আবারও পিছিয়ে গেল ব্রেক্সিট

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের দিনক্ষণ আবারও পিছিয়ে গেছে। নতুন তারিখ ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি। যুক্তরাজ্যের অনুরোধের জবাবে আজ সোমবার বিচ্ছেদের এই নতুন দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে ইইউ।

এর ফলে আগামী বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বহুল আলোচিত এই বিচ্ছেদ ঘটার কথা থাকলেও তা আর হচ্ছে না। এ নিয়ে তিন দফা পিছিয়ে গেল ইইউ জোট থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে আসার আয়োজন।

‘বাঁচি আর মরি’ ৩১ অক্টোবর ব্রেক্সিট কার্যকর করব—এমন জোরালো প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী বরিস জনসন। কিন্তু পার্লামেন্টে বিরোধীদের উদ্যোগে প্রণীত এক আইনের কারণে (বেন অ্যাক্ট নামে পরিচিত) তিনি ইইউর কাছে বিচ্ছেদের দিনক্ষণ তিন মাস পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন জানাতে বাধ্য হন।

২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের মানুষ ইইউ জোট থেকে বিচ্ছেদের পক্ষে রায় দেয়। এই বিচ্ছেদ ‘ব্রেক্সিট’ নামে পরিচিত। বিচ্ছেদের প্রকৃত তারিখ ছিল চলতি বছরের ২৯ মার্চ। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সরকারের সম্পাদিত বিচ্ছেদ চুক্তিতে অনুমোদন দেয়নি। আবার চুক্তি ছাড়া বিচ্ছেদ কার্যকরেরও বিরোধিতা করে। ব্রিটিশ সরকার ও পার্লামেন্টের এমন বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে আটকে যায় বিচ্ছেদ। দুই দফা পিছিয়ে ব্রেক্সিটের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩১ অক্টোবর।

বরিস জনসন বিচ্ছেদ কার্যকরে নতুন একটি চুক্তিতে সম্মত হন। সংখ্যাগরিষ্ঠতাবিহীন প্রধানমন্ত্রী বরিস ৩১ অক্টোবরের আগে চুক্তিতে পার্লামেন্টের অনুমোদন আদায় করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর প্রস্তাবে সায় দেয়নি পার্লামেন্ট।

ইইউর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, সম্পাদিত বিচ্ছেদ চুক্তিতে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের অনুমোদন সাপেক্ষে আগেই ব্রেক্সিট কার্যকর করা যাবে। তিনি জানান, নীতিগতভাবে এই সময় বৃদ্ধির বিষয়ে সম্মত হয়েছে ইইউ জোট। সদস্যদেশগুলো এবারের সময় বৃদ্ধির ঘোষণাপত্রে ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে নতুন করে সমঝোতা না করার প্রতিজ্ঞাও যুক্ত করছে বলে জানা গেছে।

এদিকে বিচ্ছেদ পিছিয়ে যাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পর যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নতুন দিকে মোড় নিয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের আবারও আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব উত্থাপন করার কথা। এ প্রস্তাবে শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, ৬ নভেম্বরের মধ্যে ব্রেক্সিট বিলের কার্যক্রম শেষ করতে রাজি হলে আগামী ১২ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচন দেবে সরকার। বিরোধী দলগুলো এই প্রস্তাবে সায় দেবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভোটের ফলাফল জানা যায়নি।

এর বিপরীতে লিবারেল ডেমোক্রেটিক এবং স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এসএনপি) আগামী ৯ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব তুলছে। তাদের যুক্তি, ৯ ডিসেম্বর নির্বাচন হলে সরকার ব্রেক্সিট বিল নিয়ে পার্লামেন্টে নতুন করে আলোচনার সুযোগ পাবে না। দল দুটি ব্রেক্সিটের ঘোর বিরোধী এবং বিষয়টিতে পুনরায় গণভোট চায়।

১২ ডিসেম্বর নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব ব্যর্থ হলে বিরোধীদের আনা প্রস্তাবে সমর্থন দেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করেনি সরকার।

প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের সম্ভাবনা নাকচ করার দাবিতে আগাম নির্বাচনের বিরোধিতা করে আসছে। তবে আসন্ন ভোটাভুটি নিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেনি।

বিবিসির রাজনীতিবিষয়ক সহকারী সম্পাদক নরমান স্মিথ বলেন, ৩১ অক্টোবর ব্রেক্সিট কার্যকরের ‘বাঁচি আর মরি’ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হওয়া বরিস জনসনের জন্য বিব্রতকর। এর ফলে ব্রেক্সিটপন্থীদের হতাশ হওয়া স্বাভাবিক। তবে আগাম নির্বাচনে ‘পার্লামেন্ট বনাম জনগণ’ স্লোগানকে কাজে লাগাতে চান বরিস। তবে ব্রেক্সিটের সমাধান হওয়ার আগে আবার সাধারণ নির্বাচন সব পক্ষের জন্য মারাত্মক জুয়া খেলা।