হংকংয়ে বিক্ষোভকারীদের 'ছেঁচে' ফেলার হুমকি

হংকংয়ে প্রায় চার মাস ধরে আন্দোলন চলছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
হংকংয়ে প্রায় চার মাস ধরে আন্দোলন চলছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

হংকংয়ের চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, চীনকে বিভক্ত করার প্রয়াস চালালে আন্দোলনকারীদের ‘শরীরটাকে ছেঁচে হাড় সব গুঁড়িয়ে’ দেওয়া হবে।

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিসিটিভির বরাত দিয়ে বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, গতকাল রোববার নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সি এ মন্তব্য করেন।

২২ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো চীনা প্রেসিডেন্ট নেপাল সফর করছেন। গত শনিবার থেকে সির নেপাল সফর শুরু হয়েছে। গতকালের বৈঠকে সি বলেন, ‘চীনকে বিভক্ত করার কোনো বাইরের তৎপরতাও নসাৎ করা হবে।’

বৈঠকে নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলি বলেন, তাঁর দেশে চীনবিরোধী কোনো তৎপরতা চলতে দেওয়া হবে না।

রোববার হংকংয়ে বেশ কয়েকটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশে দাঙ্গা পুলিশ হামলা চালালে তাদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। এতে বেইজিংপন্থী হিসেবে পরিচিত বেশ কিছু গণপরিবহন স্টেশন এবং দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বেশ কয়েকটি পাড়া-মহল্লার লোকজন জানান, সেখানে মিছিল বের হয়েছিল। রোববার দুপুরের মধ্যে হংকংয়ের এমটিআর মেট্রোর কমপক্ষে ২৭টি স্টেশন বন্ধ হয়ে যায়।

পুলিশ বলছে, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে তারা ‘ন্যূনতম শক্তি’ ব্যবহার করেছে। তবে টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা গেছে, সপ্তাহান্তে শপিং সেন্টারে এসে ক্রেতারা বিশৃঙ্খলার কবলে পড়েছিলেন। কর্মকর্তাদের কয়েকজনকে চিৎকার করতে করতে একটি বিপণিকেন্দ্রের দিকে ছুটে যেতে দেখা যায়। সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে বোঝা যায়, তাঁরা আহত হয়েছিলেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, কেনাকাটা করতে আসা লোকজনের মধ্যে যাঁরা প্রতিবাদকারীদের পক্ষ নেন, দাঙ্গা পুলিশ তাদের জোর করে শপিং মল থেকে বের করে দেয়।

কর্তৃপক্ষ বলছে, মং কোক থানায় পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। এক পুলিশ কর্মকর্তার ঘাড়ে গুলি করা হয়েছে। দক্ষিণ চীনের সংবাদপত্র মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, আহত পুলিশ কর্মকর্তা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

রোববার রাতে বিক্ষোভকারীদের একটি দল হংকংয়ের বিখ্যাত লায়ন রকের কাছে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে তিন মিটার উঁচু (৯ ফুট) একটি মূর্তি স্থাপন করেছে। ‘লেডি লিবার্টি’ নামের মূর্তিটি আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। মুখে গ্যাস মাস্ক, চোখে চশমা আর মাথায় হেলমেট পরা মূর্তিটি আহত এক প্রতিবাদকারীর প্রতিনিধিত্ব করছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, পুলিশের গুলিতে তাঁর চোখ নষ্ট হয়ে গেছে।

মাথায় বাতিসংবলিত ক্যাপ পরা বিক্ষোভকারীদের একটি দল বজ্রপাতের মধ্যে ৫০০ মিটার উঁচু পাহাড়ে চড়ে মূর্তি স্থাপন করে। মূর্তিটি একটি কালো ব্যানার ধারণ করছে, যাতে লেখা আছে, ‘চলছে আমাদের বিপ্লব, হংকংকে মুক্তি দিন।’

মূল ভূখণ্ড চীনকে প্রত্যর্পণের অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে জুনে হংকংয়ের বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। হংকংবাসীর দাবি, এমন একটি পদক্ষেপের ফলে নগরীর বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে, হংকং সরকার জনসভায় জনগণের মুখোশ পরা নিষিদ্ধ করার জন্য ঔপনিবেশিক যুগের জরুরি আইন প্রয়োগ করেছে। তবে বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। হংকংয়ে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।