তিন শর্তে ব্রেক্সিট নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে প্রস্তাব গৃহীত

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

লুক্সেমবার্গে অবমানকর সফরের পর, এবার স্ট্রাসবুর্গে অবস্থিত ইউরোপীয় পার্লামেন্ট থেকে বড় রকমের ধাক্কা খেলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। গতকাল বুধবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাকস্টপ ব্যবস্থা ছাড়া ব্রেক্সিট চুক্তি ও দেনা পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশনার জঁ ক্লদ ইউঙ্কার ও ইইউ’ এর ব্রেক্সিট বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক মিশেল বার্নিয়ে ইউরোপের ২৮ দেশ থেকে নির্বাচিত ৭৫১ আসন বিশিষ্ট পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট নিয়ে আলোকপাত করেন। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে দীর্ঘ আলোচনার পর ব্রেক্সিট সংক্রান্ত তিনটি বিষয়ে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়।

বিষয় তিনটি হলো, ১. যুক্তরাজ্য ইইউ জোট ছেড়ে গেলেও জোটের দেনা পাওনা পরিশোধ করতে হবে, ২.যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় জোটের নাগরিকদের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে, ৩. ইইউ সদস্য দেশ আয়ারল্যান্ডের সীমান্তে (ব্যাকস্টপ) নতুন করে কোনো শক্ত নিয়ম করা যাবে না। ব্রেক্সিট সংক্রান্ত এই তিনটি বিষয়ের পক্ষে ভোট দেন ৫৪৪ জন সদস্য এবং বিপক্ষে ভোট দেন ১২৬ জন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশনার জঁ ক্লদ ইউঙ্কার গত সোমবার লুক্সেমবার্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে তাঁর আলোচনার বিষয় সংসদে অবিহিত করেন। তিনি বলেন, বরিস জনসনের সঙ্গে ওই আলোচনা ছিল খুবই হতাশাব্যঞ্জক, চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের বিষয়টি ক্রমেই বাস্তবতায় রূপ নিতে যাচ্ছে।

পার্লামেন্টে উপস্থিত যুক্তরাজ্যের জাতীয়তাবাদী ব্রেক্সিট দলের নেতা নাইজেল ফারাজ এবং দলটির অন্য সদস্যরা সমস্বরে উল্লাস প্রকাশ করলে জঁ ক্লদ ইউঙ্কার তাদের উদ্দ্যেশে হাত নাড়িয়ে কৌতুক করে বলেন, ‘আপনারা আমার সব থেকে ভালো অনুসারী।’ তিনি ব্রিটিশ কৌশলের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করে বলেন, ইইউ কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন কোনো বিকল্প প্রস্তাব উপস্থাপনের পরিবর্তে ব্রিটিশ সরকার বর্তমানে পৃথক ভাবে ইইউ জোটের সদস্যদের সঙ্গে পার্শ্ব চুক্তির চেষ্টা করছে। এটা ব্রিটিশদের পুরান কৌশল এবং তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ব্রেক্সিট বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক মিশেল বার্নিয়ে আবারও চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের ক্ষেত্রে বাস্তবে কি ধরনের ঝুঁকির মধ্যে যুক্তরাজ্য পতিত হবে তা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি সংসদে উপস্থিত ব্রিটিশ ইইউ সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্য বলেন, ‘যুক্তরাজ্য প্রায় তিন বছর থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন তবে আমাদের প্রস্তাবের বিপরীতে কোনো বিকল্প প্রস্তাব দিতে পারছে না। আর চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের কারণে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হবে সেই সত্যটি আপনারা ব্রিটিশ জনগণকে বলছেন না।’

বুধবার সন্ধ্যায় ইইউ পার্লামেন্টের আলোচনায় বড় জোট ইউরোপীয় পিপলস দলের নেতা ম্যানফ্রেড ওয়েবার বলেন, ব্রেক্সিটপন্থীরা অনেকেই তাচ্ছিল্য করে বলতেন, যুক্তরাজ্য জোট ত্যাগ করে চলে গেলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভেঙে যাবে। কিন্তু বিষয়টি উল্টো হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তা পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটের রায় দেখলেই বোঝা যায়।

যুক্তরাজ্যের জাতীয়তাবাদী ব্রেক্সিট দলের নেতা নাইজেল ফারাজ এবং দলটির অন্য সদস্যদের উদ্দ্যেশে, ইইউ পার্লামেন্টের ব্রেক্সিট বিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রধান গাই ভেরহোফস্টাড বলেন, ‘আপনারা স্ট্রাসবুর্গে ইইউ পার্লামেন্টে হইচই করছেন। তবে তা আপনারা ওয়েস্ট মিনিস্টার তথা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে করতে পারেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ আমরা পাগল নই যে, ইইউর পরিবেশগত, স্বাস্থ্য ও সামাজিক মান না মেনে আপনারা ইইউর শুল্কমুক্ত অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবহারের সুযোগ পাবেন।’

২০১৬ সালের ২৩ জুন এক গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চার দশকের সম্পর্কচ্ছেদের পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কোনো প্রক্রিয়ায় যুক্তরাজ্য আলাদা হবে
বা পরবর্তীতে ইইউভুক্ত বাকি ২৭টি রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক কেমন হবে, সেসব বিষয়ে ব্রিটিশ সরকার এখনো কোনো প্রস্তাব পেশ করেনি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোটের বেঁধে দেওয়া
সর্বশেষ সময় অনুযায়ী, বিচ্ছেদ প্রশ্নে যুক্তরাজ্য কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারলে আগামী ৩১ অক্টোবর চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট কার্যকর হবে।