মানহানি মামলায় হারলেন ফ্রান্সে মি টু আন্দোলনের প্রণেতা মুলার

ফ্রান্সে হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলন শুরু করা সাংবাদিক সান্দ্রা মুলার। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
ফ্রান্সে হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলন শুরু করা সাংবাদিক সান্দ্রা মুলার। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

নিজেদের জীবনে ঘটে যাওয়া যৌন হয়রানির ব্যাপারে মুখ খুলতে ফ্রান্সে হ্যাশট্যাগ মি টু (#metoo) আন্দোলন শুরু করা সাংবাদিক সান্দ্রা মুলার এক মানহানির মামলায় হেরে গেছেন। টিভি চ্যানেলের সাবেক উধ্বর্তন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হ্যাশট্যাগে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছিলেন মুলার। অ্যারিক ব্রায়ান নামে ওই উধ্বর্তন কর্মকর্তা এরপর মুলারের বিরুদ্ধে পাল্টা মানহানি মামলা করেন।

বিবিসির খবরে জানা যায়, এ মামলায় হেরে যাওয়ায় ২২ হাজার ডলার জরিমানা দিতে হবে মুলারকে। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
রায়ের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মুলার গতকাল বুধবার বলেন, ‘আজ আমি হেরে গেছি। তবে অন্য নারীরা কিন্তু জিতেছেন।’

২০১৭ সালে ‘#ব্যালেন্সটোনপর্ক’ (‘শূকরের ওপর ইঁদুর’) নামে একটি হ্যাশট্যাগ তৈরি করেছিলেন সান্দ্রা মুলার। হ্যাশট্যাগের শুরুতেই তাঁর সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার যৌন হয়রানিমূলক আচরণের কথা লেখেন। সেখানে ছিল সাবেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা অ্যারিক ব্রায়ানের কথা। মুলার লেখেন, প্রথম দেখেই ওই কর্মকর্তা নাকি বলে উঠেছিলেন, মুলার তাঁর পছন্দের নারীদের মতো। এরপরই অশালীনভাবে তিনি মুলারের বক্ষদেশের প্রশংসাও করেন।

আদালত মুলারকে ২০১৭ সালে পোস্ট করা এ টুইটটি মুছে ফেলার আদেশ দিয়েছেন। মুলারকে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে আদালতের জারি করা বিবৃতি প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। মুলারের আইনজীবী ফ্রান্সিস স্পিনার এ রায় ‘সেকেলে’ বলে মন্তব্য করেছেন।

মে মাসে এই মামলার শুনানি চলে। সেখানে ব্রায়ানের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ব্রায়ান তাঁর আনাড়ি বা বেমানান রসিকতার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। ‘নির্দোষ রসিকতার’ মাধ্যমে কাউকে হয়রানি করার কথা কখনো স্বীকার করেননি তিনি। ব্রায়ানের আইনজীবী মেরি বার্গুবুরু আদালতে জানান, সান্দ্রা মুলারকে পছন্দ করতেন। তিনি মজার ছলে মুলারকে কথাগুলো বলেছিলেন। মেরি আরও বলেন, ‘এমন মজা করার অধিকার ব্রায়ানের আছে।’

শুনানিতে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছিলেন মুলার। তিনি বলেন, এই ‘অবমাননাকর’ ঘটনা তাঁকে সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলন শুরু করতে প্ররোচিত করেছিল। তিনি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করে বলেন, তাঁর টুইটগুলো যৌন হয়রানির শিকার অন্য নারীদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে উত্সাহী করেছে। তিনি বলেন, যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দরকার।

মুলার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আইনজীবীর সাহায্য নিয়ে আমি এই লড়াইয়ের শেষ দেখে ছাড়ব। আশা করছি, যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কীভাবে লড়াই করতে হয়, মামলাটি তার একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।’