অস্ট্রেলিয়া থেকে বিতাড়নের ঝুঁকিতে এক শিশু

শিশু আদিয়ান। ছবি: সংগৃহীত
শিশু আদিয়ান। ছবি: সংগৃহীত

আদিয়ানের ‘কিছুটা প্রতিবন্ধিতা’ আছে। আর তাতেই পাঁচ বছর বয়সী শিশুটি অস্ট্রেলিয়ার কঠোর অভিবাসন নীতিমালার বেড়াজালে আটকে পড়েছে। শিশুটিকে তার মা-বাবার সঙ্গে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দিতে চাইছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার। আজ রোববার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আদিয়ানের ‘কিছুটা প্রতিবন্ধিতা’ অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে—এই অজুহাতে পরিবারটির স্থায়ী ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এ অবস্থায় আদিয়ানসহ পরিবারটি অস্ট্রেলিয়া থেকে বিতাড়িত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।

অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী বাংলাদেশি মেহেদি হাসান ভুঁইয়া ও রেবেকা সুলতানা দম্পতির ছেলে আদিয়ান। আদিয়ানের জন্ম অস্ট্রেলিয়াতেই।

মেহেদি হাসান শিক্ষার্থী ভিসায় ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়া যান। পরের বছর বাংলাদেশে তাঁর আর রেবেকার বিয়ে হয়। ২০১৩ সালে রেবেকা অস্ট্রেলিয়ায় যান। একই বছরের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়ায় জিলং হাসপাতালে আদিয়ানের জন্ম হয়।

জন্মের কয়েক মাস পর মা-বাবা খেয়াল করেন, নিজে থেকে মাথা তুলতে আদিয়ানের কষ্ট হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে, আদিয়ানের হালকা সেরিব্রাল পালসি (মস্তিষ্কে পক্ষাঘাত) আছে। জন্মের আগে আগে বা পরে স্ট্রোক থেকে তার এই সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।

মেহেদি হাসান বাংলাদেশ থেকে ডিগ্রি নেন। পরে দক্ষিণ কোরিয়ায় মাস্টার্স করেন। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার ডেয়াকিন ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি প্রকৌশলবিদ্যায় পিএইচডি করেন।

মেহেদি হাসানের স্থায়ী দক্ষ অভিবাসী ভিসার আবেদন মনোনয়ন দেয় ভিক্টোরিয়া রাজ্য সরকার। কিন্তু আদিয়ানের কিছুটা প্রতিবন্ধিতার কারণে অস্ট্রেলিয়ার কঠোর অভিবাসন নীতির আওতায় ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়।

ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধে পরে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে পরিবারটি।

ট্রাইব্যুনাল আড়াই বছর পর ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন।

বাবা-মায়ের সঙ্গে আদিয়ান। ছবি: সংগৃহীত
বাবা-মায়ের সঙ্গে আদিয়ান। ছবি: সংগৃহীত

২০১৯ সালে আদিয়ানের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বলা হয়েছে, তার কর্মকাণ্ডে কিছুটা অক্ষমতা রয়েছে। এটা স্থায়ী হতে পারে। এর জন্য তার কমিউনিটি-সেবা লাগতে পারে। স্কুলেও অতিরিক্ত সহায়তা দিতে হতে পারে।

মেহেদি হাসান বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না, বাম পাশে কিছুটা দুর্বলতা থাকার কারণে কেন একটি শিশুর বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন হবে। আমি যতটুকু জানি, বিশেষ শিক্ষা তাদের জন্য দরকার, যারা মূলধারার স্কুলগুলোতে যোগ দিতে অক্ষম।’

গার্ডিয়ান অস্ট্রেলিয়া আদিয়ানের একটি পৃথক স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন থেকে জেনেছে, আদিয়ান নিজে থেকে চলাফেরা করতে পারে। সে কথাবার্তা ভালোই বলে। ফুটবল খেলতে পছন্দ করে। প্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রেও সে বেশ কিছু উন্নতি করেছে। শুধু অসমতল উঁচুনিচু পথ চলতে তার অন্যের সাহায্য লাগে। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তাকে আগেভাগে স্কুল শুরু করে দেওয়া এবং অস্ট্রেলিয়া বা বাংলাদেশে তার নিয়মিত থেরাপি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

মেহেদি হাসান জানান, তাঁর ছেলে প্রতিদিন শিশুদের স্কুলে যাচ্ছে। তাঁরা তাকে থেরাপি দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘ও এখন অনেক ভালো, অনেক ভালো হয়ে উঠেছে। স্কুলে যাচ্ছে, সবকিছু শিখছে। বাড়িতে বসে শিশুদের ভিডিও দেখছে। সে এখন জিনিসপত্র ধরতে পারে।’

অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসের শেষ সুযোগ হিসেবে পরিবারটি এখন দেশটির অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড কোলম্যানের কাছে আবেদন জানিয়েছে। ভিসা মঞ্জুর বা প্রত্যাখ্যানের ক্ষমতা রয়েছে এই মন্ত্রীর।

মেহেদি হাসান পিরবার এখন ‘ব্রিজিং ভিসা ই’এর আওতায় অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে। এই ভিসার মেয়াদ তিন মাস। মন্ত্রীর কাছে আবেদনের ফল জানতে এখন পরিবারটি অপেক্ষায় আছে।

মেহেদি হাসান একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। তাঁর স্ত্রী সুলতানা রেবেকা অস্ট্রেলিয়ায় চিকিৎসক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

মেহেদি হাসান বলেন, ‘প্রতি তিন মাস পরপর ভিসার মেয়াদ বাড়াতে হচ্ছে। এটা আমার জন্য অনেক কঠিন সময়।’

মেহেদি হাসান বলেন, অন্য দেশে তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। তবে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে চান। এখানেই তাঁর ছেলেকে পড়াশোনা করাতে চান।

অতীতে প্রায় একই পরিস্থিতিতে পড়া একাধিক পরিবারের ভিসা অনুমোদন করেছিলেন দেশটির অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী।