অবশেষে ইতালিতে তাফিদা, অলৌকিক কিছুর আশায় মা

তাফিদা রাকিব
তাফিদা রাকিব

‘দুনিয়াতে অলৌকিক অনেক কিছুই ঘটে। সবকিছু মিথ্যা প্রমাণ করে আমার মেয়েও জেগে উঠবে বলে আশা করি। মেয়ের জীবনের জন্য আমি সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা রাখতে চাই।’

‘গভীর ঘুমে’ আচ্ছন্ন পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশু তাফিদা রাকিবকে লন্ডন থেকে ইতালিতে নিয়ে যাওয়ার আগে এ কথাই বলে গেলেন তার মা সেলিনা রাকিব। গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বেলা একটার দিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে পূর্ব লন্ডনের রয়্যাল লন্ডন হাসপাতাল থেকে তাঁরা যাত্রা করেন। তাফিদাকে ভর্তি করা হয় ইতালির জেনোয়ার গ্যাসলিনি চিলড্রেন হসপিটালে।

তাফিদাকে বিদায় জানাতে সকালে হাসপাতালের সামনে হাজির হয়েছিলেন তার স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। এ সময় তাঁরা তাফিদার ছবি ও ‘সেভ তাফিদা’ লেখা বেলুন উড়িয়ে তাফিদার জন্য শুভকামনা জানান।

বাংলাদেশি দম্পতি মোহাম্মদ রাকিব ও সেলিনা রাকিবের সন্তান তাফিদা। মস্তিষ্কের জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘গভীর ঘুমে’ আচ্ছন্ন সে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই পরিস্থিতিকে বলা হয় ‘কোমা’। তাফিদার আর জেগে ওঠার সম্ভাবনা নেই—এমন যুক্তিতে পূর্ব লন্ডনের রয়্যাল লন্ডন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নিয়ে জীবনের অবসান ঘটাতে চেয়েছিল। কিন্তু তাফিদার মা-বাবা নিজস্ব খরচে মেয়েকে ইতালি নিয়ে চিকিৎসা করাতে চান। এ নিয়ে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টে চলে আইনি লড়াই। শেষ পর্যন্ত ৩ অক্টোবর আদালত মা-বাবার চাওয়ার পক্ষেই রায় দেন।

সেলিনা রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংকটাপন্ন সন্তানের জীবন রক্ষার জন্য আদালতে লড়াই করার এমন চরম অভিজ্ঞতা যেন আর কোনো মা-বাবার না হয়।’ তিনি জানান, তাফিদার বাবা আগেই ইতালির হাসপাতালে পৌঁছে গেছেন। আর তিনি যাচ্ছেন মেয়ের সঙ্গে। এখন থেকে তিনি ইতালিতেই থাকবেন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, লাইফ সাপোর্টে তাফিদাকে ১০ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। ইতালির জেনোয়ার গ্যাসলিনি চিলড্রেন হসপিটাল তাফিদার স্বাভাবিক মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চিকিৎসা চালিয়ে যেতে আগ্রহী।

ইতালিতে এই চিকিৎসার জন্য প্রাথমিকভাবে পরিবারের প্রায় তিন লাখ পাউন্ড (৩ কোটি ২০ লাখ টাকা) খরচ হচ্ছে। তাফিদার চিকিৎসার জন্য তহবিল সংগ্রহে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আবেদন জানিয়েছে তার পরিবার। ‘সেভ তাফিদা’ ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।