গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দাবিতে অভিনব প্রতিবাদ

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্বের প্রতিবাদে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো এক জোট হয়ে এক অভিনব প্রতিবাদের উদ্যোগ নিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্বের প্রতিবাদে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো এক জোট হয়ে এক অভিনব প্রতিবাদের উদ্যোগ নিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে সীমিত করে সম্প্রতি একটি আইন হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। এ আইনের প্রতিবাদে দেশটির শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো এক জোট হয়ে এক অভিনব প্রতিবাদের উদ্যোগ নিয়েছে।

গণমাধ্যম জগতে সাধারণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার মানসিকতা দেখা যায়। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হতে পারে এমন কোনো আইন করলেও তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে পৃথকভাবে প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায়। বাক্‌স্বাধীনতার পক্ষ অবলম্বন করে প্রকাশ করতে দেখা যায় বিভিন্ন নিবন্ধ। এমনকি বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারের সম্মিলিত প্রতিবাদের নজিরও কম নয়। কিন্তু শীর্ষ গণমাধ্যমগুলোকে এক জোট হয়ে নিজেদের পত্রিকা মারফতই এর প্রতিবাদ জানানোর নজির খুব একটা নেই। ঠিক এ কাজটিই এখন করতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করে আইন প্রণয়নের প্রতিবাদে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ সংবাদপত্রগুলো আগামীকাল সোমবার তাদের পত্রিকার প্রতিবেদনগুলোর অধিকাংশ শব্দ মুছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ প্রতিবাদে শামিল হয়েছে রুপার্ট মারডক নিউজ করপোরেশনের প্রতিষ্ঠান, নাইন এন্টারটেইনমেন্টের প্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলিয়ান ফিন্যান্সিয়াল রিভিউ, সরকারি অর্থে পরিচালিত ওয়েবসাইট অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনসহ (এবিসি) বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো।

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্বের প্রতিবাদে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো এক জোট হয়ে এক অভিনব প্রতিবাদের উদ্যোগ নিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্বের প্রতিবাদে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো এক জোট হয়ে এক অভিনব প্রতিবাদের উদ্যোগ নিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

এ ধরনের প্রতিবাদের মাধ্যমে অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো চাইছে বাকস্বাধীনতা খর্ব হয় এমন আইন রদে সরকারের ওপর জনগণের চাপ বৃদ্ধি করতে। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে সৃষ্ট বাধা দূর করার পাশাপাশি স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য উপযোগী একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানাচ্ছে তারা। একই সঙ্গে মানহানি মামলা করার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণের বিষয়েও তারা দাবি জানাচ্ছে।

এ বিষয়ে নাইন এন্টারটেইনমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হাগ মার্কস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘জনগণের নামে সরকার যেসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা সম্পর্কে জনগণের জানার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতেই এ পদক্ষেপ।’

নিউজ করপোরেশন অস্ট্রেলেশিয়ার চেয়ারম্যান মাইকেল মিলার বলেন, ‘যে সরকার জনগণকে তথ্য জানা থেকে বিরত রাখতে চায়, তার সম্পর্কে মানুষের সব সময় সংশয়ী হওয়া উচিত।’

অস্ট্রেলিয়ায় বাক্‌স্বাধীনতার সাংবিধানিক সুরক্ষা নেই। ২০১৮ সালে গুপ্তচরবৃত্তি প্রতিরোধে বিদ্যমান আইনকে শক্তিশালী করতে গিয়ে দেশটি সতর্ককারীদের (হুইসেলব্লোয়ার) সুরক্ষা দিয়ে একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত করে। কিন্তু এরপরও দেশটির আইনি কাঠামো সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য অনুকূল নয় বলে মনে করছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্বের প্রতিবাদে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো এক জোট হয়ে এক অভিনব প্রতিবাদের উদ্যোগ নিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্বের প্রতিবাদে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো এক জোট হয়ে এক অভিনব প্রতিবাদের উদ্যোগ নিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

বিষয়টি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মনোযোগ আকর্ষণ করে চলতি বছর, যখন শিশুদের যৌন হেনস্তার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ভ্যাটিকানের কোষাধ্যক্ষ কার্ডিনাল জর্জ পেলের বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরিতে সাংবাদিকদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন অস্ট্রেলিয়ার আদালত। ফলে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্রগুলো জর্জ পেলের নাম উল্লেখ না করতে পারেনি। অথচ বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলো ঠিকই পুরো প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পেরেছিল।

কিন্তু নাম প্রকাশ না করেও নিষ্কৃতি পায়নি অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যম। দেশটির সরকারি কৌঁসুলিরা এখন তিন ডজনেরও বেশি সাংবাদিক ও প্রকাশকের বিরুদ্ধে জরিমানা ও কারাদণ্ড চেয়ে অভিযোগ এনেছে। অপরাধ, তাঁরা বিচার কার্যক্রমের সংবাদ পরিবেশন করেছিলেন। গত জুনে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে ওঠে, যখন এবিসি অফিসে পুলিশ তল্লাশি চালায়। একই সময়ে প্রশাসন নিউজ করপোরেশনের সম্পাদকের বাসায়ও অভিযান চালায়। এই ঘটনাকে বিবিসি সে সময় ‘ভয়াবহ সংকট’ হিসেবে বর্ণনা করেছিল।

তল্লাশির বিষয়ে এবিসির ভাষ্য হচ্ছে, আফগানিস্তানে সামরিক অসদাচরণ নিয়ে ২০১৭ সালে কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনগুলোর জন্যই এ হেনস্তা করা হয়েছে। আর অস্ট্রেলীয়দের ই-মেইলে, টেক্সট ম্যাসেজ ও ব্যাংক হিসাবে সরকারি নজরদারি নিয়ে করা প্রতিবেদনের জেরে সম্পাদকের বাসায় অভিযান চালানো হয় বলে দাবি করে নিউজ করপোরেশন।

অস্ট্রেলীয় সরকারের এমন পদক্ষেপের কারণেই দেশটির সংবাদপত্রগুলো সংবাদ মুছে দিয়ে একযোগে প্রতিকা প্রকাশের মতো বিক্ষোভ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।