ভোটগুরুর জাদু পশ্চিমবঙ্গে কাজে আসবে?

ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোর ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোর ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের সবশেষ লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের ভরাডুবি হয়। এই পরাজয়ে উদ্বিগ্ন দলীয় নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভবিষ্যতের কথা ভেবে নড়েচড়ে বসেছেন তিনি। ২০২০ সালে পশ্চিমবঙ্গের ১১০টি পৌরসভা ও পৌর করপোরেশনের নির্বাচন। আর ২০২১ সালে রাজ্যের ২৯৪টি আসনের বিধানসভা নির্বাচন। এসব নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে মমতা শরণাপন্ন হয়েছেন ভারতের ‘ভোটগুরু’ হিসেবে পরিচিত প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার।

গত ৬ জুন এই ভোটগুরুর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সচিবালয় নবান্নে দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন মমতা। সঙ্গে ছিলেন মমতার ভাইয়ের ছেলে ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক রাজ্য তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতিও। বৈঠকের পর ভোটগুরুর সঙ্গে তৃণমূলের একটি চুক্তি হয়।

২০১৬ সালে মমতার সঙ্গে ভোটগুরুর কথা হলেও তাঁর সংস্থার সঙ্গে কোনো চুক্তিতে যাননি তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ব্যাপক পরাজয় ও বিজেপির উত্থান মমতাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। তাই তিনি শরণাপন্ন হলেন প্রশান্ত কিশোরের। প্রশান্ত কিশোরই ঠিক করবেন আগামী নির্বাচনগুলোতে কী হবে, তৃণমূলের নির্বাচনী রণকৌশল, কীভাবে জিতবে তৃণমূল?

ভোটগুরুর সংস্থার নাম ‘ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি’। তাঁর সংস্থার সঙ্গে তৃণমূলের চুক্তির পর গত জুলাই মাস থেকে পশ্চিমবঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের কাজ শুরু হয়ে যায়।

তৃণমূলের পক্ষে রাজ্যে প্রথমে যে কর্মসূচি কার্যকর করা হয়, তা হলো ‘দিদিকে বলো’। এই কর্মসূচির আওতায় একটি ফোন নম্বর দেওয়া হয়। ওই ফোন নম্বরে ফোন করে সাধারণ মানুষ মমতার কাছে তাঁদের অভাব, অভিযোগ ও সমস্যার কথা জানান। কর্মসূচিতে মোটামুটি সাড়া মেলে। কিন্তু এই সাড়া কতটুকু ভোটের বাক্সে প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে খোদ তৃণমূলের অন্দরেই। অভিযোগ উঠেছে, ওই কর্মসূচি বাস্তবায়নে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা সেভাবে কাজ করেননি। ফলে ভোটগুরুর জাদু এই রাজ্যে কাজ করবে কি না, তা নিয়ে এখনই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

লোকসভা নির্বাচনে ব্যাপক পরাজয়ের পর মমতা এখন লেগে পড়েছেন আগামী বছরের পৌরসভা নির্বাচন ও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে। এখন পর্যন্ত ভোটগুরুর জাদুতে কী ফল এসেছে, তা নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সচিবালয়ে বৈঠক হয়। রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীসহ ৬০০ জন টাউন ও ইউনিয়ন পর্যায়ের তৃণমূল কমিটির সভাপতিরা বৈঠকে ছিলেন। ছিলেন রাজ্য তৃণমূলের সভাপতি সুব্রত বক্সি, যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

তৃণমূল কংগ্রেসকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে দলকে নতুন করে সাজানোর বিষয়টি বৈঠকে উঠে আসে। পাশাপাশি প্রশান্ত কিশোরের দাওয়াই ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির তৃতীয় পর্যায় চালু করার কথাও বলা হয়। এদিন নেতারা জানিয়ে দেন, এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি গ্রামে নেতা-কর্মীরা গিয়ে বিজয় দশমীর শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে প্রচার চালাবেন। আর যে নেতা-কর্মীরা প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের কর্মসূচিতে যোগ দেননি বা এড়িয়ে গেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে ব্যবস্থা।

প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা ২০১২ সালে গুজরাটের নির্বাচনে দায়িত্বে থেকে তৃতীয়বারের জন্য নরেন্দ্র মোদিকে ক্ষমতায় আনে। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে এই সংস্থার পরামর্শে ‘হর হর মোদি, ঘর ঘর মোদি’ আর ‘চায়ে পে চর্চা’ স্লোগান তুলে মোদিকে ক্ষমতায় আনার কারিগর হিসেবে কাজ করে। ২০১৫ সালে বিহারে নিতীশ-লালু প্রসাদ জোটকে ক্ষমতায় আনার কারিগর ছিল এই সংস্থা। ২০১৭ সালে ১০ বছর পর কংগ্রেসকে পাঞ্জাবে ক্ষমতায় আনে সংস্থাটি। আর ২০১৯ সালে অন্ধ্র প্রদেশে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে ওয়াইএসআর কংগ্রেসের সাফল্যে সংস্থাটি ভূমিকা রাখে। অন্ধ্র প্রদেশের ২৪টি লোকসভা আসনের ২২ টিতে জেতেন জগন্মোহন রেড্ডির দল। আর বিধানসভার ১৭৫টি আসনের মধ্যে জেতেন ১৫১ টি। এই ফল দেখার পর মমতা ঝুঁকে পড়েন প্রশান্ত কিশোরের দিকে। তারপর তাঁর সঙ্গে বৈঠক করে চুক্তি করেন তিনি।

কিন্তু প্রশান্ত কিশোরের জাদু অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গে কাজ করবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এখানকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাঁদের অনুমান, ভোটগুরুর দাওয়াই পশ্চিমবঙ্গে কাজ না–ও করতে পারে।