পাকিস্তান চার মাস সময় পেল প্রমাণের

ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের প্রেসিডেন্ট জিয়াংমিন লুই। ছবি: রয়টার্স
ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের প্রেসিডেন্ট জিয়াংমিন লুই। ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানকে আপাতত ধূসর তালিকাতেই রেখেছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগানদাতাদের পর্যবেক্ষক সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)। তবে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন এবং অর্থ পাচার বন্ধ না করলে দেশটিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছে সংস্থাটি। এই চার মাসের মধ্য তাদের প্রমাণ করতে হবে, তারা সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাচ্ছে না এবং অর্থ পাচারও করছে না।

গত বছরের জুনে প্যারিসভিত্তিক নজরদারি সংস্থাটি পাকিস্তানকে গ্রে তালিকাভুক্ত করেছিল। সে সময় ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসের মধ্যে দেশটিকে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। অবস্থান বদলে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করতে না পারলে ইরান ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কালো তালিকাভুক্ত করার হুমকি দেওয়া হয় তাদের।

এফএটিএফের প্রেসিডেন্ট জিয়াংমিন লুই বলেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। জিয়াংমিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পাকিস্তান যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারেনি।’

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানা গেছে, সন্ত্রাসবাদে সহযোগিতা বন্ধে পাকিস্তান আশানুরূপ পারফরম্যান্স দেখাতে না পারায় এফএটিএফের কঠোর পদক্ষেপের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। দেশটিকে অবস্থান পরিবর্তনের জন্য চার মাস সময় দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটির ২৭টি কর্মসূচির মধ্যে মাত্র ৫টি পূরণ করতে পেরেছে তারা।

ইতিমধ্যে কালো তালিকাভুক্ত ইরানকেও হুমকি দিয়েছে প্যারিসভিত্তিক সংস্থা এফএটিএফ। তারা জানিয়েছে, সন্ত্রাসবাদে সহযোগিতা বন্ধ না করলে আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশটির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আরও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।

গতকাল শুক্রবার এফএটিএফের ‘গ্রে’ বা ধূসর তালিকাভুক্ত রাখার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে পাকিস্তান সরকার। ‘ডার্ক গ্রে’(গাঢ় ধূসর) বা ‘ব্ল্যাক’ (কালো) তালিকার অন্তর্ভুক্ত হলে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পাওয়া দেশটির জন্য খুব কঠিন হয়ে যেত। পাকিস্তানের আর্থিক অবস্থা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ত।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, ‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমরা সফল হয়েছি।’

ওয়াশিংটন পোস্ট সংস্থাটির মূল্যায়ন প্রতিবেদন দেখে জানিয়েছে, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন বন্ধে পাকিস্তানের খুব একটা অগ্রগতি হয়নি। এ কাজে তাদের সামগ্রিক সদিচ্ছার অভাব নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এফএটিএফ।

পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে কর্মপরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

এফএটিএফ জানিয়েছে, অন্যান্য পদক্ষেপের পাশাপাশি অর্থ স্থানান্তর বিষয়ে তদন্ত ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নকারীদের বিচারের জন্য পাকিস্তানের আরও কিছু করা উচিত।

কোরেশি জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান ‘সন্ত্রাসে অর্থায়নের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিয়েছে’। তিনি বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, ‘আমরা প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত রাখব। আমাদের বিরুদ্ধে যাবতীয় ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।’

পর্যবেক্ষক সংস্থাটি ইরানের ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, ইরান কালো তালিকা থেকে নিজেদের নাম মুছতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ইরানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে জড়িত দেশগুলোকে আরও কড়া তদন্ত করতে সদস্য দেশগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছে তারা।

বিটকয়েন এবং ফেসবুকের লিবরার মতো ভার্চ্যুয়াল মুদ্রাও এফএটিএফের উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই জাতীয় মুদ্রা ‘নতুন ঝুঁকির’ সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা করছে সংস্থাটি। সংস্থাটি জানিয়েছে, সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন বা অর্থ পাচারের জন্য ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতে নিবিড় পর্যবেক্ষণ চলছে।

এফএটিএফ ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি আন্তর্দেশীয় সরকারি সংস্থা। আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থার অখণ্ডতার জন্য অর্থ পাচার, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন এবং অন্যান্য হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করে সংস্থাটি।