সরকার গঠন থেকে পিছু হটলেন নেতানিয়াহু

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও বেনি গান্টজ। ছবি: এএফপি
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও বেনি গান্টজ। ছবি: এএফপি

ইসরায়েলের দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবার সরকার গঠন করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন। দুই দফা নির্বাচনেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় দেশটির প্রেসিডেন্ট তাঁকে অন্য দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করে সরকার গঠনের সময় বেঁধে দেন। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমঝোতায় ব্যর্থ হওয়ায় সরকার গঠন করা থেকে সরে দাঁড়ালেন তিনি। নেতানিয়াহু পিছু হটায় সরকার গঠনের সুযোগ চলে যাচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের হাতে।

আজ মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে সরকার গঠন করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

প্রায় এক দশক নেতানিয়াহু ক্ষমতায়। তবে গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। তাঁর প্রতিপক্ষ বেনি গান্টজের ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট দলকে এখন সরকার গঠনে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিন।

বেনি গান্টজের দলকে নিয়েও ঐক্যের সরকার গঠনে নেতানিয়াহু চেষ্টা করেছিলেন। তবে গান্টজের দল তাতে রাজি হয়নি। ঘোষণায় নেতানিয়াহু বলেছেন, যৌথ সরকার গঠনে তিনি বারবার চেষ্টা করলেও পারেননি।

গত ৯ এপ্রিল ইসরায়েলে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে নেতানিয়াহুর দলসহ কোনো দল সরকার গঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে দ্বিতীয় দফায় ১৭ সেপ্টেম্বর সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করা হয়।

ইসরায়েলের ইতিহাসে এই প্রথম এক বছরে দুবার সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের ঘটনা ঘটে। পার্লামেন্টের ১২০টি আসনে ৩১টি রাজনৈতিক দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। দুবারই নেতানিয়াহুর ডানপন্থী লিকুদ পার্টির সঙ্গে বেনি গান্টজের মধ্যপন্থী ব্লু অ্যান্ড হোয়াইটের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। এপ্রিলের ভোটে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি ৩৬টি আসন পেয়েছিল। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বেনি গান্টজের ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পেয়েছিল ৩৫টি আসন।
সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে লিকুদ পার্টি ৩২ এবং ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পার্টি ৩৩টি আসন পায়।

এবারের নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট রিভলিন যৌথ সরকার গঠন প্রথম সুযোগটি নেতানিয়াহুকে দিয়েছিলেন। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট প্রধান দুটি দল লিকুদ এবং ব্লু অ্যান্ড হোয়াইটকে ঐক্যের সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এতে গান্টজ ডি ফ্যাক্টো (কার্যত) প্রধানমন্ত্রী থাকতেন, আর নেতানিয়াহু শুধু নামে প্রধানমন্ত্রী থাকতেন।

প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিন বলেন, সরকার গঠনে একইভাবে সমঝোতার চেষ্টা করতে তিনি গান্টজকে ২৮ দিন সময় দেবেন। তিনি আবারও নির্বাচন হওয়ার বিষয়টি এড়াতে চাইছেন। কারণ ইতিমধ্যে দুই দফায় নির্বাচন হয়েছে। যদি গান্টজও সরকার গঠনে ব্যর্থ হন, তাহলে তিনি আরেকটি নির্বাচন এড়াতে তৃতীয় কোনো প্রার্থীকে সামনে নিয়ে আসবেন।
ইসরায়েলে যে দল জয় পায়, সাধারণত সেই দল থেকেই প্রধানমন্ত্রী হন। তবে প্রধানমন্ত্রী অন্য কোনো দল থেকে করারও বিধান রয়েছে।

ইসরায়েলি আরব এমপিরা গান্টজকে তাঁদের সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এরপরও এক ডজনের বেশি আসনের ঘাটতি রয়েছে গান্টজের দলের। ইসরায়েলে সরকার গঠনে পার্লামেন্ট কমপক্ষে ৬১টি আসন পেতে হয়।

নেতানিয়াহুর ঘোষণার পর ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট তাদের টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, ‘ঘূর্ণনের সময় শেষ এবং এখন সময় এসেছে কাজ করার। বেনি গান্টজের নেতৃত্বে ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট উদার ঐক্যের সরকার গঠন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যে লক্ষ্যে এক মাস আগে ভোট দিয়েছিলেন ইসরায়েলের জনগণ।’

গান্টজ ইসরায়েলের সাবেক সেনাপ্রধান। নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি সেনাপ্রধানের পদে আসীন হন। ‘ইসরায়েল পথ হারিয়েছে’ দাবি করে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি নতুন দল গঠন করেন।
গান্টজের চেয়ে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। তবে তিনি এখন দুর্নীতির অভিযোগের সম্মুখীন। এ মাসে যৌথ সরকার গঠনে সমঝোতার চেষ্টার পাশাপাশি তাঁকে অ্যাটর্নি জেনারেলের শুনানিতেও হাজিরা দিতে হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল সিদ্ধান্ত নেবেন, নেতানিয়াহু ঘুষ, প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন কি হবেন না।