তাহরির স্কয়ার বন্ধ করে দিলেন সিসি

তাহরির স্কয়ারে প্রবেশের সব পথ (লাল রং) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ছবি: গুগল ম্যাপ থেকে নেওয়া
তাহরির স্কয়ারে প্রবেশের সব পথ (লাল রং) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ছবি: গুগল ম্যাপ থেকে নেওয়া

মিসরের রাজধানী কায়রোয় তাহরির স্কয়ার বন্ধ করে দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল–সিসি। গত শুক্রবার তাহরির স্কয়ারে প্রবেশের সব বন্ধ করে দেওয়া হয়। মিসরের তরুণদের আন্দোলন দমাতে সিসি এ উদ্যোগ নিয়েছেন।

আন্দোলনকারী তরুণেরা জানিয়েছেন, তাঁরা আবারও তাহরির স্কয়ারে আন্দোলন শুরু করবেন।

গত সপ্তাহে কঠোর আন্দোলনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এক দিনই গ্রেপ্তার করা হয় কয়েক শ লোককে। আর সপ্তাহজুড়ে গ্রেপ্তার মানুষের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। তবে সরকারি কৌঁসুলিদের দাবি, গ্রেপ্তারের সংখ্যা হাজার। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, মিসরের কারাগারের এখন ৬০ হাজার রাজনৈতিক কর্মী বন্দী আছেন।

গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, গত শুক্রবার বিকেল থেকে পুলিশ তাহরির স্কয়ারের প্রবেশপথগুলোতে ব্যারিকেড দেয়। তাহরির স্কয়ারে প্রবেশের সাবওয়েগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনটি মেট্রো স্টেশন দিয়ে তাহরির স্কয়ারের প্রবেশের পথগুলো বন্ধ করে দেয় পুলিশ। তবে তাহরির স্কয়ার বন্ধ হলেও দেশের অন্যান্য স্থানে বিক্ষোভ চলছে। গ্রেপ্তার, ধরপাকড়ও চলছে। এরই মধ্য বন্ধ করে দেওয়া হয় ফেসবুক, টুইটারসহ সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো। বিক্ষোভ দমনে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

মিসরের রাজধানী কায়রোর তাহরির স্কয়ার। ছবিটি ২৬ সেপ্টেম্বর তোলা। ছবি: রয়টার্স
মিসরের রাজধানী কায়রোর তাহরির স্কয়ার। ছবিটি ২৬ সেপ্টেম্বর তোলা। ছবি: রয়টার্স

এদিকে তাহরির স্কয়ার বন্ধ করে দেওয়ায় বিক্ষোভ দমন করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা বলছেন, বিক্ষুব্ধ তরুণদের যে ঢল নেমেছে তাতে নিশ্চিত সিসি আগের মতো নিশ্চিন্তে গদিতে বসে রাজত্ব করতে পারবেন না। আন্দোলনকারী তরুণেরা জানিয়েছেন, তাঁরা আবারও তাহরির স্কয়ারে আন্দোলন শুরু করবেন।

তাহরির স্কয়ার বন্ধ হলেও সিসির সমর্থনে আলেকজান্দ্রিয়াসহ কয়েকটি শহরে মিছিল হয়েছে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশন শেষে গতকাল শনিবার দেশে ফেরেন প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল–সিসি। তিনি সাধারণ জনগণের উদ্দেশে বলেন, সেনাবাহিনীসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। আগে যা হয়েছে তা আর হবে না।

সিসির সমর্থনে কায়রোর নাসের সিটিতে মিছিল। ছবি: রয়টার্স
সিসির সমর্থনে কায়রোর নাসের সিটিতে মিছিল। ছবি: রয়টার্স

পুলিশের দুর্নীতির প্রতিবাদে ২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বরে তিউনিসিয়ার সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ বাওয়াজিজি নিজের গায়ে আগুন জ্বেলে আত্মাহুতি দেন। এরপর থেকে জন্ম আরব বসন্তের। ২০১১ সালে এর ঢেউ এসে লাগে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের মিসরেও। ক্ষমতার অপব্যবহার ও পুলিশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মিসরে বিক্ষোভ শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে সংগঠিত হয়ে ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি কায়রোর তাহরির স্কয়ারে লাখো মানুষ মোবারক সরকারের পতনের আন্দোলন শুরু করে। ১৮ দিন চলার পর ১১ ফেব্রুয়ারি মোবারক পদত্যাগ করেন। অবসান হয় ৩০ বছর ধরে চলা মোবারকের শাসনের। এরপরই দেশটির শাসনক্ষমতা চলে যায় সামরিক বাহিনীর হাতে। মিসরের ইতিহাসে ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়। ইসলামপন্থী ব্রাদারহুড-সমর্থিত মোহাম্মদ মুরসি ক্ষমতায় আসেন। ২০১৩ সালে মুরসির কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেন সেনাপ্রধান জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসি। এখন মোবারকের চেয়েও কঠোর হস্তে দেশ শাসন করছেন সিসি। থানায় পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু, পুলিশের নির্বিচার গ্রেপ্তার, রহস্যজনকভাবে বিরোধী কর্মীদের গুম হওয়া নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার হয়ে ওঠে। তারা প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির শাসনের নিন্দা জানিয়ে আসছে। দীর্ঘ ছয় বছর পর ২০ সেপ্টেম্বর রাতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন মিসরের জনগণ। সিসির পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নামেন হাজারো তরুণ। সিসিকে ক্ষমতাচ্যুত না করা পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তাঁরা। তরুণদের এ বিক্ষোভে অংশ নেন মানবাধিকারকর্মী, মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী, সাংবাদিকসহ নানা পেশার মানুষ। সেই কায়রোয় তাহরির স্কয়ার এবার বন্ধ করে দিলেন সিসি।