর হিন্দিকে চাপিয়ে দেওয়ার কথাও বলিনি। আমি শুধু অনুরোধ করেছিলাম, মাতৃভাষার পাশাপাশি দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দি শিখতে। আমি নিজে অহিন্দিভাষী রাজ্য গুজরাটের মানুষ। তবে কেউ যদি এ নিয়ে রাজনীতি করতে চায়, করতেই পারে।’

বহু ভাষা আর মিশ্র সংস্কৃতির দেশ ভারত। ভারতের রয়েছে ২৯টি রাজ্য এবং ৭টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। এসব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রয়েছে বিভিন্ন ভাষার ছড়াছড়ি। ভারতের ১৯৭১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মোট ভাষার সংখ্যা ১ হাজার ৬৫২। পশ্চিমবঙ্গ আর ত্রিপুরায় যেমন বাংলা ভাষার ব্যবহার বেশি; তেমনি উত্তর প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খন্ড, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, দিল্লি, রাজস্থানে রয়েছে হিন্দি ভাষার আধিক্য। আবার তামিলনাড়ুতে তামিল ভাষা, কর্ণাটকে কন্নড়, গুজরাটে গুজরাটি, কেরালায় মালায়লম, অন্ধ্র প্রদেশে তেলেগু, মহারাষ্ট্রে মারাঠি, আসামে অসমিয়া, মণিপুরে মণিপুরী, মিজোরামে মিজো, মেঘালয়ে খাসি ও গাড়ো ভাষার প্রচলন বেশি। এর ফলে দেখা যাচ্ছে সর্বভারতে কোনো ভাষার একচ্ছত্র আধিপত্য নেই।

বিষয়টি অনুধাবন করে ভারতের শাসক দল বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ চাইছিলেন ভারতে একটি ভাষাকে জাতীয় ভাষা হিসেবে ব্যবহার করতে। তাই অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘এক রাষ্ট্র, এক ভাষা হোক ভারতে। সেই ভাষা হোক হিন্দি।’

পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তামিলনাড়ুতে ডিএমকে সভাপতি এম কে স্টালিন, কর্ণাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী, পদুচেরির মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী, সিপিএমের নেতা মহম্মদ সেলিম এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অমিত শাহের এই মন্তব্যকে ঘিরে ক্ষোভ দেখা দেয়। দক্ষিণী সুপারস্টার রজনীকান্ত ও কমল হাসান অমিত শাহর মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ভারতের ২০১১ সালের সর্বশেষ জনগণনায় বলা হয়েছে, ভারতের ১০ জন মানুষের মধ্যে ৬ জনের মাতৃভাষা হিন্দি নয়। ভারতের ২০০১ সালের জনগণনায় বলা হয়, ভারতে হিন্দিভাষী মানুষের সংখ্যা ৪১ শতাংশ। এরপর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলা। তাদের সংখ্যা ৮ দশমিক ১১ শতাংশ। এরপরে যথাক্রমে তেলেগু, মারাঠি, তামিল, উর্দু, গুজরাটি, কন্নড়, মালায়লম, ওডিশা, পাঞ্জাবি ও অসমিয়া ভাষার অবস্থান।