শ্রীনগরে ২৩ দক্ষিণপন্থী ইইউ এমপি, যাওয়া হলো না ৪ জনের

শ্রীনগর শহরে ভারতের আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। ছবি: এএফপি
শ্রীনগর শহরে ভারতের আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। ছবি: এএফপি

যাওয়ার কথা ছিল সবার। কিন্তু প্রবল বিতর্কের মধ্যে আজ মঙ্গলবার সকালে দিল্লি থেকে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগর গেলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৩ জন এমপি। চারজন ফিরে গেলেন নিজেদের দেশে। শোনা যাচ্ছে, সরকারি কড়াকড়িতে তাঁরা সায় দেননি। কেন, কী কারণে তাঁরা উপত্যকায় গেলেন না, সরকারিভাবে অবশ্য তা জানানো হয়নি। উপত্যকায় এমপিরা থাকবেন দুই দিন।

শ্রীনগর বিমানবন্দরেই উপত্যকার পরিস্থিতি সংক্ষেপে বর্ণনা করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয় অতিথিরা কী করবেন ও কী কী করবেন না। পুলিশি প্রহরায় তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় দুটি হোটেলে। সেখান থেকে তাঁরা যান ১৫ কোর সেনাসদরে। সেনাকর্তারা সেখানে জম্মু–কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদ, পাকিস্তানের মদদ, বিশেষ অধিকার কেড়ে নেওয়ার পর সার্বিক পরিস্থিতি এবং সরকারের উদ্যোগ ব্যাখ্যা করেন। সম্প্রতি পঞ্চায়েত স্তরে নির্বাচিত সরপঞ্চদের (মোড়ল) সঙ্গেও এমপিরা কথা বলেন। বিকেলে তাঁরা ডাল লেক ঘুরে দেখেন।

এই সফরকে কেন্দ্র করে দেশে–বিদেশে শুরু হয়েছে প্রবল সমালোচনা। সমালোচনা বহুমুখী। কংগ্রেস ও বামপন্থীরা সরাসরি জানতে চেয়েছেন, কেন দেশের নেতাদের বিমানবন্দর থেকে জবরদস্তি ফেরত পাঠানো হচ্ছে, অথচ বিদেশিদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? প্রশ্ন উঠেছে সফরকারী এমপিদের রাজনৈতিক চরিত্র নিয়েও। যে ২৮ জন সদস্য ভারতে আসেন, তাঁদের মধ্যে ২৪ জনই অতি দক্ষিণপন্থী দলের সদস্য। তাঁরা সবাই শরণার্থী ও অভিবাসীবিরোধী। কেউ কেউ ফ্যাসিবাদের প্রবল অনুগামীও। এমন ধরনের এমপিদের কেন কাশ্মীর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কোন উদ্দেশ্যে, সরকারের সেই অভিপ্রায় নিয়েই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলে দিলেন। কাশ্মীরের নেতারা সরাসরিই বলছেন, সম আদর্শের বিদেশিদের কাছ থেকে স্বাভাবিকতার সার্টিফিকেট পেতেই এই আয়োজন। ফ্রান্সের অতি দক্ষিণ ‘ন্যাশনাল র‍্যালি’র থিয়েরে মারিয়ানি ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘কাশ্মীরের পরিস্থিতি দেখতে যাচ্ছি। সেটাই দেখব, যা আমাদের দেখানো হবে।’

কী দেখানো হবে? প্রশাসন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলাবে। শিকারা মালিকদের সঙ্গে কথা বলাবে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গেও কথা বলাবে। কিন্তু নিজেদের মর্জিতে কাউকে ঘুরতে দেবে না। কারণ হিসেবে ‘নিরাপত্তা’ খাড়া করা হয়েছে। নিজের ইচ্ছামতো ঘুরতে চান বলেই উত্তর–পশ্চিম ইংল্যান্ডের সাংসদ ক্রিস ডেভিসকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়নি। তিনি বলেছেন, তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি শর্ত দেন তাঁকে ইচ্ছেমতো ঘুরতে দিতে হবে। এরপরই আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করা হয়। ওখানকার আরও একজন এমপি তেরেসা গ্রিফিন জানিয়েছেন, তাঁরা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অভিমত প্রকাশ করছেন না। কাশ্মীর মুক্ত হোক। সাংবিধানিক অধিকার ফেরত আসুক।

নিরাপত্তার প্রশ্ন অবশ্য অবান্তর নয়। মঙ্গলবারই দক্ষিণ কাশ্মীর ও পুরোনো শ্রীনগরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীদের ইট–ছোড়াছুড়ি হয়েছে। আগের দিন গ্রেনেড আক্রমণ হয়েছে। আহত হয়েছেন ১৯ জন সাধারণ নাগরিক। গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে নিরাপত্তারক্ষীদের লক্ষ্য করেও। দোকানপাট ও বাজারহাট বন্ধ। সরকারের কথায় যদিও পরিস্থিতি স্বাভাবিক।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই সফরকে ‘গাইডেড ট্যুর’ বলেছেন। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র বলেছেন, ‘দেশের এমপিদের আটকানো হচ্ছে, বিদেশিদের বরণ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অভিনব জাতীয়তাবাদ!’ শশী থারুর বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত গণতন্ত্রের অপমান।’ এটা কোন ধরনের জাতীয়তাবাদ জানতে চেয়েছেন জয়রাম রমেশ। আনন্দ শর্মা বলেছেন, সরকার এটা না করলেই ভালো হতো। কারণ, এতে সমস্যার আন্তর্জাতিকীকরণ হয়ে যাবে। ন্যাশনাল কনফারেন্স একে ‘পি আর এক্সারসাইজ’ বা জনসংযোগ অনুশীলন বলেছে। আর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি টুইট করে বলেছেন, ‘রাজনৈতিক বন্দীদের রাখতে হোটেল খরচ ৩ কোটি রুপি। অন্যদিকে, ভিনদেশি এমপিরা সাজানো–গোছানো পিকনিক করতে এসেছেন। স্বাভাবিক কাশ্মীরের নতুন নমুনা!’