গান্ধী পরিবারের বিশেষ নিরাপত্তা প্রত্যাহার

কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী, তাঁর ছেলে রাহুল গান্ধী ও মেয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র
কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী, তাঁর ছেলে রাহুল গান্ধী ও মেয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র

গান্ধী পরিবারের সদস্যরা স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি) নিরাপত্তা আর পাবে না। এখন থেকে কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী, তাঁর ছেলে রাহুল গান্ধী ও মেয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র জেড প্লাস ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পাবেন। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের একাধিক সূত্র এ কথা নিশ্চিত করেছে। যদিও গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্ররা বলেছে, এ বিষয়ে তারা জানে না।

জেড প্লাস নিরাপত্তাব্যবস্থার মানে হলো, গান্ধী পরিবারের সদস্যদের পাহারায় এখন থেকে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) সদস্যরা থাকবেন। আর এসপিজি হলো তিন হাজার সদস্যের এলিট ফোর্স। এই বাহিনীর ওপর এখন কেবল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিরাপত্তার দায়িত্ব চাপানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের সূত্রগুলো বলেছে, রাজনীতিকদের ওপর হামলার আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতেই তাঁদের নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যালোচনা করা হয়। সম্প্রতি গান্ধী পরিবারের নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যালোচনা করে দেখার পরই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নাম না প্রকাশের শর্তে এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, এসপিজি নিরাপত্তার আওতায় যাঁরা রয়েছেন, প্রতিবছরই তাঁদের ওপর হামলার আশঙ্কা কতটা রয়েছে, তা পর্যালোচনা করে দেখা হয়। গান্ধী পরিবারের ওপর হামলার আশঙ্কা অনেকটাই কমে গিয়েছে বলে সম্প্রতি দেখা গেছে। তাই এসপিজি নিরাপত্তার বদলে অন্য বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আততায়ীদের হাতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী খুন হওয়ার পর ১৯৮৫ সালে বিশেষ প্রশিক্ষিত বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে গঠিত হয় এসপিজি নিরাপত্তাব্যবস্থা। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় তাদের হাতে। ১৯৯১ সালে গান্ধী পরিবার থেকেই আরও এক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী খুন হলে বদল আনা হয় ওই আইনে। ঠিক হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা আরও ১০ বছর এসপিজি নিরাপত্তা পাবেন। ২০০৩ সালে অটল বিহারি বাজপেয়ির আমলে আবার ওই আইনে বদল ঘটিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের ক্ষেত্রে এসপিজি নিরাপত্তার মেয়াদ ১০ থেকে কমিয়ে ১ বছর করা হয়। তবে হামলার আশঙ্কা পর্যালোচনা করে বিশেষ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থাও রাখা রাখা হয় সেই সময়।

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর এত দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও তাঁর পরিবার এসপিজি নিরাপত্তা পেত। একই পরিবারের দুই প্রধানমন্ত্রী আততায়ীদের হাতে খুন হওয়ায় গান্ধী পরিবারকেও ওই নিরাপত্তা দেওয়া হতো। কিন্তু গত আগস্ট মাসে প্রথমে মনমোহন সিংহ ও তাঁর পরিবারের এসপিজি নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়। তারপরই সোনিয়া-রাহুলদের নিরাপত্তা কাটছাঁট করার নেওয়া সিদ্ধান্ত হলো। এর আগে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেব গৌড়া এবং ভিপি সিংহের এসপিজি নিরাপত্তাও তুলে নেওয়া হয়।

জম্মু-কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বিলোপের পর এক দিকে অমিত শাহর নিরাপত্তা যেখানে বাড়িয়ে জেড প্লাস থেকে জেড স্পেশাল করা হয়েছে, সেখানে সোনিয়া-রাহুলদের নিরাপত্তা কেন কমিয়ে দেওয়া হলো, তা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই বিজেপি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ইতিমধ্যে কেন্দ্রকে আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস নেতা আহমেদ প্যাটেল।