মাত্র ৩০ মিনিট সময় ছিল হাতে

জ্বলছে নটর ডেম। ছবি: এএফপি
জ্বলছে নটর ডেম। ছবি: এএফপি

আগুন লাগার দিন সন্ধ্যার দিকে প্যারিসের নটর ডেম ক্যাথেড্রালে বিপৎসংকেত বেজে উঠলে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পাননি কেউ।

নিরাপত্তা অনুশীলনের অংশ হিসেবে ঐতিহাসিক এই উপাসনাস্থলটিতে প্রায়ই এমন প্রতীকী সংকেত বাজে। ৮৫০ বছরের বেশি সময় ধরে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের ইল দ্য লা সিটিতে দাঁড়িয়ে আছে ক্যাথেড্রালটি।

চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টা ২৩ মিনিটের কথা। ক্যাথেড্রালের যোগাযোগ কর্মকর্তা আদ্রে ফিনত এক মিটিংয়ে অংশ নিতে নটর ডেমের সামনে এসপ্ল্যানেডের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। বিপদ টের পেয়ে আবার ক্যাথেড্রালে ফিরে যান তিনি। প্রার্থনায় অংশ নিতে আসা লোকজনকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার চিন্তা ছিল তাঁর মাথায়। অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনার মাত্র ১০ দিন আগেই এমন মহড়া দিয়েছিলেন তারা।

বারবার করে ক্যাথেড্রাল খালি করতে বলা হলেও কেউ তাতে বিন্দুমাত্র সাড়া দেননি। এমনকি ইস্টার পূর্ববর্তী কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দেওয়া যাজক পর্যন্ত ক্যাথেড্রাল ছাড়েননি।

৫০ মিটার দূরে, নিজের স্যুভেনির স্টলে দাঁড়িয়ে ফ্লোরেন্স ম্যাথিউও এ সংকেতে কর্ণপাত করেননি। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে পুলিশের বাঁশির শব্দের মতো কিছু একটা শুনেছিলেন বটে। তবে তিনি ধরে নিয়েছিলেন, হয়তো দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে বা কোনো মহড়ার জন্য হুইসেল বাজানো হচ্ছে।

নটর ডেমের ৭০ বছর বয়সী নিয়মিত প্রার্থনাকারী মিশেল শেভালিয়ার বলেছেন, ‘আমরা প্রায় ১০ মিনিট ধরে বাইরে অপেক্ষা করেছি। তারপর আমাদের বলা হলো, আপনারা ভেতরে যেতে পারেন।’ অন্ধকারেই চলতে থাকে নটর ডেমের সব কার্যক্রম। নেই কোনো মাইক্রোফোন। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিদ্যুতের সংযোগ।

মিশেল বলেন, ‘তারপর হঠাৎ করেই আমরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পেলাম। বলা হচ্ছিল, আপনারা সবাই বেরিয়ে যান!’

আদ্রে ফিনতকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, ভেতরে কিছুই হয়নি। সব ঠিক আছে। কাজেই ক্যাথেড্রাল থেকে চলে গিয়েছিলেন তিনি। তবে সন্ধ্যা ৬টা ৪৬ মিনিটের দিকে তিনি লক্ষ করেন, নটর ডেমের বিখ্যাত টুইন টাওয়ারের পেছনে ধূসর ধোঁয়ার রেখা যাচ্ছে। চিন্তিত ফিনত ক্যাথেড্রালের চারপাশে তাকিয়ে দেখলেন ধোঁয়া ক্রমেই ঘন হয়ে কুণ্ডলী পাকিয়ে ওপরে উঠছে।

সতর্কবার্তা এসেছিল আগেই

এক সিকিউরিটি গার্ড প্রথমে খেয়াল করেন, সন্ধ্যা ৬টা ১৮ মিনিটে কম্পিউটারে একটি সতর্কতা বার্তা দেখা যাচ্ছে। উপাসনালয়ের কোনো এক অংশের ছাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল সেখানে। এক গাদা অক্ষর আর সংখ্যার সে কোড দেখে তিনি আর কিছু বুঝতে পারেননি।

বিষয়টা কী, তা দেখতে নটর ডেমের এক কর্মীকে ডেকে পাঠান গার্ড। কোথাও আগুনের কোনো চিহ্ন নেই। স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্মটি সন্ধ্যা ৬টা ২৩ মিনিটে বন্ধ হয়ে যায়, ততক্ষণে ক্যাথেড্রাল খালি করা হয়েছে।

