ভারতের সুপ্রিম কোর্টে অযোধ্যা মামলার শুনানি শেষ, রায়ের অপেক্ষা

ভারতের সুপ্রিম কোর্টে নাটকীয়ভাবে শেষ হলো অযোধ্যা মামলার শুনানি। আজ বুধবার টানা ৪০ দিন শুনানির পর বিবদমান আর কোনো পক্ষকে কোনো সময় দিতে রাজি হননি সর্বোচ্চ আদালত। শুনানি শেষ হলেও বহু পুরোনো এই মামলার রায় কবে দেওয়া হবে, তা নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ আগামী মাসের ১৭ তারিখ অবসর নেবেন। তার আগেই রায় দেওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শুনানি শেষ হলো নাটকীয়ভাবে। একসময় বিরক্ত প্রধান বিচারপতি ক্ষুব্ধ হয়ে বলে ওঠেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের শিষ্টাচারের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। শালীনতা রক্ষা করা হচ্ছে না। এইভাবে চললে আমরা আদালত ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হব।’

আজ বুধবার শুনানির সময় আদালত কক্ষে ধুন্ধুমার বেধে যায় মুসলিম ওয়াক্ফ বোর্ডের কৌঁসুলি রাজীব ধবনের সঙ্গে হিন্দু মহাসভার আইনজীবী বিকাশ সিংয়ের। শুনানির শেষ দিনে কুনাল কিশোর নামের এক লেখকের একটি বই বিকাশ সিং সাক্ষ্য হিসেবে পেশ করতে চান। সেই বইয়ে একটা মানচিত্রকে রামচন্দ্রের জন্মভূমি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিকাশ সিং ওই মানচিত্রকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রাহ্য করার দাবি জানান। নতুন এই সাক্ষ্য পেশের বিরোধিতা করে রাজীব ধবন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের উচিত হবে না নতুন সাক্ষ্য হিসেবে এটি গ্রহণ করা। এই ধরনের বইয়ের ওপর সর্বোচ্চ আদালতের নির্ভর করা সাজে না। তিনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত অনুমতি দিলে আমি তা ছিঁড়ে ফেলতে পারি।’ তা শুনে বিরক্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা যা খুশি, তা–ই করছেন। যা ইচ্ছে তা–ই করুন।’ এই মন্তব্যের পর রাজীব বইটিতে থাকা সেই মানচিত্র ছিঁড়ে ফেললে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ আদালত কক্ষ ত্যাগ করার হুমকি দেন।

আজ শুনানির শুরুতেই হিন্দু মহাসভার পক্ষে সওয়ালের জন্য বাড়তি একটা দিন সময় চাওয়া হয়। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ তা নাকচ করে দেন। রঞ্জন গগৈ বলেন, বাড়তি সময় আর কাউকেই দেওয়া হবে না। সব পক্ষকে আগেই বলা হয়েছে, প্রত্যেকের জন্য বরাদ্দ সময়ের মধ্যেই বক্তব্য শেষ করতে হবে। প্রধান বিচারপতি জানান, বুধবার বিকেল ঠিক পাঁচটায় এই মামলার শুনানি শেষ হবে। অনেক হয়েছে। আর নয়।

বিকেল পাঁচটার সামান্য আগে শুনানি শেষ হলে বেঞ্চ নির্দেশ দেন, বিবদমান পক্ষের আরও কিছু বলার থাকলে তা তিন দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে।

হিন্দুদের বিশ্বাস, উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় ভগবান রামচন্দ্র জন্মেছিলেন। তাঁর জন্মস্থান বলে চিহ্নিত জায়গায় মোগল সম্রাট বাবরের আমলে একটি মসজিদ তৈরি হয়। নাম দেওয়া হয় বাবরি মসজিদ। মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি নিয়ে সেই থেকে হিন্দু-মুসলমানে যে বিবাদ চলছিল, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর তা অন্যদিকে বাঁক নেয়। ওই দিন কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে। ২ দশমিক ৭৭ একর জমির মালিকানা কার তার চূড়ান্ত মীমাংসা এখনো হয়নি। এলাহাবাদ হাইকোর্ট ওই জমি বিবদমান তিন পক্ষ রাম লালা, সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ড ও নির্মোহী আখড়ার মধ্যে সমানভাবে ভাগ করার নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ হয় সুপ্রিম কোর্টে। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ একটানা শুনানির নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, অবসর গ্রহণের আগেই তিনি এই বিবাদের মীমাংসা করে ফেলতে আগ্রহী।