কেন দুই তরুণীর আত্মহত্যা

পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের থর এলাকায় একই পরিবারের দুই তরুণীর একসঙ্গে ‘আত্মহত্যার’ ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তদন্তে নেমে কিছুটা দিশেহারা হয়েই পড়েছে পুলিশ। তাঁরা কেন একসঙ্গে আত্মহত্যা করেছেন, এর কোনো কারণই খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

গত রোববার থর এলাকার ইসলামকোটের কেহরি গ্রামের দুই তরুণী নাথু বাই ও ভিরু বাইয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁদের দুজনেরই আনুমানিক বয়স ২০ বছর। সম্পর্কে একে অপরের জা। তাঁদের স্বামী আপন দুই ভাই। তাঁদের নাম চমন কোহলি ও পেহলাজ কোহলি। এর মধ্যে ভিরু বাইয়ের এক বছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। ছয় মাস ধরে চাষের সুবিধার জন্য তাঁরা গ্রাম থেকে একটু দূরে তাঁদের খেতের কাছে থাকছিলেন।

পাকিস্তানের এই থর প্রদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও এটি দেশটির অন্যতম দরিদ্র অঞ্চল। তবে বছরের এই সময়টা ফসল তোলার মৌসুম। তাই ক্ষুধার জন্য এই তরুণীরা আত্মহত্যা করেছেন, এমনটা ভাবছে না পুলিশ।

পুলিশ বলছে, তারা কোনো কারণই খুঁজে পাচ্ছে না। স্থানীয় থানা-পুলিশের প্রধান পরিদর্শক কবির খান বলেন, ‘আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে এটা আত্মহত্যা বলেই মনে হয়েছে। তবে আমরা এখনো তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। কেন তাঁরা আত্মহত্যা করেছেন, এটা বলা আসলেই আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন ফসল তোলার সময় তাই বলা যাচ্ছে না ক্ষুধার জন্য এটা হয়েছে। অতিরিক্ত কাজের চাপ ও অবহেলায় পারিবারিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

প্রতিবেশী এক ব্যক্তি জানান, দুই নারীর আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে তাঁদের স্বামীদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন তিনি। কোহলি ভাইয়েরা জানান, আত্মহত্যা করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।

তবে ওই প্রতিবেশী মনে করেন, পারিবারিক সমস্যার কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, এখানকার মানুষেরা খুব গরিব। দিনে আনে দিনে খায়। তাঁরা কয়েক মাস ধরে খেতে কাজ করছিলেন। মাঝেমধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়েছে তাঁদের। তাঁরা সবাই বয়সে তরুণ। হয়তো ক্ষোভ থেকেই এই ভয়ংকর কাজ তাঁরা করেছেন।

স্থানীয় লোকজন প্রথমে দুই নারীর লাশ দেখতে পান। তাঁরাই পুলিশে খবর দেন। লাশের গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। লাশ উদ্ধার করে ইসলামকোটের একটি স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সেখানে ওই দুই নারীর মা–বাবা, ভাইবোনসহ শ্বশুরবাড়ির সবাই উপস্থিত ছিলেন। চারদিকে একটি শোকের পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

সিভিল সোসাইটি গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত থর এলাকায় ৫৯টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৩৮ জনই নারী। দুটি শিশুও রয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে এই প্রদেশে ১৯৮ জন আত্মহত্যা করে।