কাশ্মীর যাচ্ছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগরে নারীদের সাম্প্রতিক বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগরে নারীদের সাম্প্রতিক বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

কাশ্মীর সমস্যা ক্রমশই আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে ভারতের। জাতিসংঘের আলোচনা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচনার পর পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে কাশ্মীর যাচ্ছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পার্লামেন্টের ২৮ জন প্রতিনিধি। কাল মঙ্গলবার অবরুদ্ধ কাশ্মীর যাবেন তাঁরা। তার আগে আজ সোমবার প্রতিনিধিদলের সদস্যরা দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে। সেই বৈঠকে তাঁদের কাছে জম্মু-কাশ্মীরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা হয়।

বৈঠকের পর সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ইইউ প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান। তাঁর আশা, জম্মু-কাশ্মীরসহ এই প্রতিনিধিদের ভারতের বিভিন্ন রাজ্য সফর ফলপ্রসূ হবে। জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈপরীত্য সম্পর্কে তাঁদের বোঝাপড়া সমৃদ্ধ হবে। একই সঙ্গে তাঁরা বুঝতে পারবেন, এই অঞ্চলগুলোর উন্নয়ন ও প্রশাসনে সরকার কোন কোন বিষয়কে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ইইউর সাংসদদের মোদি এ কথাও জানান, সন্ত্রাসবাদীদের যারা মদদ দেয়, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। সন্ত্রাসবাদ রুখতে ভারত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে অটল।

গত তিন মাসে এই প্রথম বিদেশিদের জম্মু-কাশ্মীরে যাওয়ার অনুমতি দিল ভারত সরকার। এত দিন কোনো বিদেশি সাংবাদিককে সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি। কোনো কূটনীতিককেও না।

গত ৫ আগস্ট ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু-কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত করে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সৃষ্টি করে। একটি জম্মু-কাশ্মীর, অন্যটি লাদাখ। একই সঙ্গে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেওয়া ওই রাজ্যের বিশেষ অধিকারগুলোও বাতিল করা হয়। সেই থেকে গোটা রাজ্যে জারি করা হয় সার্বিক নিষেধাজ্ঞা। হিন্দু-অধ্যুষিত জম্মু ও বৌদ্ধ-শিয়া মুসলমান-অধ্যুষিত লাদাখ ক্রমে স্বাভাবিক হয়ে গেলেও উপত্যকা এখনো কঠোর নিষেধাজ্ঞায় মোড়া। সেখানে জনজীবন এখনো স্বাভাবিক নয়। ইন্টারনেট নেই। স্কুল-কলেজ খোলা থাকলেও পড়ুয়া নেই। দোকানপাট অধিকাংশ সময় বন্ধ। মোবাইল ফোন পরিষেবাও সম্পূর্ণভাবে চালু হয়নি। সংবাদমাধ্যমও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। বন্দী করে রাখা হয়েছে সব রাজনৈতিক দলের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের চার শতাধিক নেতা-নেত্রীকে। মানবাধিকার হরণের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে নিত্য। এ অবস্থায় গত সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যরা মানবাধিকার রক্ষায় সরব হওয়ার পরই উপদ্রুত রাজ্য সফরের সিদ্ধান্ত নেয় ইইউর সাংসদদের এই দল।

উপত্যকায় মানুষজনের যত্রতত্র চলাফেরা নিষিদ্ধ। পুলিশ ও প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারও অসম্ভব। প্রায় তিন মাস হতে চলেছে উপত্যকায় রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি কোনো দলই নিতে পারেনি। এ অবস্থায় ইইউর সাংসদদের সফর উপলক্ষে বন্দী সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির কন্যা ইলতিজা মুফতি টুইট করে বলেন, ‘আশা করব, সাধারণ মানুষজনের সঙ্গে মিশতে ইইউর সাংসদদের স্বাধীনতা দেওয়া হবে। স্থানীয় ডাক্তার, মানুষজন ও মিডিয়ার সঙ্গে ইইউর সাংসদদের খোলামেলা কথা বলতে দেওয়া হবে। কাশ্মীর ও পৃথিবীর মধ্যে যে লৌহ কপাট খাড়া করা হয়েছে তা খুলে দেওয়া হোক।’ অন্য একটা টুইটে তিনি বলেন, ‘অবাক হচ্ছি, মার্কিন সিনেটরদের কেন এই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। অবাক হব না যদি দেখি এভাবে ভারত সরকার কাশ্মীরের স্বাভাবিকত্বের সার্টিফিকেট আদায় করে নেয়।’

ইলতিজা মুফতির এই টুইট করার কারণ, দিল্লিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাস থেকে বলা হয়েছে, সাংসদেরা কাশ্মীর যাচ্ছেন তাঁদের নিজস্ব উদ্যোগে; প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে নয়। সাংসদেরা সবাই ইতালি, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও পোল্যান্ডের অধিবাসী। স্থানীয় এক বেসরকারি সংস্থার আমন্ত্রণে তাঁদের এই সফর। সফরটি তদারকি করছে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার অফিস।