হাগিবিসের ক্ষয়ক্ষতি গুনতে হচ্ছে জাপানকে

জাপানের মূল দ্বীপ হোনশুর ওপর আঘাত হানা গতকালের শক্তিশালী সামুদ্রিক ঝড় টাইফুনে নিহত মানুষের সংখ্যা এখন ২৬–এ দাঁড়িয়েছে। বিস্তৃত এলাকাজুড়ে বেশ কয়েকটি নদীর পানি উপচে পড়ায় বন্যা ও ভূমিধসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে জাপানের প্রধান দ্বীপ হোনশুর পূর্বাঞ্চলকে। জাপান, ১৩ অক্টোবর। ছবি: এএফপি
জাপানের মূল দ্বীপ হোনশুর ওপর আঘাত হানা গতকালের শক্তিশালী সামুদ্রিক ঝড় টাইফুনে নিহত মানুষের সংখ্যা এখন ২৬–এ দাঁড়িয়েছে। বিস্তৃত এলাকাজুড়ে বেশ কয়েকটি নদীর পানি উপচে পড়ায় বন্যা ও ভূমিধসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে জাপানের প্রধান দ্বীপ হোনশুর পূর্বাঞ্চলকে। জাপান, ১৩ অক্টোবর। ছবি: এএফপি

জাপানের মূল দ্বীপ হোনশুর ওপর আঘাত হানা গতকাল শনিবারের শক্তিশালী সামুদ্রিক ঝড় টাইফুনে নিহত মানুষের সংখ্যা এখন ৩৩–এ দাঁড়িয়েছে। টোকিও মেট্রোপলিটন এলাকা ও আশপাশের কয়েকটি জেলায় প্রচণ্ড বেগে আঘাত হানা সেই ঝড়ের পর নিহত মানুষের এই হিসাব ছাড়াও আরও ২০ জনের কোনো খোঁজ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

বিস্তৃত এলাকাজুড়ে বেশ কয়েকটি নদীর পানি উপচে পড়ায় বন্যা ও ভূমিধসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে জাপানের প্রধান দ্বীপ হোনশুর পূর্বাঞ্চলকে। জাপানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ১০০ জনের বেশি লোক ঝড়ে আহত হয়েছেন এবং রাজধানী টোকিওর গণপরিবহনব্যবস্থা ফের চালু হলেও বন্যাকবলিত অনেক এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা এখনো ফিরে আসেনি।

গতকাল সন্ধ্যায় টাইফুন ‘হাগিবিস’ আঘাত হানার আগে হোনশু দ্বীপের ৬০ লাখের বেশি লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়েছিল। টোকিওর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে দিনের অধিকাংশ ফ্লাইটও বাতিল করা হয় এবং দ্রুতগতির রেলসহ পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য লাইনের রেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

গতকালের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে টোকিওর পার্শ্ববর্তী চিবা জেলাও অন্তর্ভুক্ত আছে। গত মাসে আরেক শক্তিশালী টাইফুন ফাক্সাইয়ের আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল সেখানে। গতকাল মূল ঝড় আঘাত হানার অল্প আগে চিবার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভেঙে পড়ে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার ঠিক আগে মাঝারি মাত্রার এক ভূমিকম্পও চিবাকে প্রকম্পিত করেছিল। একসঙ্গে এ রকম কয়েকটি দুর্যোগ জাপানের কোনো এলাকায় পর্যায়ক্রমে আঘাত হানা বিরল এক ঘটনা।

টাইফুন ‘হাগিবিস’ প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণে ক্রমে দানা বেঁধে জাপানের দিকে আসার খবর আগে থেকে প্রচার করা হলেও কতটা ব্যাপক আকার তা নিতে পারে, সে বিষয়ে সঠিক ধারণা অনেকেই করতে পারেননি। যেমন সামুদ্রিক ঝড়ের সঙ্গে আসা প্রচণ্ড বর্ষণ যে ব্যাপক এলাকা তলিয়ে দিতে পারে এবং এর কারণে নদীর পানি বাঁধ উপচে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে—এমনটা অনেকেই হিসাবে নেননি। তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তা পর্যাপ্ত ছিল না। এ কারণেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব জাপানকে এখন গুনতে হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির মোট পরিমাণ কতটা হতে পারে, সে বিষয়ে আনুমানিক কোনো হিসাব এখনো প্রকাশ করা হয়নি। সাধারণভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিশাল অঙ্কের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

জাপান সরকারের মুখপাত্র ও প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিহিদে সুগা আজ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ৩ লাখ ৭৬ হাজার বাড়িঘরে সকাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ–সংযোগ ছিল না এবং ১৪ হাজার বাড়িতে পানি সরবরাহ বন্ধ আছে।

ফিলিপাইনের ভাষা তাগালোগে ‘হাগিবিস’ শব্দের অর্থ হচ্ছে দ্রুতগতির। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর থেকে এর উৎপত্তি। পরে তা জাপানের দিকে অগ্রসর হয়। গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে শিজুওকা জেলার ইজু উপদ্বীপে জাপানি ভূখণ্ডের ওপর আঘাত হানার সময় এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪৪ কিলোমিটারের মতো। আজ সন্ধ্যায় হাগিবিস জাপানের হোনশু দ্বীপ অতিক্রম করে উত্তর-পূর্ব দিক বরাবর প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর দিয়ে এগিয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে।