দুর্নীতির অভিযোগ এড়ানোর শেষ চেষ্টা নেতানিয়াহুর

নির্বাচনে সমান সমান অবস্থানে আছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও বেনি গান্টজ। ছবি: রয়টার্স
নির্বাচনে সমান সমান অবস্থানে আছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও বেনি গান্টজ। ছবি: রয়টার্স

চেষ্টা করেও নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেননি ইসরায়েলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বেনি গান্টজের সঙ্গে তাঁর লড়াই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। তবে নেতানিয়াহুকে শুধু নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামালেই চলছে না। নিজেকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্ত করার লড়াইটাও একই সঙ্গে চালাতে হচ্ছে তাঁকে। আর সেই লড়াইয়ের শেষ ধাপটা শুরু হয়েছে আজ বুধবার। রায় ঘোষণার আগে শুনানিতে নেতানিয়াহুর হয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করতে শুরু করেছেন তাঁর আইনজীবীরা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার দিনব্যাপী এই শুনানির প্রথম দিন ছিল আজ। ইসরায়েলের অ্যাটর্নি জেনারেল আভিচাই মেন্ডেলব্লিট নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির তিনটি অভিযোগ এনেছেন। শুনানি শেষে চলতি বছরের শেষ দিকে চূড়ান্ত রায় ঘোষণার কথা রয়েছে।

আজ শুনানির প্রথম দিন শেষে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের বাইরে নেতানিয়াহুর এক আইনজীবী অমিত হাদাদ বলেছেন, ‘আমরা এমন কিছু প্রমাণ উপস্থাপন করেছি, যেগুলোর মধ্যে কিছু সম্পূর্ণ নতুন এবং কিছু সবাই জানে। আমরা বিশ্বাস করি, শুনানি শেষে সব অভিযোগই খারিজ হয়ে যাবে।’

গত ফেব্রুয়ারিতে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, জালিয়াতি ও বিশ্বাসভঙ্গের তিনটি অভিযোগ আনেন মেন্ডেলব্লিট। নেতানিয়াহু অবশ্য শুরু থেকেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। বরং বামপন্থী রাজনৈতিক দল ও সাংবাদিকদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন নেতানিয়াহু।

দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বাঁচতে শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: রয়টার্স
দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বাঁচতে শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: রয়টার্স

নেতানিয়াহুই ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যাঁকে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দুর্নীতির অভিযোগে শুনানিতে অংশ নিতে হচ্ছে। এর আগে ২০০৮ সালে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইহুদ ওলমার্টের বিপক্ষে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগ করেও অবশ্য সাজা এড়াতে পারেননি তিনি। দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১৬ মাস জেল খাটতে হয় ওলমার্টকে। কারাবরণ শেষে ২০১৭ সালে জেল থেকে ছাড়া পান তিনি।

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ওঠা মূল দুটি অভিযোগের একটি হলো, ইসরায়েলের ইয়েদিয়ত আহারোনত পত্রিকাকে নিজের পক্ষে খবর প্রচার করতে বলেন নেতানিয়াহু। বিনিময়ে প্রতিদ্বন্দ্বী পত্রিকার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে ইয়েদিয়ত আহারোনতকে সাহায্য করার আশ্বাস দেন তিনি। আর অপর অভিযোগটি হলো, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত হলিউড মোগল বলে পরিচিত আহনন মিলচ্যানসহ বিভিন্ন ভক্তের কাছ থেকে তিনি অন্তত ২ লাখ ৮৩ হাজার ডলার মূল্যের ‘উপহার’ গ্রহণ করেছেন। জেরুজালেম পোস্টের এক খবরে বলা হয়, উপহারগুলোর বেশির ভাগ ছিল শ্যাম্পেন ও সিগার। মিলচ্যানকে মার্কিন ভিসা পেতে সাহায্য করার বিনিময়ে এই ঘুষ নেন তিনি।

দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলেই যে নেতানিয়াহুকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা ইসরায়েলের সংবিধানে নেই। তবে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এমনিতেই শঙ্কার মুখে পড়ে গেছে। নির্বাচনে সাবেক সামরিক প্রধান বেনি গান্টজের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেননি চার মেয়াদে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা নেতানিয়াহু। নেতানিয়াহুকে আটকাতে গান্টজকে সমর্থন দেওয়ার ঘোষণাও দিয়ে রেখেছে নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইসরায়েলি-আরব জোট।