সিকিউরিটি গার্ড ফোনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ১৮ মিনিটের কথোপকথনে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, উপাসনালয়ের যে অংশে আগুন লাগার বার্তা পাঠানো হচ্ছে, সেখানে তদন্ত করতে কাউকে পাঠানো হবে।

সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে প্রথমবারের মতো অগ্নিশিখা শনাক্ত করা হয়।

সিকিউরিটি অ্যালার্ম বাজলে সন্ধ্যা ৬টা ৫১ মিনিটে দমকল বাহিনীকে ত

লব করা হয়। দমকল বাহিনীর কর্মীদের প্রথম দল সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ততক্ষণে আগুন ছাদ অবধি পৌঁছে গেছে। পূর্ব দিক থেকে আসা বাতাসের ধাক্কায় আগুন ত্রয়োদশ শতাব্দীর কাঠের বিম গ্রাস করতে শুরু করে। গলতে থাকে ছাদের ২১০ টন সিসা।

প্রতিনিয়ত পেছাতে হচ্ছিল

সিন নদীর তীরে ভিড় ঠেলে জায়গা করে নিতে হচ্ছিল দমকল বাহিনীর গাড়িকে। সেখানে পর্যটক আর হতভম্ব প্যারিসবাসীর ভিড় জমে গেছে। জ্বলন্ত নটর ডেমের অগ্নিমূর্তি দেখতে আতঙ্কিত জনতা এক হয়েছিল।

প্যারিস দমকল বাহিনীর কর্পোরাল মরিয়াম চুডজিনস্কি (২৭) স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘লোকজন ভিড় করে ক্যামেরা আর ফোনে ছবি তুলছিল। এটা দেখেই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, এখানে সত্যিই কিছু ঘটছে।’ তারপর তিনি দেখতে পান, নটর ডেম পুরোপুরি জ্বলছে।

চুডজিনস্কি পিঠে ২০ কেজি মালামাল নিয়ে ক্যাথেড্রালের ভেতরের সরু প্যাঁচানো সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করেন। খোলা একটা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে তাঁর মনে হলো, সাক্ষা

ধসে পড়ে নটর ডেমের চূড়া। ছবি: এএফপি
ধসে পড়ে নটর ডেমের চূড়া। ছবি: এএফপি

ৎ নরকের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি বলেন, ‘আগুনের শিখায় ছাদটি পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। পানি ছোড়ার যন্ত্র জায়গামতো স্থাপন করার এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে আগুন কয়েক মিটার সামনে এগিয়ে এসেছে। আমাদের ক্রমেই পিছিয়ে যেতে হচ্ছিল।’

নটর ডেমের আবাসস্থল প্যারিসের চতুর্থ জেলার মেয়র অ্যারিয়েল ওয়েইল তখন কেবল সিন নদীর ওপারে প্যারিসের সিটি হলে এক সভা করে বেরিয়েছেন। ক্যাথেড্রালটি যে দ্বীপের ওপর দাঁড়ানো, সেখানে ধোঁয়া উড়তে দেখে দৌড়াতে শুরু করেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্যারিসের মেয়র অ্যান হিডালগো এবং ক্যাথেড্রালের রেক্টর প্যাট্রিক শোভে। অশ্রুসজল ওয়েইলের সঙ্গে যোগ দিলেন তাঁরাও।

শুরুতেই সরু রাস্তায় বসবাসকারী লোকজনের জন্য চিন্তিত হয়ে পড়েন ওয়েইল। ক্যাথেড্রালের উত্তর পাশেই থাকেন তাঁরা। ওয়েইল জানান, ‘আমরা জানালায় দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের বলেছি, নিচে আসুন! বিল্ডিং থেকে নামুন।’ জ্বলন্ত ক্যাথেড্রাল থেকে ছিটকে পড়া কাচ তাঁদের গায়ে এসে পড়ছিল।

বিল্ডিংয়ের অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে ছাইয়ের ঝড়ের সঙ্গে লড়ছিলেন আদ্রে ফিনত। তিনি স্বীকার করেন, বোকার মতো এ কাজ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘নিজেকে বলছিলাম, এ আমি হতে দিতে পারি না। আমি এক বালতি পানি আনতে যাচ্ছি।’ সমানে বেজে চলছিল তাঁর মুঠোফোন।

