'অভিজিৎ সব বাঙালির মুখ উজ্জ্বল করেছেন'

অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: এএফপি
অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: এএফপি

অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, অভিজিৎ তাঁর একার ছেলে নয়, দেশের ছেলে, দেশমাতৃকার ছেলে। অভিজিতের নোবেলপ্রাপ্তি শুধু তাঁকে নয়, গোটা বিশ্বের বাঙালিদের গৌরব এনে দিয়েছেন, মুখ উজ্জ্বল করেছেন।

অভিজিৎ দ্বিতীয় বাঙালি হিসেবে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তাঁর মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার বাড়িতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বলেন।

দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জের সপ্তপর্ণী আবাসনের নয় তলায় থাকেন নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিজিতের নোবেলপ্রাপ্তির খবর কলকাতায় ছড়িয়ে পড়লে সাংবাদিকেরা ছুটে যান ওই আবাসনে। কথা বলেন তাঁর মায়ের সঙ্গে।

অভিজিতের সঙ্গে নোবেল পেয়েছেন আরও দুজন। তাঁদের একজন অভিজিতের স্ত্রী এস্থার ডাফলো। অন্যজন মাইকেল ক্রেমার।

ছেলেবউয়ের নোবেলপ্রাপ্তিতেও আনন্দিত নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘সত্যিই আজ আমার জীবনের এক গৌরবের দিন। অভিজিতের বাবা বেঁচে থাকলে তিনি আরও বেশি খুশি হতেন।’

অভিজিতের মা বলেন, ‘আমি কোনো দিন এত সাংবাদিকদের মুখোমুখি হইনি। আজ ছেলের নোবেলপ্রাপ্তিতে আমার সামনে এত সাংবাদিক। এত ক্যামেরার আলোর ঝলকানি। আমি সত্যিই মুগ্ধ।’

নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, গতকাল দুপুরে দিল্লি থেকে তাঁর ছোট ছেলে অনিরুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম ফোন করে খবরটি জানান। খবর শুনে আনন্দে তিনি থ হয়ে যান। আনন্দে অশ্রু বেরিয়ে আসছিল।

অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: আইএএনএস
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: আইএএনএস

নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ছোটবেলায় অভিজিতের শখ ছিল মায়ের হাতে তৈরি কেক খাওয়া, আর লন টেনিস খেলা। আজ সেসব কথা তাঁর খুব মনে পড়ছে।

নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, অভিজিৎ নোবেলজয়ী আরেক বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের কাছ থেকে অনেক সাহায্য-সহযোগিতা, পরামর্শ ও উপদেশ পেয়েছেন। সে সব কাজে লাগিয়েছেন। এর ফলে আজ তিনি নোবেল পেয়েছেন।

অভিজিতের মা বলেন, অভিজিৎ সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে ইন্ডিয়ান স্টাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ফিরে আসে গবেষণায়।

অভিজিতের বাবা দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়ও অর্থনীতিবিদ ছিলেন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের (এখন বিশ্ববিদ্যালয়) অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ছিলেন তিনি। মা-ও ছিলেন অর্থনীতিবিদ। অভিজিৎ সব সময় মা-বাবার পরামর্শ নিয়েছেন। উপদেশ শুনেছেন।

নোবেলপ্রাপ্তির পর অভিজিৎ আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন, ‘মা-বাবাই আমার প্রথম শিক্ষক। তাঁদের অনুপ্রেরণায় আমি সফল হয়েছি।...এত তাড়াতাড়ি নোবেল পাব, ভাবিনি। কারণ, নোবেল তো প্রবীণ অর্থনীতিবিদেরা পেয়ে থাকেন।’

নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ওর বাবা বেঁচে নেই। তিনি জেনেও যেতে পারলেন না, তাঁর ছেলে নোবেল পেয়েছেন। পেয়েছে তাঁর পুত্রবধূও। এই কষ্টটাই আজ আমার কাছে বেশি পীড়াদায়ক।’

অভিজিতের নোবেলপ্রাপ্তির খবর শুনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাঁর মায়ের কাছে পাঠিয়েছেন ফুল আর মিষ্টি। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘আজ এক বিশেষ দিন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আরও এক বাঙালি গোটা দেশকে গর্বিত করলেন।’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এক টুইট বার্তায় বলেছেন, নোবেল পাওয়ার জন্য অভিজিতকে অভিনন্দন। দারিদ্র্য দূরীকরণে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু বলেন, ‘অভিজিতের নোবেলপ্রাপ্তি অসম্ভব ভালো খবর। আমি গর্বিত। ওর কাছেই আমার ছেলে পিএইচডি করেছে। আমি অর্থনীতির ক্ষেত্রে ওর আরও সাফল্য কামনা করছি।’

অভিজিৎ এ মাসের শেষ সপ্তাহে দিল্লিতে আসবেন। ওই সময় তাঁর ও স্ত্রীর যৌথভাবে লেখা ‘পুওর ইকোনমিকস’ গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ড আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হবে। এরপর তিনি এক দিনের জন্য কলকাতায় আসবেন।