হংকংয়ে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ল বিক্ষোভ

হংকংয়ের চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল রাতে বিক্ষোভ চলে। ছবি: রয়টার্স
হংকংয়ের চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল রাতে বিক্ষোভ চলে। ছবি: রয়টার্স

হংকংয়ে শীর্ষস্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতভর সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। আজ বুধবারও এই আন্দোলন চলমান। কয়েক মাস ধরে উত্তাল হংকংয়ে অস্থিরতা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

হংকংয়ের চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারীরা গতকাল মঙ্গলবার গুলি ছোড়ে, পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করেন। পুলিশও পাল্টা কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়েছে।

পুলিশ আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সরিয়ে নিতে চাইছিল বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার নগরের বিভিন্ন জায়গায় সহিংস বিক্ষোভ চলছে।

ক্যাম্পাসে প্রবেশের সিদ্ধান্ত পুলিশের কৌশলগত পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে। সংবাদদাতারা বলছেন, পুলিশ এত দিন স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অপসারণ কার্যক্রম বহুলাংশে এড়িয়ে গেছে।

শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, নিরাপত্তার কারণে কাল বৃহস্পতিবার সব স্কুলের একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত রাখা হবে।

বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকটি মেট্রোস্টেশনে টানা তৃতীয় দিনের মতো ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। সকাল থেকে স্টেশনে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে।

বুধবার সকালে ইউন লং এলাকায় একদল বিক্ষোভকারী ব্যারিকেড বসিয়ে রাস্তা অবরোধ করলে সংঘর্ষ শুরু হয়।

ছাত্রনেতা-কর্মীরাও এই অঞ্চলটির বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন। অন্যদিকে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, মূল ভূখণ্ডের শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য সীমান্ত পার করে চীনে আনা হয়েছে।

লেজিসলেটিভ কাউন্সিল নামে পরিচিত নগরীর সংসদের একটি অধিবেশন সংক্ষিপ্তভাবে স্থগিত করা হয়েছে। বিরোধী রাজনীতিবিদেরা পুলিশি বর্বরতার অভিযোগে নিরাপত্তা প্রধানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের আন্দোলনের মুখে আজকের অধিবেশন স্থগিত করা হয়।

আজ দুপুরে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সরকারবিরোধী স্লোগান দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিক্ষুব্ধ জনতাকে একত্র হতে দেখা যায়। কালো পোশাক পরা বিক্ষোভকারীরা মূল ভূখণ্ডের ব্যাংকের একটি শাখাতেও ভাঙচুর চালিয়েছেন।

চলতি সপ্তাহে রাস্তায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। হংকংয়ের আর্থিক কেন্দ্রস্থলে মধ্যাহ্নভোজের সময় বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। সপ্তাহের প্রথম দিনেই আন্দোলন চলার ঘটনা এই প্রথম।

শুক্রবার ২২ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী মারা যান। এ ঘটনার পর সপ্তাহান্তে নজরদারি চালায় পুলিশ। তবু সোমবার থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন হংকংবাসী।

এক সপ্তাহ আগে পুলিশি অভিযানের সময় গাড়ি পার্কের কাছে পড়ে আহত হওয়া অ্যালেক্স চাউকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সোমবারে এক পুলিশ কর্মকর্তা আন্দোলনরত এক কর্মীর ধড়ে গুলি ছুড়লে সহিংসতা আরও বেড়ে যায়। সেদিনই বিক্ষোভকারীরা সরকারের এক সমর্থকের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন।

গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ হংকংয়ের চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিইউএইচকে) মাঠে কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান নিয়ে সরে যায়। বিক্ষোভকারীরা তাঁদের লক্ষ্য করে ইট এবং পেট্রলবোমা ছোড়েন।

সারা রাত ধরে বিস্ফোরণ, ধোঁয়া ও রাবার বুলেটের ছড়াছড়ি দেখা যায়। এই সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়।

এক শিক্ষার্থী বিবিসি অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, এই আন্দোলন কেবল হংকংয়ের চীনা বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষা করার জন্য চলছে না। এটি রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং হংকংবাসীদের যে অধিকারগুলো পাওয়া উচিত, তা রক্ষার মানবিক চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে।

স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, সংঘর্ষের পর মেডিকেল প্রতিনিধিরা অন্তত ৭০ জনকে চিকিৎসা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কমপক্ষে ৪ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।

বুধবার ছাত্রপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার জন্য তাঁরা আদালতের নির্দেশনা চেয়েছেন।