অভিজিতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ মোদি

নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের এই ছবিটি টুইটারে পোস্ট করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের এই ছবিটি টুইটারে পোস্ট করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, মানুষের ক্ষমতায়নে নোবেলজয়ী অভিজিতের আবেগের বিষয়টি স্পষ্ট। আজ মঙ্গলবার অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী ভারতের অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের পর টুইট বার্তায় মোদি এ কথা বলেন। সাক্ষাতের পর অভিজিতের প্রশংসা করে মোদি বলেন, ‘ভারত তাঁর জন্য গর্বিত।’ এই সাক্ষাৎকে তিনি ‘দারুণ’ বলেও মন্তব্য করেন।

অভিজিতের নোবেল জয়ে শুরুতে বিজেপি নেতারা সেভাবে সরব হননি। বরং অভিজিৎকে বামপন্থী তকমা দিয়ে তাঁর নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সমালোচনায় মেতেছিলেন পীযূষ গোয়েলের মতো কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতারা। এমন সমালোচনা ও বিতর্কের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে অভিজিতের।

অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর স্ত্রী অর্থনীতিবিদ এস্থার দুফলো এবং আরেক অর্থনীতিবিদ মাইকেল ক্রেমারের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে ‘বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য বিমোচনে পরীক্ষামূলক পদ্ধতির জন্য’ ২০১৯ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পান।

অভিজিৎ নোবেল পাওয়ার পর টুইটারে তাঁকে মোদি অভিনন্দন জানালেও অনেকের মতে তা ছিল সাদামাটা। ১৪ অক্টোবর টুইটারে অভিনন্দন জানিয়ে মোদি বলেছিলেন, ‘দারিদ্র্য দূরীকরণে তিনি (অভিজিৎ) উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।’

তবে অভিজিতের সঙ্গে সাক্ষাতের পরে দেওয়া মোদির টু্ইটটি বেশ উচ্ছ্বাসপূর্ণ। অভিজিতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তিনি।

আজ এনডিটিভি অনলাইনের খবরে বলা হয়, অভিজিতের সঙ্গে বৈঠকের পর দুজনের একটি ছবি প্রকাশ করে নরেন্দ্র মোদি টুইটারে লেখেন, ‘নোবেলজয়ী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকটি দারুণ হয়েছে। মানুষের ক্ষমতায়নে তাঁর ভাবাবেগ স্পষ্ট। বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের সতেজ ও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ভারত তাঁর কাজের জন্য গর্বিত। তাঁর ভবিষ্যৎ উদ্যোগের জন্য শুভেচ্ছা জানাই।’

এর আগে নোবেলজয়ের পর অভিজিতের বিষয়ে বিজেপি নেতারা বলেন, তাঁর অর্থনীতির তত্ত্ব ভারতে খাটে না। মহাত্মা গান্ধীর নীতিই ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সোপান।
কেন্দ্রীয় নেতা পীযূষ গোয়েল বলেন, ‘নোবেল পাওয়ার জন্য আমরা অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানাই। আপনারা সবাই জানেন, উনি বামপন্থী মানসিকতার। কংগ্রেস-ঘোষিত ন্যায় প্রকল্পকে উনি সমর্থন দিয়েছিলেন। ন্যায় প্রকল্পের গুণগান গেয়েছেন। ভারতের মানুষ ওনার অর্থনৈতিক তত্ত্বকে খারিজ করে দিয়েছে।’

বিজেপির জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা বলেন, ‘বামপন্থী অর্থনীতি এ দেশে চলে না। মানুষ বামপন্থাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিদেশের কোথায়ও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্ব কাজে লাগতে পারে। তবে ভারতে দারিদ্র্য দূরীকরণে তাঁর তত্ত্ব কাজে আসবে না। মহাত্মা গান্ধীর নীতিতেই ভারতের আর্থিক উন্নতি সম্ভব।’

রাহুল সিনহা বলেন, অভিজিৎ দিল্লিতে পড়াশোনার সময় ছাত্র আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ১০ দিন জেল খেটেছিলেন দিল্লির তিহার কারাগারে। বিদেশিনীকে বিয়ে করলে নোবেল পাওয়া যায়, যেমনটা অধ্যাপক অমর্ত্য সেনও পেয়েছিলেন। অভিজিৎ দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন ফ্রান্সের এস্থার দুফলোকে। অমর্ত্য সেনও দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন বিদেশিনীকে।

দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিদের এমন মন্তব্য যে দলের অনেকেই ভালোভাবে নেননি, এর প্রমাণ পাওয়া গেছে কলকাতার বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বিজেপি নেতা রন্তিদেব সেনগুপ্তের কথায়। বিজেপির নেতাদের অভিজিতের বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে রন্তিদেব বলেন, বাঙালি হিসেবে অভিজিৎ নোবেল পেয়েছেন। অভিজিৎকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য বাংলার মানুষ ভালো চোখে নিচ্ছে না। বিরোধিতা যদি করতে হয়, তা করতে হবে তাত্ত্বিকভাবে। ব্যক্তিগত জীবন টেনে আনা উচিত নয়।

গত শনিবার এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ৫৮ বছর বয়সী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় তিনি গুজরাটে কাজ করেছিলেন। সেখানে তাঁর কাজের ‘দারুণ অভিজ্ঞতা’ হয়েছিল। পীযূষ গোয়েলের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক চিন্তাভাবনায় আমি পক্ষপাতদুষ্ট নই। আমরা যে যে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কাজ করেছি, এর মধ্যে অনেকগুলোই ছিল বিজেপি সরকার। আমরা গুজরাটে দূষণনিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সঙ্গে কাজ করেছি নরেন্দ্র মোদির অধীনে এবং আমাদের সেখানে কাজের অভিজ্ঞতা চমৎকার।’

এ বছরের শুরুতে লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের জন্য ভারতের আর্থিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণে ন্যায় প্রকল্পের রূপরেখা তৈরিতে সহযোগিতা করেছিলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। ন্যায় প্রকল্পে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষকে মাসে ছয় হাজার রুপি করে আর্থিক অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন রাহুল গান্ধী লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে। কিন্তু নির্বাচনে জয়ী হতে না পারায় সেই প্রকল্প চাপা পড়ে যায়।