ফিনত বলেন, ‘পুরো বিশ্ব আমাকে ডাকছে। তবে অন্য সবার মতোই, আমরা কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছিলাম না।’ তিনি যা দেখতে পাননি তা হলো, ক্যাথেড্রালের প্রায় ৯৬ মিটার উঁচু সর্বোচ্চ পয়েন্টটিকে আগুনের লেলিহান শিখা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে।

জেনে গেছে সারা বিশ্ব

ততক্ষণে জ্বলন্ত ক্যাথেড্রালের ছবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ছেয়ে গেছে।

বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষ, রাজনীতিবিদ ও নেতারা খ্যাতিমান এই ক্যাথেড্রালের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রতিবছর ১৩-১৪ মিলিয়ন পর্যটক ইউরোপের সবচেয়ে পর্যটকবহুল এই স্থাপনাটি দেখতে আসেন।

১১৬৩ থেকে ১৩৪৫ সালের মধ্যে নির্মিত ক্যাথেড্রালটি ফরাসি বিপ্লব এবং দুটি বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী। সম্রাট নেপোলিয়নের রাজ্যাভিষেক এবং জেনারেল চার্লস ডি গলসহ বেশ কয়েকজন ফরাসি নেতার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এখানেই হয়েছে।

চলে এলেন ভেগা

‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত একটি বক্তৃতা তৈরি করতে টানা কয়েক দিন এলিসি প্রাসাদে কাটিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। বিবৃতিটি রাত ৮টা ৪০ মিনিটে জাতীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারের জন্য প্রস্তুত। তবে মাখোঁর উপদেষ্টারা সবাই একমত, এখনো সময় আসেনি।

সরকারি মুখপাত্র সিবেথ এনদিয় সে সময়ের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনা করে, তখন এই বক্তৃতা প্রচার করা ঠিক মনে হচ্ছিল না।’

সন্ধ্যা ৭টা ৪৪ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্যটি প্রচারের সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেওয়া হয়। প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের উঠোনে তখন গাড়ির ইঞ্জিন চলছে। প্রেসিডেন্ট আর তাঁর স্ত্রী ব্রিজিথ নটর ডেমে যাচ্ছেন। ক্যাথেড্রালের এসপ্ল্যানেডে দাঁড়ানো পুলিশের ওয়াকিটকিতে শোনা যায়, ‘ভেগা (মাখোঁর কোড নাম) আসছেন।’

নীরবতার চাদরে ঢেকে গেল গোটা এলাকা

ক্যাথেড্রালের ছাদে অগ্নিকুণ্ড নেভাতে প্রাণপণ লড়ে যাচ্ছিলেন মরিয়াম চুডজিনস্কি এবং তাঁর সহকর্মীরা। ছাদের চূড়া কখন ধসে পড়েছে, চুডজিনস্কিরা তা দেখতেও পেলেন না। এমনকি নিচের ভিড় থেকে অবিশ্বাসের চিৎকারও তাদের কানে এল না।

প্যারিসের সহায়ক বিশপ ফিলিপ মার্সেট বলেন, ‘গাছ এবং টাওয়ারের উচ্চতার কারণে চূড়াটি ঢেকে ছিল। তবে ভিড় থেকে হতাশার চিৎকার শুনে আমরা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি।’

সিন নদীর ডান তীরে সুরক্ষিত এলাকায় দাঁড়ানো ফ্লোরেন্স ম্যাথিউ স্তম্ভিত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার ভেঙে যাওয়ার মতোই মনে হচ্ছিল। কী হচ্ছে তা ভেবেই পাচ্ছিলাম না।’ নগরীর অন্যান্য অঞ্চল থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে আরও লোকজন আসতে থাকে। ভবনের অভ্যন্তরে থাকা দমকলকর্মীদের পিছু হটার আদেশ দেওয়া হয়েছে। রাতে মোট ৬০০ দমকলকর্মী ডেকে আনা হয়।

মাখোঁ আসার সঙ্গে সঙ্গে প্যারিস ফায়ার ব্রিগেডের প্রধান জ্যঁ ক্লদ গ্যালেট সংক্ষেপে তাঁকে গোটা পরিস্থিতি জানান। নষ্ট হয়ে গেছে ঐতিহাসিক ছাদের চূড়া। এখন যত দ্রুত সম্ভব টাওয়ারগুলোতে আগুন প্রতিরোধ করা দরকার।

উত্তর টাওয়ারে ৭৮০ কেজি থেকে চার টন পর্যন্ত ওজনের আটটি ঘণ্টা রয়েছে। দক্ষিণ টাওয়ারে আরও দুটি ঘণ্টা আছে, যার মধ্যে ১৩ টন ওজনের ইমানুয়েল নামক দুর্দান্ত ঘণ্টাটি সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত। কাঠের ছাদের বিমগুলো ঘণ্টাসহ পড়ে গেলে হয়তো গোটা নটর ডেমই শেষ হয়ে যাবে। এর ফলে হতাহতের ঘটনাও ঘটতে পারে।

ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী হন হাজারো মানুষ। ছবি: এএফপি
ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী হন হাজারো মানুষ। ছবি: এএফপি

অ্যারিয়েল ওয়েইল বলেন, ‘জেনারেল গ্যালেট আমাদের বলেছিলেন, নটর ডেমকে বাঁচাতে আমাদের হাতে আর মাত্র আধা ঘণ্টা সময় আছে। ছাদ নয়, তিনি ক্যাথেড্রালের কথা বলছিলেন। সেই মুহূর্তে গোটা এলাকা যেন নীরবতার চাদরে ঢেকে গিয়েছিল।’

এ কথা শোনার পরপরই ২০ জন দমকলকর্মী ক্যাথেড্রালের ভেতরে চলে যান। তাঁদের নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তাই ছিল না। তাঁদের লক্ষ্য ছিল ছাদের কাঠামো ঘিরে ফেলা অগ্নিশিখা নিভিয়ে দেওয়া। এখনো আগুন ধরেনি এমন জায়গাগুলো আগে থেকেই ভিজিয়ে রাখা। ছাদ এবং উত্তর টাওয়ারের আগুনের মাঝে পানির একটা পর্দা তৈরি করে দেওয়া।

গনগনে শিখার সামনে পানির পাইপগুলোকে নিতান্তই খেলনা মনে হচ্ছিল। এ যেন অসুরের বিরুদ্ধে দেবতার লড়াই।

নটর ডেমের মূল্যবান শিল্পকর্ম এবং ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণের জন্য ভবনের পেছনে তখন আরেকটি যুদ্ধ চলছে। ওই অংশটিতে ছিল ক্যাথলিক ধর্মের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধ্বংসাবশেষ।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শোভে এবং গ্যালেটের অনুরোধে হিডালগো উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। মানবশেকল তৈরি করে প্যারিসের টাউন হল থেকে ক্যাথেড্রাল পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়।

হিডালগোর উপদেষ্টা সেবাস্তিয়ান হামবার্ট সে সময়ের কথা স্মরণ করে বলেন, প্রত্যেকেরই একটি ঐতিহাসিক, অনন্য মুহূর্তে অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। সিংহাসন, ঝাড়বাতি, চিত্রকর্ম, ধ্বংসাবশেষ এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র সুরক্ষিত রাখতে হাতে হাতে বের করে দেওয়া হয়। নবজাতকের মতো যত্ন করে তাদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যান উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা।

বেঁচে গেল নটর ডেম

রাত ১১টা নাগাদ অপারেশনটি শেষ হয়। অনেক ক্ষণ ধরে অপেক্ষার পর অবশেষে জেনারেল গ্যালে ঘোষণা করলেন, ‘নটর ডেমের মূল কাঠামো সংরক্ষণ করা গেছে। নটর ডেম বেঁচে গেছে।’

মাখোঁ একবার ভেতরের অবস্থা দেখার কথা বলেন। চূড়ার গলিত সিসা তখনো ফাঁক গলে নিচে পড়ছে। পাথরের ঝাঁজরা হয়ে যাওয়া স্তূপ থেকে ধোঁয়া উঠছিল। কিন্তু পেছনে সোনার ক্রুশটি তখনো জ্বলজ্বল করছিল।

দর্শনার্থীদের অনেকে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে এসপ্ল্যানেড ছেড়ে চলে যান। দমকল বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের কাজ শেষ করার জন্য রয়ে যান। ভোর সাড়ে তিনটার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।

এভাবে প্রায় ৯ ঘণ্টা লড়াই, যন্ত্রণা ও প্রার্থনার পর বেঁচে গেল নটর ডেম।