উত্তেজনার মধ্যেই সি-মোদির সৌহার্দ্য

দুই দিনের সফরে ভারতে পৌঁছেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং (বাঁয়ে)। তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কুশল বিনিময়ের একপর্যায়ে দু্ই নেতা একে অন্যের হাত উঁচিয়ে ধরেন। গতকাল বিকেলে তামিলনাড়ু রাজ্যের চেন্নাইয়ের উপকূলীয় নগরী মমল্লাপুরমে।  ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
দুই দিনের সফরে ভারতে পৌঁছেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং (বাঁয়ে)। তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কুশল বিনিময়ের একপর্যায়ে দু্ই নেতা একে অন্যের হাত উঁচিয়ে ধরেন। গতকাল বিকেলে তামিলনাড়ু রাজ্যের চেন্নাইয়ের উপকূলীয় নগরী মমল্লাপুরমে। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেই দুই দিনের সফরে ভারতে এলেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। গতকাল শুক্রবার বেলা দুইটা নাগাদ চেন্নাই বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল বানোয়ারিলাল পুরোহিত ও মুখ্যমন্ত্রী পালানিস্বামী। সি নামার ঠিক আগে তাঁকে স্বাগত জানিয়ে টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

গতকাল বিকেলেই প্রেসিডেন্ট সি সড়কপথে চলে যান চেন্নাইয়ের দক্ষিণে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে সমুদ্র উপকূলবর্তী মন্দির নগরী মমল্লাপুরমে, যার আগের নাম ছিল মহাবলীপুরম। এখানেই সিকে সৌহার্দ্যের আবেশে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী মোদি। তাঁর পরনে ছিল তামিলনাড়ুর ঐতিহ্যময় সাদা ধুতি, শার্ট ও চাদর। সির পরনে আনুষ্ঠানিকতার বিন্দুমাত্র ছোঁয়া ছিল না। ছিল সাদা ফুলহাতা শার্ট ও কালো ট্রাউজার্স। স্বাগত জানানোর পর দুই নেতা কয়েক মিনিট ওখানেই নিজেদের মধ্যে কথা বলেন। এই নগরে তিনটি প্রাচীন ও পৌরাণিক স্থাপত্য, পঞ্চরথ, শোর মন্দির ও ভগবান শিবের করুণা পেতে অর্জুনের কৃচ্ছ্রসাধনস্থল চীনা প্রেসিডেন্টকে ঘুরিয়ে দেখান মোদি। স্থাপত্যের ব্যাখ্যা করেন। বঙ্গোপসাগরের কিনারায় সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীতে স্থাপিত পল্লবরাজ আমলের এই মন্দির নগরে সির সম্মানে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। এখানেই চীনা প্রেসিডেন্টের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়, শনিবারের বৈঠকের আগে যা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

সি-মোদির একান্ত দ্বিপক্ষীয় আলোচনা আজ শনিবার। চেন্নাইয়ের তাজ ফিশারম্যানস কোভ রিসোর্টে দুই নেতা একান্তে কথা বলবেন। তাঁদের আলোচনার পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদে​ষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির দুই শীর্ষ নেতা ওয়াং ই ও ইয়াং জিয়েচি। ওই বৈঠকের পরেই প্রেসিডেন্ট সি সদলে চেন্নাই থেকে নেপালে চলে যাবেন।

সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করে কাশ্মীরের বিশেষ ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে দ্বিখণ্ডিত করায় পাকিস্তানকে ক্ষুব্ধ করার পাশাপাশি চীনকেও অখুশি করেছে। জাতিসংঘে তার প্রতিফলনও দেখা গেছে। চীন পুরোপুরি পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে ভারতের সমালোচনা করেছে। সির সফর শুরুর ঠিক আগে চীন গিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করার চেষ্টা করেছেন। বেইজিং–ইসলামাবাদ যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক চুক্তি, জাতিসংঘের সনদ ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করেই দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মীর প্রশ্নের মীমাংসা করতে হবে। এর পাল্টা জবাবে ভারতও জানিয়েছে, কাশ্মীর নিয়ে অন্য কোনো দেশের কথা বলার কোনো এখতিয়ার নেই। কারণ, কাশ্মীর একান্তভাবেই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

>

অস্বস্তি ও বিপরীতধর্মী অবস্থানের মধ্যে সি–মোদির আলোচনা কেমন হতে পারে, সেটাই এখন আগ্রহের বিষয়।

এই অস্বস্তি ও পারস্পরিক বিপরীতধর্মী অবস্থানের মধ্যে দুই নেতার আলোচনা কী ও কেমন হতে পারে, সেটাই আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানকে চীন অগ্রাহ্য করতে পারে না। আবার একই রকম ভারতের বিপুল বাজারকে অস্বীকার করাও তার পক্ষে সম্ভব নয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক টানাপোড়েন যখন তুঙ্গে। কাশ্মীরের ভাগ্যের সঙ্গে চীনও জড়িত। সেই অংশ জড়িত যেখান থেকে চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডরের শুরু। সংঘাতের আবহে সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তার কীভাবে করা সম্ভব, দুই নেতা সেই লক্ষ্যে কতটা সফল হন, আজকের বৈঠক শেষে তা বোঝা যাবে।

সির চেন্নাই শীর্ষ বৈঠক ইউহান বৈঠকের দ্বিতীয় ভাগ। ডোকলামে ভারত-চীন সেনা সমাবেশ ও উত্তেজনার আবহে সেই বৈঠক হয়েছিল। এবার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে কাশ্মীর নিয়ে। এই বৈঠক আনুষ্ঠানিক নয়। বেসরকারি। তাই ইউহানের মতো এই বৈঠকেও কোনো যৌথ বিবৃতি জারি করা হবে না। কোনো সমঝোতা স্মারকও সই হবে না। যা হবে, তা দুই নেতার মধ্যে রাষ্ট্রীয় স্তরে ​কিছু বোঝাপড়া। এই বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের প্রকাশ্য মন্তব্য হলো, মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু তা যাতে মতানৈক্য হয়ে বিবাদে পরিণত না হয়, সেটা দেখাই প্রকৃত লক্ষ্য।