এবার মার্কিন বান্ধবী নিয়ে বিপাকে বরিস জনসন

মার্কিন ব্যবসায়ী জেনিফার আরকিউরি। ছবি: ইউটিউব থেকে নেওয়া
মার্কিন ব্যবসায়ী জেনিফার আরকিউরি। ছবি: ইউটিউব থেকে নেওয়া

সমস্যা যেন পিছুই ছাড়ছে না ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের। ব্রেক্সিট নিয়ে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে ব্রিটেন। ব্রেক্সিটের পর প্রধানমন্ত্রী জনসনের সাবেক এক বান্ধবীকে ঘিরে বিতর্ক চলছে। জনসন লন্ডনের মেয়র থাকার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে বান্ধবীকে সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ব্যাপারটি খতিয়ে দেখছে দেশটির পুলিশ।

বরিস জনসন অবশ্য কোনো ধরনের অনিয়মের কথা অস্বীকার করেছেন। তাঁর অফিস থেকে বলা হয়েছে, পুরো অভিযোগ আসলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

‘গার্ডিয়ান’-এর খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী জনসনের কথিত বান্ধবী জেনিফার আরকিউরি একজন মার্কিন ব্যবসায়ী। তাঁর একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আছে। বরিস জনসনের এই প্রতিষ্ঠানটিকে বিভিন্ন আর্থিক অনুদান দেওয়ার এবং জেনিফার আরকিউরিকে সরকারি খরচে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণে নিয়ে যেতে তাঁর অফিসকে ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।

লন্ডনের মেয়র এবং তাঁর অফিসের অন্য কর্মকর্তাদের কাজের তদারকি করে গ্রেটার লন্ডন অথোরিটি। ওই অথোরিটি জানিয়েছে, তারা বিষয়টি জানিয়ে ইনডিপেনডেন্ট অফিস ফর পুলিশ কন্ডাক্ট বা আইওপিসির কাছে চিঠি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছেও একটি চিঠি পাঠিয়েছে গ্রেটার লন্ডন অথোরিটি। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘২০০৮ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত যখন আপনি লন্ডনের মেয়র ছিলেন, তখন জেনিফার আরকিউরির সঙ্গে আপনার বন্ধুত্ব ছিল। এ কারণে আপনি তাঁকে বিভিন্ন ব্যবসা মিশনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন এবং তাঁকে বিভিন্ন স্পনসরশিপের মাধ্যমে অর্থ দিয়েছেন, যেগুলো তাঁর বা তাঁর প্রতিষ্ঠানের পাওয়ার কথা ছিল না।’

এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও তাঁর বান্ধবী মার্কিন ব্যবসায়ী জেনিফার আরকিউরি। ছবি: ইউটিউব থেকে নেওয়া
এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও তাঁর বান্ধবী মার্কিন ব্যবসায়ী জেনিফার আরকিউরি। ছবি: ইউটিউব থেকে নেওয়া

বান্ধবীকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা প্রথম জানা যায় গত সপ্তাহে ‘সানডে টাইমস’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, জেনিফার আরকিউরি লন্ডনের তৎকালীন মেয়র বরিস জনসনের ব্যবসা মিশনের সদস্য হিসেবে বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং তাঁর কোম্পানিকে কয়েক হাজার পাউন্ডের অনুদানও দেওয়া হয়। জেনিফারের সঙ্গে দেখা করতে নিয়মিত তাঁর ফ্ল্যাটে যেতেন বরিস। আর জেনিফার বরিসকে অন্যর কাছে পরিচয় করিয়ে দিতেন ‘আমার অন্যতম একজন বন্ধু’ হিসেবে।

একসময় লন্ডনের মেয়র ছিলেন বরিস জনসন। ওই সময় মার্কিন একজন নারী ব্যবসায়ীকে বিশেষ কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলেন জনসন। ব্রিটিশ গণমাধ্যমের খবর, জেনিফার আরকিউরি একজন মার্কিন নাগরিক। তাঁর সঙ্গে জনসনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। এর ভিত্তিতে বরিসের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হতে পারে। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। মেয়র পদের অপব্যবহার করার জন্য বরিসের বিরুদ্ধে তদন্ত করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখছেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা।

কিছু কিছু গণমাধ্যমের খবর, নিজের বন্ধুদের কাছে বরিস জনসনের সঙ্গে ‘সম্পর্কে’র কথা নাকি স্বীকার করেছিলেন জেনিফার ।

অভিযোগটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বর্ণনা করছে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট। তারা বলছে, বরিস জনসন যা করেছেন, তা সব নিয়ম মেনে এবং স্বাভাবিকভাবেই করা হয়েছে। সরকারের একটি ঊর্ধ্বতন সূত্র বলছে, অভিযোগটি এমন এক সময় তোলা হচ্ছে, যখন কনজারভেটিভ পার্টির সম্মেলন শুরু হচ্ছে। এটি যে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ তা স্পষ্ট।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেনিফার একজন ‘উদ্যোক্তা’, ‘সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট’ এবং ‘প্রোডিউসার’। তিনি প্রথম কাজ শুরু করেন ‘রেডিও ডিজনি’র ডিজে হিসেবে। এরপর তিনি ছবি প্রযোজনা এবং পরিচালনার কাজেও যুক্ত ছিলেন। তিনি লন্ডনে ‘দ্য ইনোটেক নেটওয়ার্ক’ নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পানির মাধ্যমেই লন্ডনের তৎকালীন মেয়রের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তৈরি হয়।

সম্প্রতি আদালতে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছেন বরিস জনসন। পাঁচ সপ্তাহের জন্য পার্লামেন্ট সাসপেন্ড করার নির্দেশ বেআইনি বলে ঘোষণা করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। ফলে নৈতিকভাবে জনসনের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন বিরোধীরা। পাশাপাশি, কিছুতেই ব্রেক্সিট-জট ছাড়তে পড়ছেন না তিনি। প্রায় চুক্তিহীনভাবেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যেতে চলেছে ব্রিটেন। এমন অবস্থায় জনসনের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ ব্রিটিশ শাসকদলের জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে।