জার্মানিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক আসামির বিচার শুরু

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে বুর্নো ডি নামের ৯৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তির বিচার শুরু করছে জার্মানি। ছবি: রয়টার্স
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে বুর্নো ডি নামের ৯৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তির বিচার শুরু করছে জার্মানি। ছবি: রয়টার্স

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার ৭৪ বছর পর আবারও জার্মানিতে এক যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু হয়েছে। জার্মানির বন্দর শহর হামবুর্গের আঞ্চলিক আদালত গত বৃহস্পতিবার থেকে ৯৩ বছর বয়স্ক একজন সাবেক বন্দিশিবির প্রহরীর বিচার শুরু করছেন।

নাৎসি হিটলার বাহিনী অধিকৃত পোল্যান্ডে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অনেক বন্দিশিবির বানিয়েছিল। পোল্যান্ডের ডানজিক বন্দর শহরের কাছে স্টুটহোফ নামক স্থানে বুর্নো ডি নামের এই যুদ্ধাপরাধী প্রহরীর দায়িত্বে ছিলেন। ১২০ হেক্টর জায়গা নিয়ে তৈরি ওই বিশাল বন্দিশিবিরে বিশ্বযুদ্ধকালে ১ লখ ১০ হাজার যুদ্ধবন্দীকে আটকে রাখা হয়েছিল। এদের অর্ধেকরেও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল অথবা অসুস্থ ও ক্ষুধার তাড়নায় মারা গিয়েছিল। এই স্টুটহোফ বন্দিশিবিরে ৬৫ হাজার বন্দী মারা যায়।

হামবুর্গের আঞ্চলিক আদালত স্টুটহোফ বন্দিশিবিরের সেই প্রহরীকে ৫ হাজার ২৩০ জন বন্দীকে হত্যার সহায়তাকারী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। ওই ব্যক্তি আদালতে বলেছেন, বিশাল বন্দিশিবিরে ২৫টি প্রহরা টাওয়ারের একটির প্রহরী ছিলেন তিনি। সেই টাওয়ার থেকে তিনি মানুষ পোড়ানোর ঘরগুলোর থেকে চিমনি দিয়ে অনবরত ধোঁয়া বের হওয়ার দৃশ্য ও উৎকট গন্ধ পেতেন।

হামবুর্গের আঞ্চলিক আদালতের ৩০০ নম্বর বড় হলে গতকাল সোমবার দ্বিতীয় দিনের শুনানির সময় ট্রলিতে বসে থাকা ৯৩ বছর বয়স্ক এই সাবেক প্রহরী শান্ত ও দৃঢ়ভাবে কথা বলেন। বুর্নো ডি তাঁর ১৭ ও ১৮ বছর বয়সে ১৯৪৪ সালের আগস্ট থেকে ১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত বন্দিশিবিরে কাজ করেন। আদালতে বুর্নো ডির কাছে জানতে চাওয়া হয়, নয় মাস বন্দিশিবিরে প্রহরী হিসেবে কাজ করার সময়ে তিনি কি জানতেন না, কেন সেখানে মানুষদের বন্দী করা হয়েছে এবং তাদের ওপর নির্যাতন, অমানবিক জীবন ও ঠান্ডা মাথায় বন্দীদের হত্যা করা হচ্ছে?

বুর্নো ডি একটি কাগজ বের করে লিখিত বিবৃতি পড়ে শোনান। তিনি বলেন, এই আদালতে আজ যাঁদের উপস্থিত থাকার কথা ছিল, তাঁদের অনেকেই মারা গেছেন। তাঁদের অনেকের মৃত্যু খুব কষ্টের ছিল। বন্দিশিবিরের লোকজনদের প্রতি অমানবিক আচরণ করা হতো। এখন তাঁর অনুতাপ হচ্ছে যে তিনি একটি নারকীয় জায়গায় কাজ করেছিলেন। তবে তিনি স্বেচ্ছায় সেখানে কাজে যোগ দেননি বলে জানান। তিনি ওই শিবিরে রুটি বানানোর কাজে নিযুক্ত হলেও তাঁকে প্রহরীর দায়িত্বে পাঠানো হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, সারা জীবন ধরে তিনি অনুতপ্ত যে ওই সময় কোনো বন্দীকে তিনি সাহায্য করতে পারেননি বলে।

স্টুটহোফ বন্দিশিবিরে নিহত অনেকের আত্মীয় শুনানির দ্বিতীয় দিনে উপস্থিত ছিলেন।

সরকারপক্ষের আইনজীবী জানান, এর আগে ওই একই বন্দিশিবিরের অন্য প্রহরীরা—যাঁদের বিচার ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে—জানিয়েছিলেন, প্রহরী টাওয়ার থেকে বন্দীদের ওপর নির্মম অত্যাচার, তাদের বুক বরাবর গুলি করে হত্যা, লাশ পোড়ানোর চুল্লিতে মৃতদেহ ঢোকানোসহ স্তূপকৃত লাশের ট্রাক—সবই দেখা যেত।

বুর্নো ডি জানান, এই বয়সে তিনি এসব স্মরণ করতে পারছেন না। তবে বন্দিশিবিরজুড়ে অনেক হাড্ডিসার মানুষ এবং অর্ধনগ্ন অনেক মানুষকে তিনি পড়ে থাকতে দেখতেন।

হামবুর্গের আঞ্চলিক আদালত জানিয়েছেন, এ বছরই স্টুটহোফ বন্দিশিবিরের সাবেক প্রহরী বুর্নো ডির বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।