অভিবাসী ঠেকাতে সীমান্তে সাপ বা কুমিরভর্তি চৌবাচ্চা তৈরি করতে বলেছিলেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ঠেকাতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এতটাই অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছিলেন যে, মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে বিদ্যুতায়িত দেয়াল বানাতে চেয়েছিলেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, সীমান্ত সুরক্ষিত করতে সাপ বা কুমিরভর্তি চৌবাচ্চা নির্মাণের কথাও বলেছিলেন তিনি। সীমান্তে কোনো অনুপ্রবেশকারীকে দেখতে পেলে তার পায়ে গুলি করার কথাও বলেছিলেন ট্রাম্প।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মার্চে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ওভাল হাউসে দেশটির উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ট্রাম্প এসব কথা বলেন। অভিবাসীদের ঠেকাতে ট্রাম্প এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন যে, বৈঠকের পরদিন দুপুরের মধ্যে মেক্সিকোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত বন্ধেরও নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। তবে বৈঠকে উপস্থিত অন্য নেতারা ট্রাম্পের এসব প্রস্তাবে সায় দেননি। তাঁরা আশঙ্কা করেছিলেন, ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের ফলে দুই দেশের অর্থনীতিতেই বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকা অন্তত ১২ জন নীতিনির্ধারকের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে নিউইয়র্ক টাইমস এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ট্রাম্পকে শান্ত করতে আধা ঘণ্টার বৈঠকটি শেষ হতে দুই ঘণ্টা লেগেছিল বলেও জানিয়েছেন ওই নীতিনির্ধারকেরা।

নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ওভাল হাউসের ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও, দেশটির তৎকালীন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবিষয়ক সেক্রেটারি কারস্টেন নিলসেন, তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধান কেভিন ম্যাকআলিনান ও ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিমালা তৈরির সঙ্গে জড়িত স্টিফেন মিলার। অভিবাসন ইস্যু নিয়ে ‘নিষ্ক্রিয় মনোভাব’ দেখানোয় বিশেষ করে নিলসেন ও পম্পেওর ওপর বেশি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল, অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়াই একমাত্র সমাধান। নিলসেন ট্রাম্পকে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন, দেয়াল বানিয়েও এই সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হবে না। কিন্তু ট্রাম্প তাঁর অবস্থানে অনড় ছিলেন। এমনকি ট্রাম্পের জামাতা জার্ড কুশনারও নিলসেনের বক্তব্যকে সমর্থন করেন।

সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তাবে সায় না দেওয়ায় বৈঠকে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছিলেন, ‘তোমরা কেবল তোমাদের মেক্সিকান বন্ধুদের কথাই ভাবছ। আমি অনেক সহ্য করেছি। আগামীকাল দুপুরের মধ্যেই আমি সীমান্তে দেয়াল চাই।’ এমনকি ট্রাম্প নাকি বৈঠকে উপস্থিত নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশে চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘তোমরা আমাকে বোকায় পরিণত করছ।’

পরবর্তী সময়ে ট্রাম্প নিজেও এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করে নিয়েছিলেন, সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের কথা তিনি সত্যিই ভেবেছিলেন। কিন্তু সেই ভাবনার বাস্তবায়ন করলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে পারত। ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘সমস্যাটা হলো, আমাদের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সীমান্তে যদি এক লাখ সেনাও দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলেও তাদের কিছু করার উপায় নেই।’