নতুন নজির গড়বে আদালতের সিদ্ধান্ত

ব্রেক্সিট
ব্রেক্সিট

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পার্লামেন্ট স্থগিত করার বৈধতার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে টানা তিন দিনের শুনানি আজ বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। অপেক্ষা এখন রায় ঘোষণার। আদালতের রায় যে পক্ষেই যাক, দেশটির আইনবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা একমত যে এ রায় দেশটির আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যের রীতিতে নতুন উপাদান যোগ করবে।

রানির ভাষণের মাধ্যমে নতুন পরিকল্পনা তুলে ধরতে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত পার্লামেন্টের অধিবেশন স্থগিত করা হয়েছে বলে দাবি সরকারের। সরকারের যুক্তি, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সরকার এমনটি করার অধিকার রাখে। এটি আদালতের এখতিয়ারভুক্ত বিষয় নয়। অন্যদিকে, বিরোধীরা বলছেন, সরকারের পার্লামেন্ট স্থগিতের রীতি থাকলেও প্রধানমন্ত্রী বরিস অসৎ উদ্দেশ্যে দীর্ঘ পাঁচ সপ্তাহের জন্য পার্লামেন্ট স্থগিত করেছেন, যা প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার চরম অপব্যবহার। এতে সরকারকে জবাবদিহি করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আইনপ্রণেতারা।

এর আগে ইংল্যান্ডের হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন, বিষয়টি রাজনৈতিক। আদালতের এখতিয়ারভুক্ত নয়। একই বিষয়ে আরেকটি মামলায় স্কটল্যান্ডের ‘কোর্ট অব সেশন’ সরকারের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ব্রেক্সিটবিরোধী প্রচারক জিনা মিলার এবং কোর্ট অব সেশনের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে।

অলিখিত সংবিধানের দেশ যুক্তরাজ্যে পার্লামেন্ট স্থগিতের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। অতীতে এ বিষয়ে কোনো আইনি লড়াইয়ের ঘটনাও ঘটেনি। তাই সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের এখন দুটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। এক. পার্লামেন্ট স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সৃষ্ট বিরোধে আদালত রায় দিতে পারে কি না? দুই. যদি আদালত রায় দিতে পারে, তবে প্রধানমন্ত্রীর পার্লামেন্ট স্থগিতের সিদ্ধান্ত বৈধ কি না?

আদালত এই মামলা এতটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে যে সুপ্রিম কোর্টের মোট ১২ জন বিচারকের মধ্যে ১১ জনই শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন। গতকাল বুধবারের শুনানিতে আইনজীবী জেমস এডি হাইকোর্টের রায় বহাল রাখতে সরকারের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, পার্লামেন্ট স্থগিতের রীতি নিয়ে কোনো নিয়ম ঠিক করে দেওয়া আদালতের দায়িত্ব নয়।

অন্যদিকে, কোর্ট অব সেশনের রায় বহাল রাখার আবেদন জানিয়ে ব্রেক্সিটবিরোধী আইনপ্রণেতাদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে অ্যাইডেন ও’নিল বলেন, পার্লামেন্ট স্থগিতের পেছনে সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। আর সেটি হলো পার্লামেন্টের কণ্ঠ রোধ করা এবং জবাবদিহি এড়ানো। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘সব পার্লামেন্টের মাতাকে বন্ধ করে দিয়েছে সব মিথ্যার জনক।’

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, সরকার মোটামুটি ধরে নিয়েছে যে বিষয়টি আদালতের এখতিয়ারভুক্ত বলে বিবেচিত হবে। ফলে, কিছু সতর্কবাণীও আসতে পারে। তবে ১৪ অক্টোবর রানির ভাষণের মাধ্যমে অধিবেশন চালুর পরিকল্পনায় আদালত বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না বলে সরকারের প্রত্যাশা। ব্রেক্সিটবিষয়ক মন্ত্রী স্টিফেন বার্কলে বলেন, আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে চলবে সরকার।

ব্রেক্সিট নিয়ে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্য সরকারের তরফ থেকে আজ বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বিচ্ছেদ কার্যকরে একটি চুক্তি সম্পাদনের জন্য নতুন প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি। ইইউ কমিশনের পক্ষ থেকে এ নতুন প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে। তবে প্রস্তাবে কী রয়েছে, তার বিস্তারিত প্রকাশ করেনি কোনো পক্ষ। গত শুক্রবার ইইউয়ের পক্ষে প্রধান সমঝোতাকারী মিশেল বার্নিয়ে ও যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিটবিষয়ক মন্ত্রী স্টিফেন বার্কলের নতুন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে দীর্ঘ আড়াই বছরের চেষ্টায় ইইউয়ের সঙ্গে একটি বিচ্ছেদ চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন। কিন্তু আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্ত ব্যবস্থাপনাবিষয়ক বিতর্কিত ‘বেক স্টপ’ অনুচ্ছেদের কারণে তিন দফা সেই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট। বরিস জনসন ‘বেক স্টপ’ অনুচ্ছেদ ছাড়াই নতুন চুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। ইইউয়ের তরফ থেকে ‘বেক স্টপ’ সমস্যা সমাধানে গ্রহণযোগ্য বিকল্প প্রস্তাব উপস্থাপনের জন্য যুক্তরাজ্যকে চাপ দেওয়া হয়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টি রিন বলেন, ৩১ অক্টোবর চুক্তির ভিত্তিতে বিচ্ছেদ চাইলে ১২ দিনের মধ্যে যুক্তরাজ্যকে গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব নিয়ে হাজির হতে হবে। এর পরপরই যুক্তরাজ্যের তরফ থেকে নতুন প্রস্তাব উত্থাপনের বিষয়টি জানা যায়।