যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচন ১২ ডিসেম্বর

ব্রেক্সিট
ব্রেক্সিট

আগামী ১২ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচন। গতকাল মঙ্গলবার সরকারের তোলা আগাম নির্বাচনের প্রস্তাবে বিরোধী দলগুলো সায় দিলে এই মধ্যবর্তী নির্বাচনের পথ সুগম হয়। নিয়ম অনুযায়ী দেশটিতে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু গত পাঁচ বছরের কম সময়ে দেশটিতে এটি তৃতীয় সাধারণ নির্বাচন। আর গত ১০০ বছরের ইতিহাসে ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের দ্বিতীয় ঘটনা।

সরকার বনাম পার্লামেন্টের মুখোমুখি অবস্থানে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ কার্যকর করা যায়নি। সর্বশেষ ৩১ অক্টোবর আলোচিত এই বিচ্ছেদ কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা পিছিয়ে যায়। নতুন দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়েছে ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি। ব্রেক্সিট নিয়ে এমন অচলাবস্থার অবসানে অবশেষে আগাম সাধারণ নির্বাচনের পথ বেছে নিয়েছে যুক্তরাজ্য।

ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ কার্যকরে অবিচল প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এই নির্বাচনের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরতে চান। বরিস বলেন, নির্বাচনের এই লড়াই হবে বেশ কঠিন। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেন, দেশকে ঢেলে সাজাতে এই মধ্যবর্তী নির্বাচন প্রজন্মের একমাত্র সুযোগ। দেশে প্রকৃত পরিবর্তন নিশ্চিত করার জন্য তিনি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ইশতেহার নিয়ে তুমুল প্রচারণার ঘোষণা দিয়েছেন।

ব্রেক্সিট কার্যকরে পার্লামেন্টের সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইতিপূর্বে তিন দফা আগাম সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তাব তোলেন। বিরোধী দলগুলো তাতে সমর্থন দেয়নি। ফলে ফিক্সড টার্ম পার্লামেন্ট অ্যাক্টের অধীনে তোলা ওই সব প্রস্তাবে প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ আইনপ্রণেতার সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হন তিনি। সর্বশেষ গতকাল সংক্ষিপ্ত বিল আকারে আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব তোলেন বরিস। এতে কেবল সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন ছিল। তবে ঝুঁকি ছিল, বিলে সংশোধনী প্রস্তাব জুড়ে দিতে পারতেন বিরোধীরা।

এসএনপি এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষ থেকে ১৬ ও ১৭ বছর বয়সীদের ভোটাধিকার এবং যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ইইউর নাগরিকদের ভোটের অধিকার দেওয়ার সংশোধনী প্রস্তাব তোলা হয়। কিন্তু অধিবেশন সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকা ডেপুটি স্পিকার লিন্ডসে হার্ভি হোয়েল প্রস্তাব দুটি বিতর্কের জন্য বাছাই করেননি। এতে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে সরকার। কনজারভেটিভের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এসব সংশোধনী যুক্ত হলে তারা বিলটি প্রত্যাহার করে নেবে। নির্বাচনের দিনক্ষণ তিন দিন এগিয়ে ৯ ডিসেম্বর করতে লেবার পার্টির আনা একটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়। শেষ পর্যন্ত ৪৩৮ বনাম ২০ ভোটের ব্যবধানে হাউস অব কমনসে পাস হয় আগাম নির্বাচনের বিল। আজ বুধবার বিলটি উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসে বিনা বাধায় পাস হয়ে আইনে পরিণত হওয়ার কথা।

কনজারভেটিভ পার্টি বলছে, দেশের জনগণ এই নির্বাচন চায়নি। সরকারও এই নির্বাচন চায়নি। কিন্তু সরকার বনাম পার্লামেন্টের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে এই নির্বাচন অনিবার্য হয়ে পড়ে। নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত এবং ব্রেক্সিট বিষয়ে ধোঁয়াশা অবস্থান নিয়ে থাকা লেবার পার্টি এই নির্বাচনে মোটেই রাজি ছিল না। অনেকটা মুখ বাঁচাতে নির্বাচনের প্রস্তাবে সমর্থন দিতে বাধ্য হয়। দলটির শতাধিক আইনপ্রণেতা আগাম নির্বাচনের বিলে ভোটদান থেকে বিরত থাকেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ব্রেক্সিট কার্যকর করতে জনগণের কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফেরার আহ্বান জানাবে। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং এসএনপি ব্রেক্সিট বাতিল করতে জনসমর্থন চাইবে। কিন্তু ব্রেক্সিটময় এই নির্বাচনে ব্রেক্সিট নিয়ে লেবার পার্টির সুস্পষ্ট বক্তব্য নেই। এ কারণেই দলটির অনেক আইনপ্রণেতার জন্য প্রচারণা কঠিন হবে।

তবে বাম ধারার রাজনীতিক করবিন ২০১৭ সালের মতো এবারও রেলওয়ে, জ্বালানি সরবরাহ (বিদ্যুৎ, গ্যাস) কোম্পানি রাষ্ট্রীয় মালিকানায় ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় কল্যাণ সুবিধা উদার করার ইশতেহার যুক্ত করে প্রচারণার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন বলে ধারণা।