অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ: ফিরে দেখা পাঁচ শতাব্দী

ভাঙা হচ্ছে বাবরি মসজিদ।  ফাইল ছবি
ভাঙা হচ্ছে বাবরি মসজিদ। ফাইল ছবি


১৫২৮: কিছু হিন্দুর মতে, হিন্দুধর্মের অন্যতম আরাধ্য দেবতা রাম যেখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেখানে একটি মসজিদ তৈরি করা হয়।

১৮৫৩: ধর্মকে কেন্দ্র করে প্রথমবারের মতো সহিংসতার ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।

১৯৪৯: মসজিদের ভেতর রামের মূর্তি দেখা যায়। হিন্দুদের বিরুদ্ধে মূর্তিগুলো রাখার অভিযোগ ওঠে। মুসলমানরা প্রতিবাদ জানান এবং দুই পক্ষই দেওয়ানি মামলা করে। সরকার ওই চত্বরকে বিতর্কিত জায়গা বলে ঘোষণা দেয় এবং দরজা বন্ধ করে দেয়।

১৯৮৪: বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) নেতৃত্বে রামের জন্মস্থান উদ্ধার এবং তাঁর সম্মানে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করেন হিন্দুরা। তৎকালীন বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি (পরবর্তী সময়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) ওই প্রচারণায় নেতৃত্ব নেন।

১৯৮৬: বিচারক আদেশ দেন, যেন বিতর্কিত মসজিদের দরজা উন্মুক্ত করে দিয়ে হিন্দুদের সেখানে উপাসনার সুযোগ দেওয়া হয়। মুসলমানরা এর প্রতিবাদে বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি গঠন করেন।

১৯৮৯: বিতর্কিত মসজিদসংলগ্ন জায়গায় রামমন্দিরের ভিত্তি স্থাপন করে নতুন প্রচারণা শুরু করে ভিএইচপি।

১৯৯০: ভিএইচপির কর্মীরা মসজিদের আংশিক ক্ষতিসাধন করেন। প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখর আলোচনার মাধ্যমে বিতর্ক সমাধানের চেষ্টা করলেও তা পরের বছর বিফল হয়।

১৯৯২: ভিএইচপি, বিজেপি এবং শিবসেনা পার্টির সমর্থকেরা মসজিদটি ধ্বংস করে। এর ফলে পুরো ভারতে হিন্দু–মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গায় ২ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়।

২০০১: মসজিদ ধ্বংসের বার্ষিকীতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ওই স্থানে আবারও মন্দির তৈরির দাবি তোলে ভিএইচপি।

জানুয়ারি ২০০২: নিজের কার্যালয়ে অযোধ্যা সেল তৈরি করেন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ি।

ফেব্রুয়ারি ২০০২: উত্তর প্রদেশের নির্বাচনের তফসিলে মন্দির তৈরির বিষয়টি বাদ দেয় বিজেপি। ভিএইচপি ১৫ মার্চের মধ্যে মন্দির নির্মাণকাজ শুরু করার ঘোষণা দেয়। শত শত স্বেচ্ছাসেবক বিতর্কিত স্থানে জড়ো হন। অযোধ্যা থেকে ফিরতে থাকা হিন্দু অ্যাকটিভিস্টদের বহনকারী একটি ট্রেনে হামলার ঘটনায় অন্তত ৫৮ জন মারা যায়।

মার্চ ২০০২: ট্রেন হামলার জের ধরে গুজরাটে হওয়া দাঙ্গায় ১ হাজার থেকে ২ হাজার মানুষ মারা যায়।

এপ্রিল ২০০২: ধর্মীয়ভাবে পবিত্র হিসেবে বিবেচিত জায়গাটির মালিকানার দাবিদার কারা, তা নির্ধারণ করতে হাইকোর্টের তিনজন বিচারক শুনানি শুরু করেন।

জানুয়ারি ২০০৩: ওই স্থানে ঈশ্বর রামের মন্দিরের নিদর্শন আছে কি না, তা যাচাই করতে আদালতের নির্দেশে নৃতত্ত্ববিদেরা জরিপ শুরু করেন।

আগস্ট ২০০৩: জরিপে প্রকাশিত হয় যে মসজিদের নিচে মন্দিরের চিহ্ন রয়েছে, কিন্তু মুসলমানরা এই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

সেপ্টেম্বর ২০০৩: বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পেছনে উসকানি দেওয়ায় সাতজন হিন্দু নেতাকে বিচারের আওতায় আনা উচিত বলে রুল জারি করেন একটি আদালত।

অক্টোবর ২০০৪: বিজেপি নেতা আদভানি জানান, তাঁর দল এখনো অযোধ্যায় মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তা অবশ্যম্ভাবী।

নভেম্বর ২০০৪: উত্তর প্রদেশের একটি আদালত রায় দেন যে মসজিদ ধ্বংস করার সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকায় আদভানিকে রেহাই দিয়ে আদালতের জারি করা পূর্ববর্তী আদেশ পুনর্যাচাই করা উচিত।

জুলাই ২০০৫: দুর্বৃত্তরা বিস্ফোরকভর্তি একটি জিপ দিয়ে বিতর্কিত স্থানটিতে হামলা চালিয়ে সেখানকার চত্বরের দেয়ালে গর্ত তৈরি করে। নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহত হয় ছয়জন, যাদের মধ্যে পাঁচজনই জঙ্গি বলে দাবি করে নিরাপত্তারক্ষীরা।

জুন ২০০৯: মসজিদ ধ্বংস হওয়া সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে থাকা লিবারহান কমিশন তদন্ত শুরু করার ১৭ বছর পর তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।

নভেম্বর ২০০৯: প্রকাশিত লিবারহান কমিশনের প্রতিবেদনে মসজিদ ধ্বংসের পেছনে বিজেপির শীর্ষ রাজনীতিবিদদের ভূমিকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয় এবং এ নিয়ে সংসদে হট্টগোল হয়।

সেপ্টেম্বর ২০১০: এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দেন যে স্থানটির নিয়ন্ত্রণ ভাগাভাগি করে দেওয়া উচিত। কোর্টের রায় অনুযায়ী, এক-তৃতীয়াংশের নিয়ন্ত্রণ মুসলমানদের, এক-তৃতীয়াংশ হিন্দুদের এবং বাকি অংশ ‘নির্মোহী আখারা’ গোষ্ঠীর কাছে দেওয়া উচিত। যেই অংশটি বিতর্কের কেন্দ্র, যেখানে মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছিল, তার নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয় হিন্দুদের কাছে। একজন মুসলমান আইনজীবী বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।

মে ২০১১: ২০১০ সালের রায়ের বিরুদ্ধে হিন্দু ও মুসলিম দুই পক্ষই আপিল করায় হাইকোর্টের পূর্ববর্তী রায় বাতিল করেন সুপ্রিম কোর্ট।

৯ নভেম্বর ২০১৯: সে জায়গাটিতে মন্দির তৈরির পক্ষেই চূড়ান্ত রায় দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।