মহারাষ্ট্রে মহা ঝামেলায় বিজেপি-শিবসেনা

মহারাষ্ট্রে বিজেপি-শিবসেনার সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত কোন দিকে গড়াবে, তা নিয়ে গভীর সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, টানা পাঁচ বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকা বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফাডনবিশ আজ মঙ্গলবার সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী তিনিই হবেন এবং টানা পাঁচ বছরের জন্য। দেবেন্দ্র এ কথাও বলেছেন, দলীয় সভাপতি অমিত শাহ তাঁকে বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী পদ আড়াই বছর করে ভাগাভাগি হবে—এমন কোনো ফর্মুলা আদৌ শিবসেনাপ্রধানের সঙ্গে আলোচিত হয়নি।

সমানে সমানে সরকার গঠন নিয়ে টানাপোড়েনের জন্যই মহারাষ্ট্র নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভবপর হয়নি। দীপাবলির পরই তা হওয়ার কথা। কিন্তু দীপাবলি কাটতেই বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী যে কথা শিবসেনাকে মনে করিয়ে দিলেন, তার রেশ কোথায় গড়ায়, তা নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।

ভোটের ফল বের হওয়ার পরপরই শিবসেনা সভাপতি উদ্ধব ঠাকরে বলেছিলেন, ভোটের আগে অমিত শাহ তাঁর বাড়ি এসেছিলেন। দুজনে সরকার গঠনের এক ফর্মুলা তৈরি করেছিলেন। তাতেই আড়াই বছর করে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ভাগাভাগির কথা ঠিক হয়েছিল। যদিও আজ সেই ফর্মুলার কথা সরাসরি অস্বীকার করলেন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাডনবিশ।

শিবসেনার মনোভাব দিন দিন কঠোর হচ্ছে। দলের মুখপত্র ‘সামনা’য় প্রতিদিন নিয়ম করে কড়া মন্তব্য প্রকাশিত হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের পর শিবসেনার শীর্ষ নেতা সঞ্জয় রাউত বলেছেন, বিজেপির কাছে ১৪৫ বিধায়ক থাকলে তারা সরকার গড়ুক।

বস্তুত সঞ্জয় রাউতই সবচেয়ে কড়া মন্তব্য করে চলেছেন, যার ফলে বিজেপির মনোভাবও কঠোর হচ্ছে। বিজেপিকে কটাক্ষ করে রাউত গতকাল সোমবার বলেন, ‘এখানে কোনো দুষ্মন্ত চৌটালা নেই, যাঁর বাবা জেল খাটছেন। এই রাজ্যে আছি আমরা, যারা ধর্ম ও সত্যের রাজনীতি করি। আছে শরদ পাওয়ারের দল, যিনি রাজ্যে বিজেপিবিরোধী হাওয়া তুলে দিয়েছেন। আর আছে কংগ্রেস, যারা জীবনে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাবে না।’ বিজেপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আশা করি, ওরা আমাদের অন্য বিকল্পের দিকে ঠেলে দেবে না।’

দেবেন্দ্র ফাডনবিশ বিরক্তি দেখিয়ে বলেছেন, ‘সামনাই প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’ বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, একসঙ্গে ভোটে লড়েও কেন যে ওরা এমন করে, সেটাই বোধগম্য হয় না। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বিজেপির কাছে কোনো ‘প্ল্যান বি’ নেই।

শিবসেনা আগেও বহুবার এমন কঠোর মনোভাব দেখিয়ে পরে নমনীয় হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পছন্দের মন্ত্রিত্ব না পাওয়ায় সরেও এসেছে। কিন্তু প্রতিবার তারা শেষ পর্যন্ত বিজেপিকে সঙ্গ দিয়েছে। এবার আধাআধি ক্ষমতা ভাগ করার দাবি, বিশেষ করে আড়াই বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রিত্ব পেতে অনড় থাকার পর তারা কী করবে, তা নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। কংগ্রেসের সমর্থনে শিবসেনা-এনসিপি সরকার গঠন সম্ভব হলেও কংগ্রেস ও এনসিপি নেতৃত্ব ওই পথে শেষ পর্যন্ত এগোবে কি না সন্দেহ। এখনো দুই দল কোনো আগ্রহ দেখায়নি। ২৮৮ সদস্যের বিধানসভায় ১০৫ আসন পেয়ে বিজেপি একক বৃহত্তম দল। শিবসেনা পেয়েছে ৫৬টি। এনসিপি ও কংগ্রেসের মিলিত আসনসংখ্যা ৯৮। তারা শিবসেনাকে সমর্থন করলে বিকল্প সরকার গঠন সম্ভব।