অযোধ্যার রায়ের আগে উত্তর প্রদেশের কর্মকর্তাদের তলব

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ অযোধ্যার স্পর্শকাতর রাম মন্দির নির্মাণসংক্রান্ত মামলার রায় ঘোষণার আগে উত্তর প্রদেশ রাজ্যের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আজ শুক্রবার এ তথ্য জানা গেছে। প্রধান বিচারপতি গগৈ আলোচনার জন্য উত্তর প্রদেশের মুখ্য সচিব ও পুলিশপ্রধানকে নিজের চেম্বারে ডেকেছেন।

ভারতের রাজনীতিতে এ রায়ের ফলে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। রায়ের আগে-পরে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতেই প্রধান বিচারপতির তলব বলে জানা গেছে।

আগামী সপ্তাহেই বিতর্কিত অযোধ্যা মামলার রায় দিতে পারেন ভারতের শীর্ষ আদালত। মনে করা হচ্ছে, ১৭ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ অবসর গ্রহণের আগে রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ জমি বিরোধ মামলায় নিজের রায় দেবেন। ভারতের পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেবেন বিচারপতি এস এ বোবদে। তিনি অযোধ্যা মামলাটিকে ‘বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ’ মামলা বলে অভিহিত করেছেন।
৬৩ বছর বয়সী প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ১৩৩ বছরের পুরোনো এই মামলাটির ৪০ দিনেরও বেশি শুনানি হয়েছে। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে লক্ষ্ণৌতে শীর্ষ পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে তিন ঘণ্টার একটি পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। মুখ্যমন্ত্রী যে কোনো সম্ভাব্য জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য দুটি হেলিকপ্টার প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্য একটি হেলিকপ্টার থাকবে লক্ষ্ণৌতে, অন্যটি অযোধ্যায়।

ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের সব ঊর্ধ্বতন জেলা কর্মকর্তাকে তাঁদের জেলার আওতাভুক্ত গ্রাম ও ছোট শহর এবং নানা জায়গায় থাকা শিবির পরিদর্শন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অযোধ্যায় যেকোনো মূল্যে শান্তি বজায় রাখার কথাই বলা হয়েছে ওই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে।

আগামী কয়েক দিন উত্তর প্রদেশে জনসমক্ষে যেকোনো ধরনের উৎসব বা আয়োজন বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত অযোধ্যায় যেকোনো জনসমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পুলিশ বলেছে, পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করলে জাতীয় নিরাপত্তা আইনের মতো কঠোর আইনের প্রয়োগ করা হবে।


প্রায় কয়েক দশক ধরে আদালতে বিচারাধীন রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর এই মামলাটি। ২ দশমিক ৭৭ একর জমি নিয়েই এ দ্বন্দ্ব। এ জমির দাবিদার হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ই। ভারতের রাজনীতি এই রাম মন্দির ও বাবরি মসজিদ বিষয়টি ছিল ১৯৮০-এর দশকের অন্যতম রাজনৈতিক ইস্যু। ১৯৯২ সালে ষোড়শ শতকে নির্মিত মসজিদটি গুঁড়িয়ে দেয় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। তাদের বিশ্বাস, ভগবান রামচন্দ্রের জন্মভূমিতে এই মসজিদ তৈরি করা হয়েছে। সেই হিংসার ঘটনায় দেশজুড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

চলতি বছরের গোড়ার দিকে মধ্যস্থতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। আর এর জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়। মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় ৬ আগস্ট থেকে অযোধ্যা মামলার নিয়মিত শুনানি শুরু করেন সুপ্রিম কোর্ট।