জোড়া কাঁটায় বিদ্ধ বিজেপি

আদিত্য ঠাকরে ও গোপাল কান্ডা। ছবি: সংগৃহীত
আদিত্য ঠাকরে ও গোপাল কান্ডা। ছবি: সংগৃহীত

দুই রাজ্যে সরকার গড়ার আগেই জোড়া কাঁটায় বিদ্ধ হচ্ছে বিজেপি। একদিকে মহারাষ্ট্রের শরিক শিবসেনার সমানে সমানে মন্ত্রিত্বের ভাগ–বাঁটোয়ারা ও আড়াই বছর পর মুখ্যমন্ত্রীর পদ পাওয়ার দাবি, অন্যদিকে হরিয়ানায় এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থন ঘিরে ঘরে–বাইরে বিতর্ক। কী করবে বিজেপি?

সরকার গড়ায় এমনিতে কোনো সমস্যা নেই মহারাষ্ট্রে। প্রয়োজনীয় সংখ্যা বিজেপি ও শিবসেনার রয়েছে। সমস্যা হচ্ছে, শিবসেনার ক্রমশ কঠোর হয়ে ওঠার মনোভাব নিয়ে। ফল বেরোনোর পর থেকেই শিবসেনা সমানে সমানে মন্ত্রক ভাগাভাগির দাবি জানাতে শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, আড়াই বছর পর মুখ্যমন্ত্রীর পদ পাওয়ার দাবিও তারা জানিয়ে রেখেছে। শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের পুত্র আদিত্য যে উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন, তা ভোটের আগেই স্বীকৃত। কিন্তু শিবসেনা এবার আড়াই বছর পর আদিত্যকে মুখ্যমন্ত্রী করার দাবি জানাতে শুরু করেছে। তাঁর নির্বাচন কেন্দ্র মুম্বাইয়ের ওরলিতে এই দাবিতে পোস্টারও পড়েছে। বিজেপির ওপর চাপ বাড়াতে শিবসেনা তার মুখপত্র ‘সামনা’য় সরাসরি বড় শরিকের নির্বাচনী কৌশলের সমালোচনাও করেছে। বলেছে, বিরোধীদের ভাঙানো ও ঔদ্ধত্য দেখানোর মাশুল সব সময় দিতে হয়।

হরিয়ানার সমস্যা আবার অন্য ধরনের। ৯০ আসনবিশিষ্ট বিধানসভায় বিজেপি জিতেছে মাত্র ৪০টি। সরকার গড়তে গেলে তার প্রয়োজন অন্তত আরও ৬ জনের সমর্থন। সেই সমর্থন পেতে জননায়ক জনতা পার্টির (জেজেপি) দিকে না তাকিয়ে বিজেপি ব্যস্ত স্বতন্ত্র বিধায়কদের কাছে পেতে। ধাক্কাটা খেয়েছে সেখানেই।

হরিয়ানার সিরসা কেন্দ্র থেকে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গোপাল কান্ডা। তাঁরই সংস্থায় কর্মরত তরুণী গীতিকা শর্মা ২০১২ সালে আত্মহত্যা করেন। সুইসাইড নোটে তিনি দায়ী করেন গোপাল কান্ডাকে। মেয়ের মৃত্যুর পর আত্মঘাতী হন তাঁর মা–ও। এক বছর জেল খেটে জামিনে মুক্ত গোপাল ভোটে জিতে বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লি আসেন। শুক্রবার বিজেপি শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেখা করে সমর্থনের কথা জানিয়ে দেন। মোট ৮ জন স্বতন্ত্র বিধায়কই বিজেপিকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। বিতর্ক বেধেছে গোপাল কান্ডাকে নিয়ে। দলের অভ্যন্তরে যেমন, দলের বাইরেও।

বিজেপি নেত্রী ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতী শুক্রবার টুইট করে বলেছেন, ‘এই কান্ডা যদি সেই মানুষ হন যিনি একটি মেয়ে ও তার মায়ের আত্মহত্যার কারণ, তা হলে বিজেপির নৈতিক ভিত্তি ভোলা উচিত হবে না। অপরাধ বিচার শেষে প্রমাণিত হয় যেমন, তেমন নির্বাচনে জেতার অর্থ দোষমুক্ত হওয়া নয়। আমাদের এটা নিশ্চিত করা দরকার, সঙ্গীরা যেন বিজেপি কর্মীদের মতো স্বচ্ছ হন।’

শিবসেনা নেত্রী প্রিয়াংকা চতুর্বেদী বলেছেন, ‘নারীর স্পর্শকাতরতাকে সম্মান জানাতে না পারলে মানুষ আমাদের ক্ষমা করবে না। কংগ্রেসও সমালোচনায় মুখর। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একটা সময় এই গোপাল কান্ডাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিজেপি মিছিল করেছিল। সরকার গড়তে বিজেপি এখন তাঁরই মুখাপেক্ষী। কোথায় গেল “বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও”?’

এই সমালোচনার মধ্যে গোপাল কান্ডার সমর্থন নেওয়া, না নেওয়া নিয়ে বিজেপি কোনো মন্তব্য করেনি। কাল শনিবারই বোঝা যাবে সমর্থক স্বতন্ত্র বিধায়কদের মধ্যে গোপাল কান্ডা থাকছেন কি না।