প্রধানমন্ত্রী বরিসের পদত্যাগ দাবি বিরোধীদের

বরিস জনসন। ফাইল ছবি
বরিস জনসন। ফাইল ছবি

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পার্লামেন্ট স্থগিতের সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার দেওয়া রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, ওই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকারকে জবাবদিহি করার ভূমিকা পালন থেকে পার্লামেন্টকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

আদালতের এমন রায়কে অভিনব, নজিরবিহীন এবং যেকোনো প্রধানমন্ত্রীর জন্য বড় শিক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ব্যক্তি যতই ক্ষমতাশালী হোক, এমনকি প্রধানমন্ত্রী হলেও তাঁকে আইন মেনে চলতে হবে—এ বাস্তবতাকে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছে আদালতের রায়।

রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিরোধী দলগুলো প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন। সংসদের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের স্পিকার জন বারকো আগামীকাল বুধবার পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন। আর সরকারের তরফে বলা হয়েছে, তারা আদালতের রায়টি ‘প্রক্রিয়া’ করছে। এমন প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার কী বোঝাতে চেয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ রায় প্রধানমন্ত্রী বরিসের ক্ষমতার ভিতকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আদালতে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি আইন অমান্য করেছেন। অতীতে কোনো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেনি।

রীতি অনুযায়ী রানির ভাষণের মাধ্যমে সরকারের নতুন পরিকল্পনা তুলে ধরার অজুহাতে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত পার্লামেন্টের অধিবেশন স্থগিত করেন প্রধানমন্ত্রী বরিস। ব্রেক্সিট নিয়ে পার্লামেন্টে জবাবহিদি এড়াতে সরকার এ কাজ করেছে দাবি করে আদালতে যায় বিরোধীরা। ইংল্যান্ডের হাইকোর্ট রায় দেন—বিষয়টি রাজনৈতিক, আদালতের এখতিয়ারভুক্ত নয়। কিন্তু একই বিষয়ে আরেকটি মামলায় স্কটল্যান্ডের ‘কোর্ট অব সেশন’ সরকারের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে। অধস্তন আদালতের বিপরীতমুখী এই দুই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয় সুপ্রিম কোর্টে।

গত সপ্তাহে এ নিয়ে টানা তিন দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সরকারের পক্ষে মূল যুক্তি ছিল, বিষয়টি রাজনৈতিক। আদালত এ নিয়ে রায় দেওয়ার এখতিয়ার রাখে না। আর বিরোধীদের যুক্তি ছিল—পাঁচ সপ্তাহের জন্য পার্লামেন্ট স্থগিত করে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করেছেন। এতে আইনপ্রণেতারা সরকারকে জবাবদিহি করার ভূমিকা পালন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

আদালত মামলাটি এতটাই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেন যে সুপ্রিম কোর্টের মোট ১২ জন বিচারকের মধ্যে ১১ জনই শুনানিতে অংশ নেন।

মঙ্গলবার রায় ঘোষণার সময় সাতজন বিচারক উপস্থিত ছিলেন। আদালতের রায়ে বলা হয়, পার্লামেন্ট স্থগিত করার বৈধতার প্রশ্নে বিচারের এখতিয়ার রয়েছে আদালতের। রানির ভাষণের মাধ্যমে নতুন অধিবেশন চালুর কথা বলেছে সরকার। রীতি আছে এ জন্য তিন থেকে ছয় দিন পার্লামেন্ট স্থগিত রাখার। কিন্তু পাঁচ সপ্তাহের জন্য পার্লামেন্ট স্থগিত করার মাধ্যমে আইনপ্রণেতাদের দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে সাংবিধানিক আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে।

আদালত বলেছেন, রানির কাছে প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্ট স্থগিতের যে অনুরোধ করেছেন, সেটিও অবৈধ ও অকার্যকর। ফলে কার্যত পার্লামেন্ট স্থগিতের ঘটনা ঘটেনি বলে ধরে নিতে হবে। হাউস অব কমন্স এবং হাউস অব লর্ডসের স্পিকার চাইলে যেকোনো সময় অধিবেশন চালু করতে পারেন বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের প্রেসিডেন্ট লেডি হেইল বলেন, ‘আমাদের গণতন্ত্রের মৌলিক কাঠামোতে সরকারের সিদ্ধান্তের প্রভাব ছিল চরম।’ ১১ জন বিচারক সর্বসম্মতভাবে এ রায় দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

বিরোধী দল লেবার পার্টি, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি, গ্রিন পার্টি, লিবারেল ডেমোক্র্যাটসহ ব্রেক্সিটবিরোধী আইনপ্রণেতারা প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পদত্যাগ দাবি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বরিসের প্রতি পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে লেবার নেতা জেরেমি করবিন বলেন, ‘ইতিহাসের সবচেয়ে স্বল্পমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’

বিবিসির রাজনীতিবিষয়ক সহকারী সম্পাদক নরমান স্মিথ বলেন, এমন পরিস্থিতি আগে কখনো দেখেনি যুক্তরাজ্য। এ রায়ের পরিণতি আন্দাজ করা কঠিন।

জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন। সরকারের মন্ত্রীরা আগে থেকেই বলে আসছেন, আদালতের রায় মান্য করবে সরকার। তবে প্রধানমন্ত্রী বরিস রানির ভাষণ আয়োজনের লক্ষ্যে আবারও পার্লামেন্ট স্থগিত করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি। এবার তিনি রীতি মেনে কাজটি করতে পারেন, তবে অল্প কয়েক দিনের জন্য।