কাজ আর জীবন, দুইয়ে মিলে সেরা কারা

কর্মজীবনের সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের সমন্বয় সাধন করাটা গুরুত্বপূর্ণ। ছবি: রয়টার্স
কর্মজীবনের সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের সমন্বয় সাধন করাটা গুরুত্বপূর্ণ। ছবি: রয়টার্স

একের পর এক কাজের চাপে ব্যক্তিগত জীবনে সময় বের করতে পারছেন না? আপনি তাহলে চাকরি নিয়ে ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসে চলে যেতে পারেন। কিন্তু এত দেশ থাকতে নেদারল্যান্ডস কেন? সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, কর্মজীবনের সঙ্গে পারিবারিক জীবনের সমন্বয়ের ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসই সবার সেরা।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) কর্তৃক প্রকাশিত সাম্প্রতিক ‘বেটার লাইফ ইনডেক্স’ এ এই তথ্য উঠে এসেছে। কোন দেশের মানুষ কতটা ভালো জীবনযাপন করছে, সেটিই উঠে এসেছে এই গবেষণায়। গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, পেশাদার জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যক্তিগত জীবনও উপভোগ করার সুবিধা সবচেয়ে বেশি পাচ্ছে টিউলিপ ফুলের জন্য বিখ্যাত দেশ নেদারল্যান্ডসের মানুষ। কর্মক্ষেত্রে খুব বেশি সময় ব্যয় করতে হয় না সেখানকার মানুষদের। ফলে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো কিংবা অবসর উপভোগের জন্য পর্যাপ্ত সময় পান তাঁরা। এতে করে কর্মক্ষেত্রেও থাকতে পারেন ফুরফুরে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরো নেদারল্যান্ডসের মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ সপ্তাহে ৫০ ঘণ্টার বেশি সময় কর্মক্ষেত্রে ব্যয় করেন। সপ্তাহে ৫০ ঘণ্টা কাজ করাকে এই প্রতিবেদনে অতিরিক্ত কাজ করা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

ওইসিডির এই ইনডেক্সে ৪০টি দেশ জায়গা পেয়েছে। ৪০টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ পয়েন্ট পেয়েছে নেদারল্যান্ডস। ১০ এর মধ্যে ৯ দশমিক ৫ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষস্থান দখল করেছে দেশটি। নেদারল্যান্ডসের ঠিক পরের স্থানেই আছে আরেক ইউরোপীয় দেশ ইতালি। পয়েন্টের ব্যবধানও খুব কম, ইতালি পেয়েছে ৯ দশমিক ৪ পয়েন্ট। ৯ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে আছে ডেনমার্ক। তালিকার সবচেয়ে তলানির দেশ দুটি হলো কলম্বিয়া ও মেক্সিকো।

তালিকার সেরা দশের প্রতিটি দেশই ইউরোপের। শীর্ষ তিন দেশের কথা তো বলাই হলো, শীর্ষ দশের বাকি সাতটি দেশ হলো- স্পেন, ফ্রান্স, লিথুনিয়া, নরওয়ে, বেলজিয়াম, জার্মানি ও সুইডেন। বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র এই তালিকায় আছে ২৭ নম্বরে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১১ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন অতিরিক্ত সময় কর্মক্ষেত্রে কাটিয়ে থাকেন।

কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করার কুফল সম্পর্কে বলতে গিয়ে ওইসিডি বলেছে, ‘দীর্ঘ সময় কাজ করলে ব্যক্তির স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় ও দুশ্চিন্তা বাড়ে। যত বেশি সময় মানুষ কর্মক্ষেত্রে দেবে, নিজের ও পরিবারের খেয়াল রাখার জন্য তত কম সময় পাবে।’

কোন দেশের মানুষ দৈনিক কত ঘণ্টা সময় অবসর ও নিজের যত্ন নেওয়ার পেছনে ব্যয় করে, সেটির উপাত্তও দিয়েছে ওইসিডি। সেই তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছে ইতালি। দেশটির মানুষেরা গড়ে দৈনিক সাড়ে ১৬ ঘণ্টা অবসর কাটায় এবং নিজের ও পরিবারের পেছনে ব্যয় করে। তালিকায় ইতালির পেছনে আছে যথাক্রমে ফ্রান্স, স্পেন ও ডেনমার্ক।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, বর্তমানের তুলনায় ২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়বে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৮ সালে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার ছিল ১৯ শতাংশ। ২০২২ সালে সেটি দাঁড়াবে ২৮ শতাংশে। যোগাযোগে সমন্বয় সাধনের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালে যন্ত্রের ব্যবহার ছিল ২৩ শতাংশ। ২০২২ সালে সেটি দাঁড়াবে ৩১ শতাংশে। প্রশাসনিক কাজেও ১৬ শতাংশ বেড়ে যন্ত্রের ব্যবহার দাঁড়াবে ৪৪ শতাংশে।