কাশ্মীরি-বিড়ম্বনা, অজিত দোভাল ফের উপত্যকায়

অচলাবস্থা কাশ্মীরে। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে তোলা। ছবি: এএফপি
অচলাবস্থা কাশ্মীরে। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে তোলা। ছবি: এএফপি

পাঁচ সপ্তাহ পর ফের ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর গেলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় তিনি শ্রীনগর পৌঁছান। এবারের সফর কত দিনের জন্য, সরকারিভাবে সে বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। গত ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত করে তার বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা প্রত্যাহারের পর পরিস্থিতির সামাল দিতে দোভাল টানা ১১ দিন উপত্যকায় কাটিয়েছিলেন।

দোভালের দ্বিতীয় দফার এই সফর ঠিক সেই সময়, যখন জাতিসংঘে ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীরা কাশ্মীর নিয়ে মুখোমুখি বাগ্‌যুদ্ধে অবতীর্ণ। কাল শুক্রবার, জাতিসংঘের সাধারণ সভার অধিবেশনে দুই প্রধানমন্ত্রীই ভাষণ দেবেন। সেই ভাষণে ভারতের দিক থেকে যেমন ‘সীমান্তপারের সন্ত্রাস’ নিয়ে পাকিস্তানকে তুলাধোনা করা হবে, তেমনি ‘অত্যাচারিত ও অবরুদ্ধ’ কাশ্মীরের কাহিনি তুলে ধরে পাকিস্তানও দাবি করবে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের। দুই দেশের সম্ভাব্য বাগ্‌যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় উপত্যকা যাতে বেসামাল না হয়, তা নিশ্চিত করা দোভালের প্রাথমিক লক্ষ্য হলেও মূল উদ্দেশ্য আরও একবার সরেজমিনে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া।

সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ করার পর ৫০ দিন অতিক্রান্ত। এই দীর্ঘ সময়ে এক দিনের জন্যও উপত্যকা স্বাভাবিক হয়নি। সরকারি দাবি যা–ই হোক না কেন, ঘটনা হলো উপত্যকায় অঘোষিত কারফিউ এখনো অব্যাহত। স্কুল-কলেজ খোলা থাকলেও পড়ুয়ারা গরহাজির। অফিসে হাজিরা ক্ষীণ। দিনরাত নিরাপত্তারক্ষীদের টহল অবিরাম। ধরপাকড়ও অব্যাহত। রাজনৈতিক সব নেতা কারাবন্দী। ছোটখাটো বিক্ষোভের খবরও শোনা যাচ্ছে। এই অবস্থা আরও কত দিন চলবে, তা অজানা। আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সরকারি সিদ্ধান্ত রূপায়িত করার কথা। তত দিন পর্যন্ত পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু তারপরও যে সবকিছু স্বাভাবিক হবে, সেই নিশ্চয়তা সরকারের কেউ দিতে পারছে না। অথচ চাপ বাড়ছে।

কাশ্মীর নিয়ে ‘কূটনৈতিক সাফল্যে’ ভারত উল্লসিত হলেও বেশ কয়েকটি বিষয় সাউথ ব্লককে ভাবাচ্ছে। যেমন কাশ্মীর সমস্যা ‘দ্বিপক্ষীয়’ মেনে নেওয়া সত্ত্বেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একাধিকবার ‘মধ্যস্থতার’ সুপারিশ। গতকাল ট্রাম্প বলেছেন, কাশ্মীরি জনতার জীবনযাত্রার উন্নতি ঘটাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণ করুন। এ মন্তব্যের মধ্য দিয়ে দুটি বিষয় স্পষ্ট। প্রথমত, ভারত যা–ই দাবি করুক, কাশ্মীরের জনজীবন স্বাভাবিক বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে না। দ্বিতীয়ত, ট্রাম্প চাইছেন, মোদি আর সময় নষ্ট না করে দ্রুত তাঁর প্রতিশ্রুতি পালন করুন।

অজিত দোভাল
অজিত দোভাল

যুক্তরাষ্ট্রের এই মনোভাবের পাশাপাশি ভারতকে অবাক করেছে যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টির আচরণ। গতকাল ব্রাইটনে দলীয় সম্মেলনে তারা এক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫(ক) ধারা বিলোপের জন্য ভারতের নিন্দা করে সেই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কাশ্মীরি জনগণের অধিকার রয়েছে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের। আত্মনিয়ন্ত্রণের সেই অধিকার তাদের দেওয়া হোক। সে জন্য অবিলম্বে সেখানে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক পাঠানো হোক।

যুক্তরাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের এই মনোভাবে ভারত হতবাক। জাতিসংঘের সাধারণ সভার সম্মেলনের ঠিক আগে এই বিরুদ্ধ মনোভাব অবশ্যই এক বড় ধাক্কা। দেশেও এমনই এক ধাক্কা দিয়েছেন বিরোধী কংগ্রেস নেতা গোলাম নবী আজাদ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ছয় দিন উপত্যকা সফর শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, গোটা রাজ্যে গণতন্ত্রের চিহ্নমাত্র নেই। ৫ আগস্ট থেকে রাজ্যের প্রতিটি মানুষ ভয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছে। শাসক দলের ১০০–২০০ সমর্থক ছাড়া সবাই অখুশি ও ক্ষুব্ধ। চারদিকে ভয়ের আবহ। এমন প্রশাসনিক ভীতি পৃথিবীর আর কোথাও নেই। পানি, বিজলি অথবা যেকোনো বিষয় নিয়ে কিছু অভিযোগ করতে গেলে মানুষকে শুনতে হচ্ছে, কোন জেলে যেতে চাও বলো, সেখানেই পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আজাদ বলেন, বহু জায়গায় তিনি যেতে চেয়েছিলেন। অথচ ১০ শতাংশ স্থানেও যেতে দেওয়া হয়নি।

কাশ্মীর নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত ‘অভ্যন্তরীণ’ হলেও এই রাজ্যের পরিস্থিতি ক্রমেই ‘আন্তর্জাতিক উদ্বেগে’ পরিণত হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তুলতে না পারলে উপত্যকার ভাগ্য কোন দিকে এগোবে, তা বলা কঠিন। কূটনৈতিক সাফল্যের পাশাপাশি উদ্বেগের উপস্থিতিও অনস্বীকার্য।